Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ধর্ষণ-খুনে দোষী সাব্যস্ত বৈদ্যবাটির যুবক

২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি রাতে বৈদ্যবাটির ব্যাঙ্ক কলোনির একটি পুকুর থেকে এক তরুণীর দেহ উদ্ধার করে শেওড়াফুলি ফাঁড়ির পুলিশ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৩৭
Share: Save:

সংসার পাতার স্বপ্ন নিয়ে ঘর ছেড়েছিলেন যুবতী। আর সেই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করে খুন করে পালিয়েছিল ‘প্রেমিক’। ছ’বছর আগের সেই ঘটনায় ধর্ষণ, খুন এবং প্রমাণ লোপের দায়ে বৈদ্যবাটির বাসিন্দা বেচুরাম বাগকে বুধবার দোষী সাব্যস্ত করলেন শ্রীরামপুর আদালতের প্রথম ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক প্রশান্ত মুখোপাধ্যায়। আজ, বৃহস্পতিবার সাজা ঘোষণা করবেন তিনি।

২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি রাতে বৈদ্যবাটির ব্যাঙ্ক কলোনির একটি পুকুর থেকে এক তরুণীর দেহ উদ্ধার করে শেওড়াফুলি ফাঁড়ির পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, মৃতার গলায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরনে ছিল কামিজ। পুকুরের কাছে গোয়ালাপাড়ার বাঁশবাগান থেকে তরুণীর নিম্নাঙ্গের পোশাক উদ্ধার হয়। তখন ওই তরুণীর পরিচয় জানা যায়নি। শ্রীরামপুর থানায় খুনের মামলা রুজু হয়।

পরে জানা যায়, নিহত তরুণীর চণ্ডীতলার বাসিন্দা। সংবাদপত্রে খবর পড়ে শ্রীরামপুরে এসে আত্মীয়েরা দেহ শনাক্ত করেন। তদন্তকারীরা জানতে পারেন, বৈদ্যবাটির চক মুসলমানপাড়ার বাসিন্দা, মার্বেল মিস্ত্রি বেচুরামের সঙ্গে মেয়েটির সম্পর্ক ছিল। ওই যুবকের মোবাইলের কল লিস্ট ঘেঁটে পুলিশ জানায়, মেয়েটির সঙ্গে তার নিয়মিত কথা হতো। এর পরেই বেচুরামকে গ্রেফতার করা হয়। জেরায় পুলিশের কাছে খুনের কথা কবুল করে বেচু।

পুলিশকে বেচু জানায়, মেয়েটির বাড়িতে মার্বেলের কাজ করার সময় দু’জনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বেচুরাম বিবাহিত। এক মেয়ে রয়েছে। কিন্তু ‘প্রেমিকা’র কাছে বিষয়টি সে গোপন করেছিল। কিন্তু বেচুরামের স্ত্রী স্বামীর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক জেনে ফেলে। এই নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে শুরু হয় অশান্তি। এ দিকে ‘প্রেমিকা’ বিয়ের জন্য তাকে চাপ দিচ্ছিলেন। সেই কারণেই ‘পথের কাঁটা’ দূর করতে সে প্রেমিকাকে খুনের পরিকল্পনা করে।

ঘটনার দিন বিকেলে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেচুরাম মেয়েটিকে ডাকে। যাবতীয় শংসাপত্র নিয়ে দিয়াড়া স্টেশনে আসেন স্নাতক ওই যুবতী। ভাড়া বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে সেখান থেকে সাইকেলে চাপিয়ে যুবতীকে গোয়ালাপাড়ার বাঁশবাগানে নিয়ে যায় বেচুরাম। সন্ধ্যায় ওই তরুণীকে পুকুরে ডুবিয়ে খুন করে সে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে জল থেকে তুলে কাটারি দিয়ে তরুণীর গলার নলিও কেটে দেয়। এরপর দেহ টেনে নিয়ে পাশের একটি পুকুরে ফেলে দেয়। মেয়েটির শংসাপত্র-ভর্তি ব্যাগ রেল লাইনের ধারে কচুবনে ফেলে দেয়। পরে বেচুরামকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে পুলিশ ওই ব্যাগ এবং খুনে ব্যবহৃত কাটারি উদ্ধার করে। আদালতে খুন ও প্রমাণ লোপের অভিযোগে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী অফিসার দেবাঞ্জন ভট্টাচার্য। বেচুরাম জামিন পায়নি।

মামলার সরকারি কৌঁসুলি মোহনলাল নাড়ু জানান, ময়নাতদন্তে ধর্ষণেরও প্রমাণ মেলে। অতিরিক্ত চার্জশিটে সে কথাও জানান তদন্তকারী অফিসার। শুনানিতে ২৮ জন সাক্ষ্য দেন। মোহনলালবাবু বলেন, ‘‘পরিকল্পনা করে ওই যুবতীকে ধর্ষণ করে খুন করে বেচুরাম। শেওড়াফুলির নিস্তারিণঁী ঘাটের কাছ থেকে সে কাটারি কিনেছিল। আদালতে দোষ প্রমাণিত হয়েছে।’’ তিনি জানান, প্রত্যক্ষদর্শী না থাকলেও অন্যান্য তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে দোষ প্রমাণিত হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE