তাঁরা নিয়মিত অফিসে আসছেন। কাজও করছেন। কিন্তু বেতন পাচ্ছেন না গত চার মাস ধরে।
এমনই অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন হাওড়া পুরসভায় চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত ৪০০ জন অস্থায়ী কর্মচারী। যাঁদের মধ্যে অনেকেই বেসরকারি চাকরি ছেড়ে পুরসভার চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। পুরসভার পক্ষ থেকে অবশ্য স্পষ্টই বলা হচ্ছে, আগের পুর বোর্ডের নেওয়া এত জন কর্মীকে প্রতি মাসে বেতন দেওয়ার মতো আর্থিক সঙ্গতি পুর কোষাগারের নেই। একমাত্র রাজ্য সরকার অর্থ বরাদ্দ করলে তবেই তাঁদের বেতন দেওয়া যাবে। কিন্তু সেই বাবদ অর্থ বরাদ্দ না হওয়ায় পুরসভার ওই কর্মীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। তৃণমূল পরিচালিত হাওড়া পুর কর্মচারী সমিতি বিষয়টি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছে।
গত ১০ ডিসেম্বর বোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার মাস দুই আগে তৃণমূল পুর বোর্ডের পক্ষ থেকে পুরসভার বিভিন্ন দফতরে আট হাজার ও দশ হাজার টাকা মাসিক বেতনে ৪০০ জন অস্থায়ী কর্মীকে নিয়োগ করা হয়। পুরসভার তরফে তাঁদের পুরকর্তাদের স্বাক্ষর করা নিয়োগপত্রও দেওয়া হয়। কিন্তু এরই মধ্যে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, নির্বাচন না করে হাওড়ায় আপাতত প্রশাসক বসানো হবে। সেই মতো ১০ তারিখের পরেই হাওড়ার পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণকে পুর প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরেই ঘোষণা করেন, পুরসভার পক্ষে নতুন করে নিযুক্ত অস্থায়ী কর্মীদের বেতন দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, তাঁদের বেতন দিতে গেলে মাসে ৫০ লক্ষ টাকার মতো খরচ হবে। সেই টাকা পুরসভার নেই। এর পরেই সমস্যা শুরু হয়।
হাওড়া পুরসভার অন্দরেই এ বার প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ করে এত জন অস্থায়ী কর্মীকে নিযুক্ত করার কি আদৌ কোনও প্রয়োজন ছিল? কোষাগারের অবস্থা জানা সত্ত্বেও এমন সিদ্ধান্ত কী ভাবে নেওয়া হল?
সদ্য প্রাক্তন হওয়া মেয়র রথীন চক্রবর্তীর সাফাই, ‘‘২০১৪ সাল থেকে দফায় দফায় কর্মী নেওয়ার জন্যই পুরসভার কাজে গতি এসেছিল। তাই শহরের জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধেই ফের অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল। এটা নির্বাচিত পুর বোর্ডের সিদ্ধান্ত ছিল।’’
এ বিষয়ে পুর প্রশাসককে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘গত অক্টোবরে পুর কর্তৃপক্ষ কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেই রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল, কোনও ভাবেই পুরসভায় আর অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করা যাবে না। তা সত্ত্বেও কেন কর্মী নিয়োগ হল, আমি জানি না।’’
কিন্তু ওই ৪০০ জন কর্মীকে বেতন না দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে কেন? কেনই বা তাঁদের আসতে বারণ করা হচ্ছে না? পুর প্রশাসক বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কাছে চিঠি লিখে জানতে চাওয়া হয়েছে। কিন্তু উত্তর না আসায় আমরা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।’’
মাস দুই আগে হাওড়া পুরসভায় এসে পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছিলেন, ওই অস্থায়ী কর্মীদের নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মন্ত্রী সে কথা বলে যাওয়ার পরে দু’মাস কেটে গিয়েছে। এখনও কোনও সিদ্ধান্ত না হওয়ায় চিন্তায় পড়েছেন ওই চারশো জন কর্মী। জমানো টাকা খরচ করেই প্রতিদিন ট্রেনে, বাসে চেপে পুরসভায় কাজ করতে আসছেন তাঁরা। কিন্তু মাসের শেষে বেতন পাচ্ছেন না।
এই ঘটনায় প্রবল ক্ষুব্ধ তৃণমূলের হাওড়া পুর কর্মচারী সমিতি। ওই সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি গুরুচরণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই কর্মীদের বেতনের দাবিতে আমরা লিখিত ভাবে জানিয়েছি। আমাদের বলা হয়েছে, রাজ্য সরকার বিষয়টি বিবেচনা করছে। আর কিছু দিনের মধ্যে কোনও ব্যবস্থা না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy