Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

১২টি শিশুর ত্রাতা অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা

শুধু বিমলাই নন, মঙ্গলবার সকালে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের ডাক্তারের দোরে দোরে ছুটছেন আরও ১১টি শিশুর পরিবার।

রক্ষাকর্তা: রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচালেন যাঁরা। নিজস্ব চিত্র

রক্ষাকর্তা: রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচালেন যাঁরা। নিজস্ব চিত্র

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৮ ০৬:৪৪
Share: Save:

কোলে বছর দেড়েকের শিশুকন্যা। এ দিক-ও দিক ছুটে বেড়াচ্ছিলেন আারামবাগের বিমলা রায়—‘‘রক্ত নেই হাসপাতালে। কী করব এ বার! মেয়েকে বাঁচাব কী করে!’’

শুধু বিমলাই নন, মঙ্গলবার সকালে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের ডাক্তারের দোরে দোরে ছুটছেন আরও ১১টি শিশুর পরিবার। সবাই থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। রক্ত না পেলে কী করে এদের সুস্থ রাখা সম্ভব হবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকেরাও।

এরমধ্যেই খবর ছড়িয়ে গিয়েছে হাসপাতাল চত্বরে। সেখানেই বসেছিলেন কিছু যুবক। বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালান তাঁরা। শেখ রুবেল, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাঁকডাকে তৈরি হয়ে গেলেন অন্য অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরাও। শিশুদের বাঁচাতে রক্ত দিতে এগিয়ে এলেন সবাই।

তাঁদের রক্ত পেয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছে দেড় বছরের মনসা রায়, ঘোষপুরের ৯ বছরের সুরাইয়া খাতুনরা। চোখে জল নিয়ে মনসার মা বিমলা বলেন, “আজ রক্ত না পেলে মেয়েটা একেবারে ঝিমিয়ে পড়ত। এ ভাবে কেউ এগিয়ে আসবেন ভাবতেও পরিনি। ওই ভাইদের ঋণ ভোলার নয়।’’

কৃতজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন আরামবাগ হাসপাতাল সুপার শিশির নস্করও। তিনি বলেন, “রক্ত দিতে না পারলে শিশুগুলির অনেকেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়তে পারত। অ্যাম্বুল্যান্স চালকরা যে ভাবে নিজেরাই এগিয়ে এলেন, তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল। আমরা ওঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।’’

আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের উপর নির্ভর করেন খানাকুল, গোঘাট, পুরশুড়া ও আরামবাগের মানুষ। হাসপাতাল তো বটেই এলাকার প্রায় ৫০টি নার্সিংহোমকেও রক্তের জন্য নির্ভর করতে হয় মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের উপর। এরই মধ্যে শুধু আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালেই প্রতিদিন গড়ে ১০ জন থ্যালাসেমিয়া রোগীকে রক্তের জন্য ভর্তি করানো হয়। এ দিন সকাল থেকেই ওই সব রোগীর পরিবারকে জানিয়ে দেওয়া হয়, রক্তের আকাল। নেই ‘এ পজেটিভ’, ‘এবি পজেটিভ’ এবং ‘ও পজেটিভ’ রক্ত। বাকি গ্রুপের রক্তও ছিল হাতে গোনা।

কেন এই অবস্থা হল ব্লাড ব্যাঙ্কের?

হাসপাতাল সূত্রে খবর, সপ্তাহ দুই ধরেই মহকুমা হাসপাতালে রক্তের ঘাটতি শুরু হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকে ক্লাব এবং সংগঠনের রক্তদান শিবিরগুলির প্রায় সব বাতিল হয়ে গিয়েছে। এর ফলে ব্লাড ব্যাঙ্ক রক্তশূন্য হয়ে পড়েছে। হাসপাতালের সুপার জানিয়েছেন, রক্ত সঙ্কটের কথা জানিয়ে সাধারণ মানুষ, থানা এবং পুরসভায় রক্তদানের আবেদন রাখা হয়েছে।

কিন্তু এর মধ্যেই ১২টি শিশুর জন্য রক্ত দিয়ে সবার প্রশংসা কুড়িয়েছেন অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা। নিজেদের গাড়িতে ফিরে গিয়ে বাপ্পা মালিক, সুমন পণ্ডিত, সুনীল মাজি, সুরজিৎ দাসেরা হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘কয়েকটি শিশুর প্রাণ তো বাঁচাতে পারলাম। এর চেয়ে বড় পুরস্কার আর কী আছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE