Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
অবৈধ ভাবে ঘাট চালিয়েছি, কবুল দুই নেতার

‘দখলমুক্ত’ মুচিঘাটা ঘাট, ৯ বছরের মাথায় ইজারা

স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, কাটমানি-তোলাবাজি বন্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া বার্তা দেওয়ার পর থেকেই রাজ্যের নানা প্রান্তে দলীয় নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ-বিক্ষোভের পারদ চড়ছে।

মুচিঘাটা ঘাট। ফাইল ছবি

মুচিঘাটা ঘাট। ফাইল ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
খানাকুল শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৯ ০২:১৯
Share: Save:

কাটমানি-তোলাবাজি বন্ধে নেত্রীর কড়া বার্তায় টনক নড়ল দুই তৃণমূল নেতার। ৯ বছরের মাথায়, বৃহস্পতিবার খানাকুল-২ ব্লকের মুচিঘাটা ফেরিঘাট ও সেতু ‘দখলমুক্ত’ করে ইজারা দিতে পারল পঞ্চায়েত সমিতি। কোনও বাধা এল না।

ফলে, রাজস্ব ‘লুট’ বন্ধ হয়ে এ বার সমিতির তহবিল মজবুত হবে বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্তারা। বিডিও দেবল উপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই ফেরিঘাটটি দীর্ঘদিন বেদখল হয়ে ছিল। কোনও রাজস্ব পাওয়া যাচ্ছিল না। নতুন করে ডাক করা নিয়েও অনেক বাধা ছিল। এ বার সুষ্ঠু ভাবে ডাক করে তা নিষ্পত্তি হয়েছে।”

কিন্তু কারা পঞ্চায়েত সমিতির মালিকানাধীন ওই ফেরিঘাট ‘দখল’ করে রেখেছিলেন?

গ্রামবাসীরা তো বটেই, স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ এবং প্রশাসনেরও কয়েকজনের অভিযোগ, হুড়হুড়া খালের ওই ফেরিঘাটের উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে পারাপার পরিচালনা হতো পলাশপাই-২ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের আশিক আলি মল্লিকের নেতৃত্বে। আর ঘাটের দক্ষিণ-পূর্ব দিকের পারপার পরিচালনা হতো পলাশপাই-১ অঞ্চলের নেতা অরিন্দম শী-র নেতৃত্বে। ২০১১ সালে রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে দুই নেতা নিলামে বাধা দিয়ে প্রতি মাসে পারাপারের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করছিলেন বলে অভিযোগ।

টাকা আত্মসাৎ বা নিলামে বাধার অভিযোগ মানেননি দুই নেতা। তবে তাঁরা স্বীকার করেছেন, এতদিন অবৈধ ভাবে ঘাট চালিয়েছেন। অরিন্দমবাবুর দাবি, “বেওয়ারিশ হয়ে ছিল সেতুটি। সে জন্য আমরা অঞ্চলের নেতারা ফেরিঘাট চালিয়েছি। এটা যে অবৈধ ভাবে চালিয়েছি, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে, উপার্জিত অর্থ আত্মসাৎ করিনি। এলাকা উন্নয়ন, দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা এবং দুঃস্থ মেয়েদের বিয়ের কাজে খরচ করেছি। আমরা চাইছিলাম বৈধ ভাবে ডাক হোক। এখন হওয়ায় আমরা খুশি।” একই দাবি, আশিক আলিরও।

কিন্তু স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, কাটমানি-তোলাবাজি বন্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া বার্তা দেওয়ার পর থেকেই রাজ্যের নানা প্রান্তে দলীয় নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ-বিক্ষোভের পারদ চড়ছে। তাতে এ ক্ষেত্রে ঘাটের ‘দখল’ ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না দুই নেতার। কারও কারও ধারণা, বিজেপির উত্থানে ভয় পেয়ে পিছু হটলেন দুই নেতা। কিছু গ্রামবাসীর দাবি, আদৌ উন্নয়নে কোনও টাকা খরচ করেননি ওই নেতারা। এ নিয়ে হিসেবও চেয়েছেন ওই গ্রামবাসীরা।

ওই ঘাটটির শেষবার নিলাম হয়েছিল ২০০৪ সালে। ছ’বছরের জন্য ইজারা নিয়েছিল ‘বলপাই দৌলতচক সাধারণ পাঠাগার’। তারাই খালের দু’প্রান্তের সংযোগ ঘটাতে কাঠের সেতু তৈরি করে দেয়। হয়। কিন্তু তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আর নিলাম হয়নি। এ নিয়ে কয়েকবার সভা ডাকা হলেও তাতে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ডাকের বিজ্ঞপ্তি জারি হলেও তা স্থগিত হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার অবশ্য নিলাম প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নেই মিটেছে। এ দিন পঞ্চায়েত সমিতির আরও তিন ঘাটের নিলাম ছিল। তার মধ্যে বলপাই-নিমতলা ঘাটটির ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ হয়। কিন্তু পানশিউলি ঘাট এবং দৌলতচক ঘাটের ডাক বাতিল হয়।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bribe TMC Mamata Banerjee Khanakul
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE