প্রতীকী ছবি।
ষোলো পূর্ণ হতে এখনও কয়েক দিন বাকি। এই বয়সেই শ্বশুরবাড়ি গিয়ে সংসার করতে হচ্ছিল তাকে। বাপের বাড়ির বক্তব্য, বাবা অসুস্থ বলেই মেয়েকে দ্রুত ‘পার’ করা হয়েছে। আর পাত্র বলছেন, ‘‘আমার মা অসুস্থ। তাঁকে দেখাশোনার জন্যই বিয়ে করেছি।’’
চন্দননগর পুরসভার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের মাধবপুরের ওই কিশোরীর বিয়ের কারণ শুনে প্রশাসনের আধিকারিকদের গলায় বিস্ময়, এ ভাবে মেয়েটির কৈশোর জলাঞ্জলি দিতে হবে! অতঃপর প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দু’পক্ষই জানায়, সাবালিকা হওয়ার আগে মেয়েটি সংসার করবে না। সে পড়াশোনা করবে।
মেয়েটি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। একাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় পাশ করেছে। এখনও দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়নি। গত ২ মে নালিকুলের বছর আঠাশের এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। দিনকয়েক আগে সূত্র মারফত সেই খবর পৌঁছয় চাইল্ড লাইনে। শুক্রবার চন্দননগর মহকুমা বিপর্যয় মোকাবিলা আধিকারিক মৈত্রেয়ী চক্রবর্তী, জেলার শিশু সুরক্ষা ইউনিট, চাইল্ড লাইন এবং ভদ্রেশ্বর থানার আধিকারিকরা মেয়েটির বাড়িতে যান। সে দিন মেয়েটি বাপের বাড়িতে এসেছিল। প্রশাসনিক আধিরকারিকরা তার অভিভাবকদের জানান, আঠারো বছর পূর্ণ না হলে মেয়ের বিয়ে দেওয়া নিষিদ্ধ। ফলে, মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠানো যাবে না। মেয়েটির অভিভাবকরা অবশ্য তা মানতে চাননি।
তাঁরা জানিয়ে দেন, বাবা এবং পাত্রের মায়ের অসুস্থতার কারণেই মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের লোকেরা তখন জানান, এই বয়সে সংসার করতে পাঠানো হলে আইনি পদক্ষেপ করা হবে।
মেয়েটির সরকারি কর্তাদের জানায়, বাবা-মা বিয়ে ঠিক করায় তাঁদের মুখের উপর সে কিছু বলেনি। শেষ পর্যন্ত রণে ভঙ্গ দেন মেয়েটির বাবা-মা।মুচলেকা দিয়ে জানান, সাবালিকা না-হওয়া পর্যন্ত মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠানো হবে না। তাকে পড়ানো হবে। মেয়েটিও পড়বে বলে জানায়। পরে ছেলের বাড়িতে ফোন করে গোটা বিষয়টি জানিয়ে দেন মৈত্রেয়ীদেবীরা। যুবক জানান, অসুস্থ মায়ের সেবার জন্যই বিয়ে করেছেন। তবে মেয়ের বয়স জানতেন না।
ওই দিন প্রশাসনের দলটি ওই পুরসভারই ৩০ নম্বর ওয়ার্ডেও যান। সেখানে তেরো বছরের একটি মেয়েরও বিয়ে ঠিক হয়েছিল। সরকারি কর্তারা জানতে পারেন, মেয়েটি বা তার বাবা-মা বিয়েতে রাজি নন। দুই আত্মীয়ের চাপেই অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া মেয়েটির বিয়ে ঠিক হয়। তবে দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। প্রশাসনের লোকজন যখন যান, বাড়িতে মেয়েটির বাবা-মা ছিলেন না।
এক আত্মীয়াকে জানিয়ে দেওয়া হয়, আঠারো বছরের আগে কোনও অবস্থাতেই বিয়ে দেওয়া বরদাস্ত করা যাবে না। শেষে মেয়েটির দিদিমা মুচলেকা দিয়ে সেই
প্রতিশ্রুতি দেন।
চাইল্ড লাইনের আধিকারিক সুস্মিতা কোলে বলেন, ‘‘দু’টি মেয়ের দিকেই নজর রাখা হবে। এর পরেও সংসার করতে পাঠানো হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy