ভোলবদল: হোটেলে যেখানে বসে ক্রেতারা খাচ্ছেন সেই জায়গা পরিষ্কার।
ফারাকটা আসমান-জমিন।
ঝকঝকে রেস্তোরাঁগুলিতে শুধু দু’দণ্ড বসলেই মন খুশ! খাবার এলে তো কথাই নেই! ‘চাইনিজ’ থেকে ‘কন্টিনেন্টাল’ বা ‘মোগলাই’— সব মেলে এখানে। স্মার্ট ওয়েটার, হাসিমুখ ম্যানেজার।
কিন্তু খাবারের গুণমান? রেস্তোরাঁ-মালিকেরা দাবি করেন, ‘দারুণ’। কিন্তু প্রশাসন? উত্তর নেই। কারণ, সেই খাবারের গুণমান বিচারের লোকই তো নেই প্রশাসনের। বেশির ভাগ রেস্তোরাঁর রান্নাঘরে উঁকি দিলেই ধাক্কা লাগে। পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে খোলা নর্দমা। তাতে জমেছে রান্নাঘরের বর্জ্য। থিক থিক করছে মাছি। তা বসছে খাবারেও। কোথাও আবার নোংরা জলে ধোয়া হচ্ছে থালাবাসন। তাতেই খেতে দেওয়া হচ্ছে খরিদ্দারদের।
এ ভাবেই উলুবেড়িয়ায় মুম্বই রোড এবং রাজ্য সড়কগুলির ধারে গড়ে ওঠা অসংখ্য রেস্তোরাঁ এবং হোটেল দিনের পর দিন চলছে। জেলায় ছোটবড় শিল্প কারখানা বাড়ছে। কাজের সূত্রে বহু মানুষ নিয়মিত যাতায়াত করেন এইসব কারখানায়। তাঁদের খাওয়ার ঠিকানা ওই সব হোটেল-রেস্তোরাঁ। নিয়মানুযায়ী হোটেল বা রেস্তোরাঁ করতে হলে স্বাস্থ্য দফতর থেকে ‘ফুড লাইসেন্স’ নিতে হয়। তার জন্য একটা মোটা টাকা নেয় স্বাস্থ্য দফতর। প্রতি বছর সেই লাইসেন্স নবীকরণও করতে হয়। সেই কাজ দায়সারা ভাবে হয় বলে অভিযোগ। আর খাদ্য পরীক্ষার ব্যবস্থাই যে নেই, তা স্বাস্থ্য দফতরই মেনে নিয়েছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস জানিয়েছেন, শূন্যপদ পূরণ না হলে অবস্থার পরিবর্তন হবে না।
শূন্যপদ অর্থাৎ জেলার ১৪টি ব্লকে এক জন করে ‘স্যানিটারি ইনস্পেক্টর’ এবং জেলায় স্থায়ী খাদ্য নিরাপত্তা আধিকারিক। অথচ, এক সময়ে প্রতি ব্লকে একজন করে ‘স্যানিটারি ইনস্পেক্টর’ থাকতেন। স্বাস্থ্য দফতরের এই আধিকারিকেরা নিয়মিত হোটেল-রেস্তোরাঁগুলিতে গিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করতেন খাবার-দাবারের মান। কিন্তু এখন সেই পদে লোক না-থাকায় পরিদর্শনেরও বালাই নেই। এমনকী পরীক্ষা হচ্ছে না জেলা জুড়ে যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা ‘বটলিং প্ল্যান্ট’-এর জলও। ওই সব কারখানারও লাইসেন্স রয়েছে কিনা, তা-ও কেউ দেখার নেই। বর্তমানে হুগলি জেলার দায়িত্বে থাকা খাদ্য নিরাপত্তা আধিকারিকই সপ্তাহে দু’দিন গিয়ে হাওড়ায় কাজ করেন। কিন্তু তিনি মূলত মুখ্যমন্ত্রী বা ভিআইপি এলে তাঁদের জন্য আসা রেস্তোরাঁর খাবারই পরীক্ষা করেন বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। ফলে, সেই কাজ সামলে তিনি অন্য কোনও রেস্তোরাঁ-হোটেলের জন্য সময় বরাদ্দ করতে পারেন না। ওই আধিকারিক আবার মে মাসে অবসর নেবেন। ফলে, তার মধ্যে কাউকে নিয়োগ করা না হলে জেলায় খাদ্য নিরাপত্তা দেখার জন্য কোনও আধিকারিকই থাকবেন না বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন।
সেই হোটেলেরই এমন নোংরা পরিবেশে চলে রান্নার কাজ।
অথচ, হোটেল-রেস্তোরাঁর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এখন পরিদর্শনের প্রয়োজনীয়তা বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একটা বড় অংশ মনে করেন। রেস্তোরাঁ-মালিকদেরও কেউ কেউ চান, সরকারের তরফে নজরদারি চালু থাকুক। বাগনানের এক রেস্তোরাঁ-মালিক বলেন, ‘‘আমরা নিজেরাই সাবধান হয়ে রান্নাঘর সামলাই। যাতে কোনও খরিদ্দারের কোনও ক্ষতি না হয়। পান থেকে চুন খসলে তো সরকারই আমাদের ধরবে।’’
এক সময়ে হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকেরা লাইসেন্স নবীকরণ করাতে পারতেন উলুবেড়িয়া মহকুমা স্বাস্থ্য দফতর থেকে। কয়েক বছর তা আর হচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের যেতে হয় হাওড়ায় মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরে। তাঁদের একটা দিন পুরো নষ্ট হয় বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। এই অবস্থারও বদল চান তাঁরা।
ছবি: সুব্রত জানা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy