Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
রক্ত দিলে মিলবে প্রেশার কুকার, বিতর্কে উদ্যোক্তারা

তৃণমূলের রক্তদান শিবির, চাঁদা ৫০০০!

আগামী রবিবার হরিপাল পূর্ব এবং পশ্চিম অঞ্চল তৃণমূলের যৌথ উদ্যোগে নালিকুল বটতলায় ওই রক্তদান শিবিরের আয়োজন ঘিরে এলাকা এখন সরগরম।

চাঁদা: এমন বিল ঘিরেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র

চাঁদা: এমন বিল ঘিরেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র

দীপঙ্কর দে
হরিপাল শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:১৯
Share: Save:

স্বেচ্ছায় রক্তদানের অনুষ্ঠান। সঙ্গে থাকছে মশারি, কম্বল, বইখাতা বিলিও। তার জন্য বিল-কুপন ছাপিয়ে দেদার চাঁদা তোলার অভিযোগ উঠল শাসকদলের বিরুদ্ধে। সেই বিল-কুপনের একধারে দেখা যাচ্ছে তৃণমূলের প্রতীকও! ‘রক্ত দিলেই প্রেশার কুকার’— এমন ঘোষণাও চলছে।

আগামী রবিবার হরিপাল পূর্ব এবং পশ্চিম অঞ্চল তৃণমূলের যৌথ উদ্যোগে নালিকুল বটতলায় ওই রক্তদান শিবিরের আয়োজন ঘিরে এলাকা এখন সরগরম। শোরগোল পড়েছে দলের অন্দরেও। জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত থেকে শুরু করে দলের অনেক নেতা, সাংসদ, বিধায়কেরা শিবিরে উপস্থিত থাকবেন বলে উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন। অভিযোগ, শিবিরের খরচ তুলতে ১০ এবং ৫০ টাকার কুপন‌ ছাপিয়ে বাড়ি বাড়ি চাঁদা তোলা হচ্ছে। আর ব্যবসায়ীদের থেকে মোটা টাকা আদায় করা হচ্ছে।

স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর ক্ষোভ, ‘‘পাঁচ হাজার টাকার বিল কেটে দিয়ে গিয়েছে। দু’হাজার টাকা দিয়েছি। বাকিটা পরে দেব বলেছি। বুঝতেই পারছেন, শাসকদল! কিন্তু রক্তদানের নামে এ ভাবে টাকা তোলা সমর্থন করি না। আমাদের অসুবিধার কথা নেতারা বোঝেন না।’’

শিবিরের মুখ্য আয়োজক হরিপাল পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ তথা নালিকুল পূর্ব অঞ্চল সভাপতি মিলন দে এবং নালিকুল পশ্চিম পঞ্চায়েতের প্রধান তথা অঞ্চল সভাপতি মামুদ সরকার চাঁদা তোলার বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, শুধু রক্তদানই নয়, গরিবদের মশারি-কম্বল দেওয়া হবে। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার সামগ্রী দেওয়া হবে। সব মিলিয়ে অনেক খরচ। সেই কারণেই চাঁদা তোলা হচ্ছে। কুপন এবং লিফ‌লেট নিয়ে তাঁরা মানুষের কাছে যাচ্ছেন। এতে দলের প্রচারও হচ্ছে। প্রতি বছরই এমন‌ ভাবে অনুষ্ঠানের খরচ তোলা হয়। মামুদ বলেন‌, ‘‘জোর করে তো চাঁদা তোলা হচ্ছে না। মানুষ ভালবেসেই চাঁদা দেন।’’

কিন্তু তৃণমূলেরই একটি অংশ এ ভাবে চাঁদা তোলা মানতে পারছে না। তাদের মতে, শীর্ষ নেতৃত্ব বারে বারেই নির্দেশ দিয়েছেন, দলীয় প্রতীক ব্যবহার করে চাঁদা তুলে কোনও অনুষ্ঠান করা যাবে না। কিন্তু দলের নিচুতলার কর্মীদের কানে তা যে পৌঁছচ্ছে না, এই ঘটনাই তার প্রমাণ। জেলা তৃণমূল সভাপতি তপনবাবু বপলেন, ‘‘বিষয়টা খোঁজ নিচ্ছি। দলীয় প্রতীক ব্যবহার করে জুলুমবাজি কোন ভাবে বরদাস্ত করা হবে না।’’ মামুদের দাবি, ‘‘দলীয় অনুষ্ঠান বলেই প্রতীক ব্যবহার করা হচ্ছে।’’

বিরোধীরা মনে করছে, এ এক ধরনের ‘তোলাবাজি’। জেলা সিপিএম সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘এই ঘটনা একটি এলাকার নয়। সর্বত্রই তৃণমূল এই কাজ করছে। তোলাবাজি ওদের একটা শিল্পে পরিণত হয়েছে।’’

উপহারের বিনিময়ে রক্তদান শিবিরে আয়োজন নিয়ে আপত্তি রয়েছে রক্তদান আন্দোলন নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির। তাদের বক্তব্য, এতে স্বেচ্ছায় রক্তদানের উদ্দেশ্য নষ্ট হয়। অনেকে উপহারের লোভে রোগ লুকিয়ে রক্ত দেন। এতে রক্তগ্রহীতা জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। রক্তদান আন্দোলনে সামিল হুগলির এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘কয়েক মাস আগে শ্রীরামপুরে তৃণমূলেরই এক কাউন্সিলর রক্তদাতাদের গাছের চারা দিয়ে খুব ভাল নজির রেখেছেন। বেশি রক্তদাতা জোগাড়ের ইঁদুর দৌড়ে না থেকে সবাই যদি এই পথ নেন, খুব ভাল হয়।’’

ওই রক্তদান শিবিরে রক্ত নিতে আসার কথা দু’টি বেসরকারি সংস্থার। প্রশ্ন এখানেও। সরকারি ব্লাডব্যাঙ্ক থাকতে কেন বেসরকারি সংস্থার দ্বারস্থ হতে হল উদ্যোক্তাদের? হরিপাল পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ মিলনবাবুর দাবি, ‘‘মাস তিনেক আগে সরকারি ব্লাডব্যাঙ্কে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তারা সময় দিতে পারেনি। তাই বেসরকারি সংস্থার কাছে যাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tmc subscription blood donation camp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE