অন্যরকম: চলছে রক্তদান। নিজস্ব চিত্র
একে একে রক্ত দিলেন ২৯ জন। তার মধ্যে ২১ জনই চোখে দেখতে পান না। রবিবার শেওড়াফুলিতে স্বেচ্ছা রক্তদান শিবিরের উদ্যোক্তা ছিল তাঁদেরই সংগঠন।
এমন কর্মসূচির পরে তাঁরা বলছেন, ‘‘প্রতিবন্ধীরা যে সমাজের জন্য কিছু করতে পারেন, অনেকে ভাবতেই পারেন না। আমরা কিন্তু চেষ্টা চালাচ্ছি।’’ তাঁদের বক্তব্য, রক্তে মুমূর্ষু রোগীর প্রাণ বাঁচে। থ্যালাসেমিয়ার মতো রোগে আক্রান্তদের নিয়মিত রক্ত লাগে। ব্লাডব্যাঙ্কে জোগান স্বাভাবিক রাখতে স্বেচ্ছা রক্তদানের বিকল্প নেই। তাই এই আয়োজন। শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতাল রক্ত সংগ্রহ করেছে। গত বার এই সংগঠনের শিবিরে ৩৫ জন রক্ত দিয়েছিলেন।
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ব্যতিক্রমী ঘটনা। ওঁরা মোটেই সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন নন। বরং ভীষণ ভাবেই সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ।’’ রক্তদান আন্দোলনের কর্মী ডি আশিসের কথায়, ‘‘এত জন দৃষ্টিহীন একটা শিবিরে রক্ত দিচ্ছেন, সচরাচর হয় না। ওঁদের মানসিকতাকে শ্রদ্ধা।’’
বছর দশেক আগে ‘শেওড়াফুলি হ্যান্ডিক্যাপড ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’ নামে ওই সংস্থা গড়েন কয়েকজন প্রতিবন্ধী। সভাপতি নারায়ণ দাস জানান, বর্তমানে জনা আঠেরো মহিলা-সহ সদস্য প্রায় ৬০ জন। তার মধ্যে ৪৮ জনই দৃষ্টিহীন। অন্যদের অনেকে মূক-বধির বা মানসিক প্রতিবন্ধী। নারায়ণবাবু এবং সম্পাদক মেহবুব হোসেনও দৃষ্টিহীন।
শেওড়াফুলির মাইকেলপল্লিতে বাড়ির সামনে চাতালে বসে নারায়ণবাবু বলছিলেন, ‘‘প্রতিবন্ধীরা নাকি সমাজ থেকে শুধু নেন! কিছু দিতে পারেন না। ধারণাটা বদলে দিতে চাই আমরা।’’ সঙ্গে জুড়ে দেন, ‘‘ব্লাডব্যাঙ্কে চিঠি জমা দেওয়া, লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা, সবই তো করলাম।’’ মেহবুব, উত্তম হালদার, আরতি হালদার, প্রদীপ নিয়োগী, পদ্মা রায়, সুচিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়, সঞ্জয় পালেরা রক্ত দিয়ে খুশি। পম্পাদেবী সঙ্গীতশিল্পী। ভাওয়াইয়া গাইতে বেশি ভালবাসেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার রক্ত কারও কাজে লাগবে, এর থেকে ভাল কিছু হয় না কি!’’
নারয়ণবাবুরা জানান, দৈনন্দিন জীবনে প্রতিবন্ধীদের নানা সমস্যা সমাধানের জন্য সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার লক্ষ্যেই এই সংগঠনের পথ চলা শুরু। আয়লার পরে ত্রাণ নিয়ে পাথরপ্রতিমায় পৌঁছে গিয়েছিলেন তাঁরা। দুঃস্থ-প্রতিবন্ধী পড়ুয়াকে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাঁতার, দাবা প্রতিযোগিতা করা হয়েছে। নারায়ণবাবু বলেন, ‘‘নিজেদের চাঁদা এবং কিছু মানুষের অনুদানে কর্মসূচি নেওয়া হয়। সরকারি সাহায্য পেলে আরও কিছু করতে পারতাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy