ইটের টুকরো ফেলে নপাড়ায় রাস্তা অবরোধ মঙ্গলবার সকালে।
পঞ্চায়েত ভোটের পর দিন পুলিশের কাছে মহসিন খান বলেছিলেন, তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। খুন হয়ে যাবেন, এই আশঙ্কায় ভুগছেন।
সেই আশঙ্কাই সত্যি হল সোমবার রাতে। দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়েছেন বাগনানের তৃণমূল নেতা মহসিন।
কে খুনের হুমকি দিচ্ছে?
তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সে সময়ে মহসিন পুলিশকে জানিয়েছিলেন আসরাফ মিদ্যার নাম। তৃণমূলের দাবি, বিজেপি-ঘনিষ্ঠ এই ব্যক্তিই মহসিনকে খুনের ঘটনায় জড়িত।
ভোটের সময়ে পুলিশের গা়ড়িতে বোমা মারার অভিযোগে মামলা হয়েছিল আসরফের বিরুদ্ধে। সদলবলে এলাকাছাড়া ছিল সে। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা ভুরি ভুরি।
মহসিনের বিরুদ্ধে আসরাফের কিসের রাগ?
তৃণমূল শিবিরের একাংশের দাবি, এলাকায় মহসিনের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা তার চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিল। মহসিন আগে ছিলেন কংগ্রেসে। বছর দু’য়েক আগে বেশ কিছু অনুগামীকে নিয়ে যোগ দেন তৃণমূলে। তারপর থেকে দলে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন বাড়ছিল। অন্য দিকে, কোণঠাসা হচ্ছিল আসরাফ আর তার দলবল। তার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। মহসিনই যার পিছনে আছে, এমনটা মনে করত আসরাফ।
ইতিমধ্যে মহসিনের স্ত্রী নুরউন্নেসা হাটুরিয়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ন’পাড়া বুথে ঘাসফুলের টিকিটে প্রার্থী হন। জিতেও যান। তাঁর বিরুদ্ধে যে নির্দল প্রার্থী দাঁড়িয়েছিল, তিনি হারেন। ওই প্রার্থীকে দাঁড় করানোর পিছনে আসরাফেরই মাথা কাজ করেছে বলেং দাবি তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের। নির্দল প্রার্থীকে জেতাতে পারলে মহসিনের গুরুত্ব কমবে বলে তার ধারণা ছিল। কিন্তু সেই ছক কাজে না লাগায় মহসিনকেই সরিয়ে দেওয়ার ছক কষে আসরাফ— এমনটাই অভিযোগ তৃণমূলের।
পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকে কয়েক দিন এলাকায় ঢোকেনি আসরাফ ও তার দলবল। স্থানীয় তৃণমূল নেতারা দাবি করেন, সোমবার সকালে ফের গ্রামে দেখা যায় আসরাফ ও তার কয়েকজন অনুগামীকে। স্ত্রী এবং মাকে বাড়ি থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয় সে। আসরাফ বাড়ি ছাড়ার পরেও যাঁরা আগে গ্রাম ছাড়েননি।
স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, বড় সড় গোলমালের ছক কষেই মা-স্ত্রীকে আগেভাগে গ্রামের বাইরে নিয়ে যায় ওই দুষ্কৃতী। তাঁরা বিষয়টি পুলিশকেও জানিয়েছিলেন বলে দাবি তৃণমূলের। অভিযোগ, পুলিশ তা সত্ত্বেও তৎপরতা দেখায়নি।
তৃণমূলের বক্তব্য, এই গ্রামে এত দিন আসরাফের মতো সমাজবিরোধীরা রাজত্ব করত। মহসিন সেই পরিবেশ পাল্টে দিয়েছিলেন। তারই মাসুল গুণতে হল প্রাণ দিয়ে।
বিজেপি দাবি, আসরাফ তাদের দলের কেউ নয়। গোটা ঘটনায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই দেখছেন তাঁরা। সে অভিযোগ অস্বীকার করছে তৃণমূল। কিন্তু পুলিশের ভূমিকা নিয়ে যে গুচ্ছ অভিযোগ, তা নিয়ে কী বক্তব্য কর্তাদের? হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘আপাতত অভিযুক্তদের ধরাই প্রাথমিক কাজ। থানার বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ পরে খতিয়ে দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy