Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মন্ত্রীকে পেয়েও ত্রাণের কথা বলার সুযোগ না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ দুর্গতেরা

সামনে মন্ত্রী। এসেছেন এলাকার বিধায়কও। বানভাসি গ্রামবাসীরা ঠিক করেছিলেন, মন্ত্রীর কাছে ত্রাণ না পাওয়ার কথা বলবেন। অপেক্ষাও করেন দীর্ঘক্ষণ। কিন্তু সে সুযোগ মিলল না। পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়াররা এক রকম কর্ডন করেই ত্রাণ শিবির ফেরত মন্ত্রীকে গাড়িতে তুলে দিলেন। আগেই বিধায়কের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন দুর্গতেরা।

স্পিডবোটে চেপে বন্যা দেখছেন মন্ত্রী জাভেদ খান। নীচে, মন্ত্রী এলেও  ত্রাণের কথা বলতে না পেয়ে বিক্ষোভ বানভাসিদের। ছবি: সুব্রত জানা।

স্পিডবোটে চেপে বন্যা দেখছেন মন্ত্রী জাভেদ খান। নীচে, মন্ত্রী এলেও ত্রাণের কথা বলতে না পেয়ে বিক্ষোভ বানভাসিদের। ছবি: সুব্রত জানা।

নুরুল আবসার
উদয়নারায়ণপুর শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৫ ০২:১২
Share: Save:

সামনে মন্ত্রী। এসেছেন এলাকার বিধায়কও।
বানভাসি গ্রামবাসীরা ঠিক করেছিলেন, মন্ত্রীর কাছে ত্রাণ না পাওয়ার কথা বলবেন। অপেক্ষাও করেন দীর্ঘক্ষণ। কিন্তু সে সুযোগ মিলল না। পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়াররা এক রকম কর্ডন করেই ত্রাণ শিবির ফেরত মন্ত্রীকে গাড়িতে তুলে দিলেন। আগেই বিধায়কের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন দুর্গতেরা। গাড়িতে উঠে মন্ত্রীকে চলে যেতে তাঁদের হতাশা, এ কেমন হল! মন্ত্রীকে তো কিছুই বলতে দেওয়া হল না!
সোমবার হাওড়ার আমতার বসন্তপুরে বন্যা পরিদর্শন করতে এসেছিলেন রাজ্যের দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান। বেলা আড়াইটে নাগাদ তিনি বসন্তপুরে পৌঁছন। মুন্সিরহাট-রাজাপুর সড়ক থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার গ্রামের ভিতরে ভেটকেপাড়া প্রাথমিক স্কুলে একটি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। কিন্তু সেখানে সরাসরি পৌঁছনোর উপায় নেই। পুরো এলাকা অন্তত এক কোমর জলের নীচে। বাড়ি, ঘরদোর পর্যন্ত ডুবে গিয়েছে। তাই মন্ত্রীর জন্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের একটি ছোট স্পিডবোট রাখা হয়েছিল। মন্ত্রী সেই স্পিডবোটে উঠে রওনা দেওয়ামাত্র পঞ্চায়েতের হাবল ও মল্লিকপাড়ার বাসিন্দাদের একাংশ সেখানে হাজির হয়ে তুমুল বিক্ষোভ শুরু করেন।
বিক্ষোভকারীরা প্রথমে এলাকার বিধায়ক (এলাকাটি উদয়নারায়ণপুর বিধানসভা কেন্দ্রে পড়ে) সমীর পাঁজার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। তাঁরা বলতে থাকেন, সারা বছর বিধায়কের টিকি দেখা যায় না। বন্যার সময়ে তিনি মন্ত্রীকে নিয়ে কী করতে এসেছেন?
বস্তুত, এ দিন দমকলমন্ত্রীর সঙ্গে স্পিডবোটে ছিলেন সমীরবাবু, উলুবেড়িয়া উত্তর ও দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক নির্মল মাজি ও পুলক রায়, সাংসদ সুলতান আহমেদ, জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাস, সহ-সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য এবং হাওড়ার (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন। বিধায়কের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানোর ফাঁকেই দুর্গতদের অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার থেকে এলাকা জলমগ্ন। কেউ কেউ উঁচু দোতলা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে আবার মাটির বাড়ি ছেড়ে খোলা আকাশের নীচে উঁচু জায়গায় রয়েছেন। একটি ত্রিপলও তাঁদের দেওয়া হয়নি। পাননি কোনও ত্রাণের খাবারও। অবস্থাপন্ন বিভিন্ন পরিবার থেকে চেয়েচিন্তে তাঁরা খাবার জোগাড় করছেন।

এই বিক্ষোভকে ঘিরে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাঁদের হাতাহাতি হওয়ারও উপক্রম হয়। তাতে জড়িয়ে পড়েন ওই পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের হাজিবা বিবিও। শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা বিক্ষোভকারীদের বোঝান, মন্ত্রী ফিরে এলে সরাসরি তাঁর কাছে অভিযোগ জানাতে। তাঁরা মন্ত্রী আসার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু মন্ত্রী ফিরতেই তাঁকে কর্ডন করে গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। তাঁর কনভয় বেরিয়ে যায়।

হতাশ হয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। তাঁদের মধ্যে মেহরাজ মল্লিক বলেন, ‘‘মন্ত্রীকে তো কিছু বলার সুযোগই পেলাম না। এ কী রকম হল?’’ মন্ত্রী অবশ্য পরে বলেন, ‘‘দু’টি ত্রাণ শিবিরে ঘুরেছি। শিশুখাদ্য পৌঁছয়নি। আমি প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি তা যেন দ্রুত পৌঁছে দেওয়া হয়। তেমন কোনও ক্ষোভ-বিক্ষোভ হয়নি। যদি কারও কোনও বিশেষ অভিযোগ থাকে, তিনি যেন প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেন।’’ আর তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ নিয়ে বিধায়কের দাবি, ‘‘ওটা কংগ্রেসিদের চক্রান্ত। তারা গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করেছে। যখন যেমন ত্রাণ মিলছে, দেওয়া হচ্ছে।’’ কংগ্রেস অবশ্য ওই বিক্ষোভের সঙ্গে তাদের দলের কেউ জড়িত নয় বলে দাবি করেছে।

এ দিন ভেটকেপাড়ায় যাওয়ার আগে মন্ত্রী প্রথমে মিনিট দুয়েকের জন্য আসেন বসন্তপুর আহমেদিয়া হাই-মাদ্রাসা ত্রাণ শিবিরে। এখানে হাবল এবং দিয়াড়াপুর গ্রামের শ’চারেক বানভাসি আশ্রয় নিয়েছেন। সকলেই তাঁকে জানান, সব ঠিকঠাক রয়েছে। শুধু বসন্তপুর পঞ্চায়েতের প্রধান লক্ষ্মণ তপোল ত্রাণ শিবিরের খাবারের চাল-ডালের দাম কী ভাবে মেটানো হবে তা নিয়ে মন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন। কিন্তু মন্ত্রী উত্তর দেওয়ার আগেই দলের এক নেতা তাঁকে নিয়ে ভেটকেপাড়ার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন। ভেটকেপাড়া পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী আসেন হরিশপুর পঞ্চায়েত কার্যালয়ে। সেখানে ত্রাণ নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করেন। ওই পঞ্চায়েত অফিসের পাশেই পেঁড়ো গ্রামে স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলেও ত্রাণ শিবির হয়েছে। কিন্তু সেই ত্রাণ শিবিরে না গিয়ে গরু-ছাগল বাঁচাতে যে সব গ্রামবাসী এখনও গ্রামেই পড়ে রয়েছেন, তাঁরা মন্ত্রীর এলাকা পরিদর্শনের দাবি নিয়ে পঞ্চায়েতে যান। তাঁরা রান্না করা খাবার, চিঁড়ে বা ত্রিপল পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ তোলেন। মন্ত্রী অবশ্য সেখানে যাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Agitation flood victim Udaynarayanpur nurul absar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE