Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অকেজো অ্যাম্বুল্যান্স, ভোগান্তি আরামবাগে

খাতায় কলমে ৬টির উল্লেখ আছে। বাস্তবে তিনটি বিকল, একটি উধাও। বাকি দু’টি অন্য কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার হাল এমনই। পরিজনদের ক্ষোভ, দূরদূরান্ত থেকে রোগীদের নিয়ে যেতে-আসতে প্রায় দ্বিগুণ টাকা খরচ করে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করতে হচ্ছে।

পড়ে রয়েছে আরামবাগ হাসপাতালের অকেজো অ্যাম্বুল্যান্স। ছবিটি তুলেছেন মোহন দাস।

পড়ে রয়েছে আরামবাগ হাসপাতালের অকেজো অ্যাম্বুল্যান্স। ছবিটি তুলেছেন মোহন দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ০২:২৩
Share: Save:

খাতায় কলমে ৬টির উল্লেখ আছে। বাস্তবে তিনটি বিকল, একটি উধাও। বাকি দু’টি অন্য কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার হাল এমনই। পরিজনদের ক্ষোভ, দূরদূরান্ত থেকে রোগীদের নিয়ে যেতে-আসতে প্রায় দ্বিগুণ টাকা খরচ করে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করতে হচ্ছে।

মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, তাদের নিজস্ব তিনটি অ্যাম্বুল্যান্স তিনটি। তার মধ্যে একটি খারাপ। অন্য দু’টির একটি ব্লাড ব্যাঙ্কের শিবির করার জন্য নির্দিষ্ট। আর একটি চিকিৎসকদের কলবুক পাঠানো এবং প্রয়োজনে তাঁদের আনার জন্য। রোগীদের পরিষেবা দেওয়া হয় না। কেন রোগীদের পরিষেবা দেওয়ার বদলে অ্যাম্বুল্যান্স অন্য কাজে ব্যবহার হচ্ছে? রোগীদের সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার তথা মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক সিদ্ধার্থ দত্ত। তবে তিনি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

অন্য দিকে বাকি মহকুমা প্রশাসনের তত্বাবধানে থাকা রেডক্রস সোসাইটির অ্যাম্বুল্যান্স এবং ব্লক প্রশাসনকে দেওয়া সাংসদ তহবিলের অ্যাম্বুল্যান্স দীর্ঘদিন বিকল। আর বিধায়ক (এলাকা উন্নয়ন) তহবিলের অ্যাম্বুল্যান্সটি মাস দুই ধরে উধাও। হাসপাতাল কতৃপক্ষর অভিযোগ, অ্যাম্বুল্যান্সটি ২০১৩ সালে নামকাওয়াস্তে রোগীকল্যাণ সমিতিকে দেওয়া হলেও প্রথম থেকেই বিধায়ক নিজের নিয়ন্ত্রণেই সেটি রেখেছেন। তা হলে এই অ্যাম্বুল্যান্সটি গেল কোথায়? পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস কয়েক আগে ব্লক পাড়ার একটি ক্লাবের সদস্যরা রাতে মদ্যপ অবস্থায় ওই অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে বর্ধমানে ক্যারাম কিনতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে। তারপর থেকেই সেটি অকেজো। অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে ক্যারাম কিনতে যাওয়া প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান আরামবাগের বিধায়ক তথা রোগীকল্যাণ সমিতির সভাপতি কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা। তিনি বলেন, ‘‘আসলে ভাল চালকের অভাব।’’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘রোগীকল্যাণ সমিতি থেকে গাড়িটির নিয়মিত তদারকি এবং সুষ্ঠু পরিচালনার ক্ষেত্রে অসুবিধার কথা ভেবেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে।’’

এ তো গেল হাসপাতালের ৬টি অ্যাম্বুল্যান্সের হাল। এগুলি ছাড়াও বিভিন্ন ক্লাবের কাছে অ্যাম্বুল্যান্স থাকে। যেমন শহরের ঋষি অরবিন্দ ক্লাবের তত্বাবধানে সেটি ছিল ‘জীবনসাথী’ নামে একটি অ্যাম্বুল্যান্স। সেটি মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া। কোনও অজ্ঞাত কারণে মাস খানেক ধরে জীবনসাথী তুলে নেওয়া হয়েছে। ক্লাবের কর্মকর্তা তথা আরামবাগ পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তৃণমূলের রাজেশ চৌধুরী বলেন, ‘‘ভাল চালকের অভাবে অ্যাম্বুল্যান্সটি বন্ধ রাখতে হয়েছে। শীঘ্রই সেটি চালু করার ব্যবস্থা হবে।’’ আর আরামবাগ পুরসভার তিনটি অ্যাম্বুল্যান্স থাকলেও তা সময় মতো পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ। ফলে সব মিলেয়ে সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের কোনও পরিষেবাই মিলছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রোগীর পরিজনেরা। পুরসভার অ্যাম্বুল্যান্স প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী বলেন, ‘‘চার-পাঁচ দিন আগে থেকে কলকাতা বা বর্ধমান হাসপাতালে যাওয়ার বুকিং থাকায় এই অসুবিধা হয়।’’

এ দিকে, আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল মহকুমার ৬টি ব্লক এলাকা ছাড়াও সংলগ্ন বর্ধমান, বাঁকুড়া, দুই মেদিনীপুর এবং হাওড়ার কিছু অংশের বাসিন্দারা। খাতায় কলমে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ২৬৫ হলেও প্রতিদিন গড়ে রোগীর চাপ থাকে প্রায় ৫০০-র উপর। আর বহির্বিভাগে প্রতিদিন হাজার খানেক রোগীর ভিড় থাকে। মহকুমা হাসপাতালের এই অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার সমস্যার কথা মহকুমা প্রশাসনেরও অজানা নয়। ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক দেবজ্যোতি বসু বলেন, ‘‘সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত সমস্যা মেটাতে শীঘ্রই রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠকের আয়োজন করছি। আর খারাপ অ্যাম্বুল্যান্সগুলি কী অবস্থায় আছে, তা খতিয়ে দেখে মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arambagh Ambulance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE