Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

লরি-মালিককে মার, অভিযুক্ত পুলিশ

প্রতিবারই লিখিত অভিযোগ না হওয়ার অজুহাতে তদন্ত এড়িয়ে যাওয়া হয়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গোঘাট শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৮ ০২:০০
Share: Save:

পুলিশের বিরুদ্ধে রাস্তায় তোলাবাজির অভিযোগ এর আগেও উঠেছে। এমনকি বহু দুর্ঘটনার পর অভিযোগ ওঠে, পুলিশি তোলাবাজি থেকে পালাতে গতি বাড়িয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন চালক। তা নিয়ে ক্ষোভ বিক্ষোভও হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই লিখিত অভিযোগ না হওয়ার অজুহাতে তদন্ত এড়িয়ে যাওয়া হয়।

মঙ্গলবার রাতে অবশ্য লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে আরামবাগের এসডিপিও-র কাছে। এক লরির মালিককে মারধর করার অভিযোগ দায়ের হয়েছে গোঘাট থানার সাব-ইন্সপেক্টর নিশাত আহমেদের বিরুদ্ধে।

অভিযোগকারিনী লরি মালিকের স্ত্রী আলপনা চক্রবর্তী। তাঁর দাবি, ওই সন্ধ্যায় আরামবাগ-কোতলপুর রাস্তার গোঘাটের বেলি নিমতলা এলাকায় তাঁদের একটি বালি বোঝাই লরি আটকানো হয়। লরিটি বাঁকুড়া থেকে কলকাতার দিকে যাচ্ছিল। এসআই নিশাত আহমেদ চালকের কাছে কাগজপত্র দেখতে চাইলে চালক ফোন করেন মালিক সৌরেন চক্রবর্তীকে। তিনি কাগজপত্র নিয়ে এলাকায় পৌঁছতেই বচসার সময় সৌরেনকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। সৌরেন আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ওই রাতেই এসডিপিও-র কাছেই অভিযোগ করেন আলপনা। তার ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সকালে এসডিপিও কৃশানু রায় গাড়ি মালিক এবং তাঁদের সংগঠনের কর্তাদের ডেকে ঘটনার বিস্তারিত জানতে চান। এসডিপিও বলেন, “তদন্ত শুরু করেছি। অভিযোগকারী লরি মালিক এবং তাঁদের সংগঠনের লোকদের সঙ্গে কথা বলেছি। অভিযুক্ত এসআই-এর সঙ্গেও কথা বলা হবে।’’ তাঁর আশ্বাস, বিনা দোষে মারধর বা তোলা আদায়ের অভিযোগ প্রমাণ হলে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

কী ঘটেছিল সে রাতে?

সৌরেনের দাবি, “আমি আরামবাগের বাসিন্দা। ফলে চালকের ফোন পেয়েই মোটর বাইকে ওই এলাকায় পৌঁছে যাই। লরিতে অতিরিক্ত পণ্য ছিল না। কাগজপত্রও সব দেখিয়েছিলাম। তারপরও লরি ছাড়ার জন্য পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন এসআই।’’ সৌরেনের অভিযোগ, টাকা দিতে না চাওয়ায় তাঁকে চড় মারেন নিশাত আহমেদ। প্রতিবাদ করলে রাস্তায় ফেলে তাঁকে মারধর করা হয়। পরে চালকের লাইসেন্স কেড়ে নেন এবং অতিরিক্ত গতি সংক্রান্ত মামলাও দায়ের করেন লরির বিরুদ্ধে।

চড় মারার কথা স্বীকার করেছেন নিশাত আহমেদও। তবে তাঁর দাবি, “টাকা আমি চাইনি। লরির মালিক যখন মোটর বাইকে এলেন তখন তাঁর হেলমেট ছিল না। কাগজপত্র দেখাতেও গড়িমসি করছিলেন। আমি কাগজ দেখতে চেয়ে লরি রাস্তার ধারে দাঁড় করাতে বলি। তখনই লরির চালক পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। বেপরোয়া গতির জন্য ৩০০ টাকার মামলা করেছি। লরির মালিক রাস্তায় লরি দাঁড় করিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিলে চড় মারি।’’

লরি মালিক সংগঠনের আরামবাগ কর্মকর্তা ও হুগলি জেলা সংগঠনের-সহ সভাপতি তপন পাল বলেন, “এসডিপিও তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন। আমাদের সমস্ত অসুবিধার কথাও শুনেছেন।”

রাজ্য সড়কে পুলিশের তোলা বাজির জুলুম এবং তার জেরে দুর্ঘটনার আভিযোগ মহকুমায় নতুন নয়। দিন কুড়ি আগেই সরাইঘাটায় পুলিশের তোলাবাজি থেকে পালাতে গিয়ে বালি বোঝাই একটি লরি ধাক্কা মারে একটি বাসে। বাস চালকের মৃত্যু হয়। জখম হন ২০ জন যাত্রী। কয়েক মাস আগে গোঘাট এবং বাঁকুড়ার কোতলপুর বর্ডার চেকপোস্টের কাছে পুলিশের তোলা আদায় এড়াতে গিয়েই লরিটি বেপরোয়াগতিতে পালাবার সময় এক দিনমজুর যুবককে পিষ্ট করে এবং ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। দু’টি ক্ষেত্রেই রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান এলাকার বাসিন্দারা। এ রকম ঘটনা অতীতেও ঘটেছে আরামবাগের বাইশ মাইল, হরিণখোলা, পুরশুড়ার সোদপুর, মসিনান-সহ বহু জায়গায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Truck Driver Goghat Police Station Extortion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE