Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সমস্ত প্রতিবন্ধকতা জয় করে  প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ খুরশিদ

মগরাহাট-২ ব্লকের কুলদিয়া গ্রামের প্রতিবন্ধী ছাত্র খুরশিদ পড়া শেষ করে চাকরি করতে বদ্ধপরিকর। বাড়ি থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে কুলদিয়া হাইস্কুল। হুইল চেয়ারে চেপে সেখানে যাতায়াত খুরসিদের।

খুরশিদ আলম শেখ

খুরশিদ আলম শেখ

দিলীপ নস্কর
মগরাহাট শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৮ ০২:০৯
Share: Save:

জন্ম থেকেই তার দু’হাত এবং দু’পা অচল। উচ্চ মাধ্যমিকে রাইটার নিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়েছে তাকে। তবু পেয়েছে ৩৩২ নম্বর। প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ খুরশিদ আলম শেখ প্রমাণ করল জেদ মানুষকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে।

মগরাহাট-২ ব্লকের কুলদিয়া গ্রামের প্রতিবন্ধী ছাত্র খুরশিদ পড়া শেষ করে চাকরি করতে বদ্ধপরিকর। বাড়ি থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে কুলদিয়া হাইস্কুল। হুইল চেয়ারে চেপে সেখানে যাতায়াত খুরসিদের। কখনও মা রহিমা বিবি কখনও তার সহপাঠীরা তার চেয়ার ঠেলে নিয়ে আসত স্কুলে। ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগানোর সামর্থ্য দিনমজুর বাবা-মায়ের ছিল না। সে দায় ঘাড়ে নিয়ে়ছিলেন প্রধান শিক্ষক-সহ স্কুলের অন্য শিক্ষকেরা। খুরসিদ যখন পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া তখন থেকেই তার জামা-কাপড়, বইপত্রের দায় সামলেছেন শিক্ষকেরাই। তাঁরা কথা দিয়েছেন, খুরসিদ যত দূর পড়তে চায়, তাঁরা ততদূর তার পাশে থাকবেন।

এক চিলতে ঘরের মধ্যে পড়াশোনাই ছিল খুরশিদের এক মাত্র কাজ। তার মা জানান, ‘‘দু’হাত-পা তো অচলই, পাশাপাশি ও ভাল ভাবে কথাও বলতে পারে না। তা সত্ত্বেও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় খাওয়া দাওয়া ভুলে প্রায় সারা রাত বইয়ে মুখ গুঁজে পড়ে থেকেছে। এই জেদই ওকে লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করছে।’’

খুরসিদ মগরাহাট কলেজে পড়তে আগ্রহী। তার সেই ইচ্ছায় বাদ সাধছে কলেজে যাতায়াতের প্রতিবন্ধকতা। বাড়ি থেকে প্রায় ৪-৫ কিলোমিটার দুরে ওই কলেজে যাওয়া-আসা যে কী ভাবে সম্ভব হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত তার পরিবার। চিন্তার ভাঁজ তার সহপাঠীদের কপালেও। খুরশিদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভোলানাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘ওকে দেখলে মায়া হয়। আমরা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনার জন্য সাধ্যমতো সাহায্যে করেছি। এমনকী, মগরাহাট কলেজে ভর্তির বিষয়েও ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু সমস্যা তো কলেজে যাতায়াত নিয়েই।’’ খুরশিদের সহপাঠীরা যারা এত দিন হুইল চেয়ার ঠেলে ওকে স্কুলে আনত, তারাও জানিয়েছে, তারা সাধ্যমতো চেষ্টা করবে বন্ধুর সঙ্গে থাকার। খুরশিদের বন্ধুদের তরফে রবিন হালদার জানায়, ‘‘আমরা চাই, ওর ইচ্ছে পূরণ হোক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE