Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

অস্ট্রিয়ায় পদকজয়ী পশ্চিমবঙ্গের ৬ প্রতিবন্ধী

গায়ে জাতীয় দলের ব্লেজার। গলায় পদক আর রজনীগন্ধার মালা। ওঁরা সকলেই মানসিক প্রতিবন্ধী। পরিভাষায় ‘ইন্টেলেকচুয়ালি চ্যালেঞ্জড’। এই সব ছেলেমেয়ের পরিবার সচ্ছ্বল নয়। এ হেন পরিবারের সন্তানরা ইউরোপে স্পেশ্যাল অলিম্পিক থেকে পদক নিয়ে ঘরে ফিরলেন এ রাজ্যের ৬ জন।

সফল: স্কুলের তরফে শুভেচ্ছা জানানো হচ্ছে হুগলির পাঁচ খেলোয়াড়কে। ছবি: দীপঙ্কর দে

সফল: স্কুলের তরফে শুভেচ্ছা জানানো হচ্ছে হুগলির পাঁচ খেলোয়াড়কে। ছবি: দীপঙ্কর দে

উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৭ ০৩:০৯
Share: Save:

গায়ে জাতীয় দলের ব্লেজার। গলায় পদক আর রজনীগন্ধার মালা। ওঁরা সকলেই মানসিক প্রতিবন্ধী। পরিভাষায় ‘ইন্টেলেকচুয়ালি চ্যালেঞ্জড’। এই সব ছেলেমেয়ের পরিবার সচ্ছ্বল নয়। এ হেন পরিবারের সন্তানরা ইউরোপে স্পেশ্যাল অলিম্পিক থেকে পদক নিয়ে ঘরে ফিরলেন এ রাজ্যের ৬ জন।

গত ১৪-২৫ মার্চ বিশেষ মানসিক চাহিদাসম্পন্নদের অলিম্পিকের আসর (‌স্পেশ্যাল অলিম্পিকস ওয়ার্ল্ড উইন্টার গেমস) বসেছিল অস্ট্রিয়ায়। ভারত থেকে যোগ দিয়েছিলেন ৮৯ জন। ভারত পেয়েছে ৭৩টি পদক। তার মধ্যে সোনা ৩৭টি।

ছেলেদের ফ্লোর বল, ইউনিফায়েড ফ্লোর বল এবং মেয়েদের ফ্লোর হকিতে ভারতীয় দলে খেলেছেন এ রাজ্যের ছ’জন। তাঁদের মধ্যে পাঁচ জনই হুগলির। তাঁরা শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকের কানাইপুরের বাঁশাই ‘প্রচেষ্টা’ নামে একটি প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষার্থী। ছেলেদের ফ্লোর বল এবং ইউনিফায়েড ফুটবলে ভারত সোনা জেতে। মেয়েদের হকিতে ব্রোঞ্জ পায়।

ইউনিফায়েড ফ্লোর বলে সুযোগ পেয়েছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের রবিউল গাজি। ফ্লোর বল দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন ডানকুনির খড়িয়াল মুসলিমপাড়ার রহিম মল্লিক। মেয়েদের হকি দলে ছিলেন রিষড়ার পাঁচলকির বাসিন্দা সুফিয়া খাতুন, মাবিয়া খাতুন, রবিনা খাতুন এবং বাঁশাইয়ের শ্রাবন্তী বাগ। রবিনা দলের অধিনায়ক ছিলেন। অস্ট্রিয়ার ঠান্ডা আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য তাঁদের এক সপ্তাহের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় সিমলায়। পদক জেতায় ভারতীয় দলকে অভিনন্দন জানান কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী বিজয় গোয়েল।

মঙ্গলবার দুপুরে রহিমরা দমদম বিমানবন্দরে নামার পরে বাঁশাইয়ের স্কুলের লোকজন তাঁদের শুভেচ্ছা জানান। রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর লোকেরাও সেখানে ছিলেন। স্কু‌লের সম্পাদক তথা টিচার ইনচার্জ সুবীর ঘোষ, সভাপতি সন্ধ্যা চট্টোপাধ্যায়, সহ-সভাপতি সন্ন্যাসী বিশ্বাস, কোষাধ্যক্ষ চণ্ডীচরণ চক্রবর্তীরা জানান, বিনা বেতনে শিক্ষাদানের পাশাপাশি খেলাধুলোর প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের। সুবীরবাবু বলেন, ‘‘ওদের যা প্রতিভা, তাতে ভবিষ্যতে আরও সফল হবে।’’

রবিনা, মাবিয়া, সুফিয়া, শ্রাবন্তী— সকলেরই বাবা রাজমিস্ত্রীর জোগাড়ের কাজ করেন। রহিমের বাবা ঠিকাদারি করেন।

শ্রাবন্তীর মা পরিচারিকা। মাবিয়ার মা ১০০ দিন কাজের শ্রমিক। রবিনা, মাবিয়া দু’জনেই কাঁচা বাড়িতে থাকে। চার কিশোরীই বাঁশাইয়ের স্কুলটিতে ‘সেকেন্ডারি’ বিভাগে পড়ে। ‘উপার্জনমুখি শিক্ষা’র পাঠ নেয় রহিম। পাশাপাশি, কানাইপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বার তার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। অলিম্পিকে সুযোগ পাওয়ায় পরীক্ষা দিতে পারেনি। তার মা মাবিয়া বেগম বলেন, ‘‘ছেলে পরীক্ষা দিতে পারল না বলে মনটা খারাপ ছিল। সোনার পদক নিয়ে ফেরায় খারাপ লাগা কেটে গিয়েছে।’’

এত বড় মঞ্চে সুযোগ পেয়ে খুশি সুফিয়ারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Special Olympic Austria students with disabilities
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE