Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শিশুর পুষ্টি তালিকায় এ বার কলা

শিশুদের পুষ্টি জোগানে এ বার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি থেকে সপ্তাহে তিন দিন একটি করে কলা এবং অর্ধেক ডিম দেওয়া হচ্ছে। কলা পিছু বরাদ্দ ২ টাকা। খাতায় কলমে জুলাই মাস থেকে চালু হওয়ার কথা থাকলেও গত সেপ্টেম্বর থেকে এই ব্যবস্থা পুরোদমে চালু হল হুগলিতে।

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৮ ০১:৪২
Share: Save:

শিশুদের পুষ্টি জোগানে এ বার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি থেকে সপ্তাহে তিন দিন একটি করে কলা এবং অর্ধেক ডিম দেওয়া হচ্ছে। কলা পিছু বরাদ্দ ২ টাকা। খাতায় কলমে জুলাই মাস থেকে চালু হওয়ার কথা থাকলেও গত সেপ্টেম্বর থেকে এই ব্যবস্থা পুরোদমে চালু হল হুগলিতে।

সংশ্লিষ্ট নারী ও শিশু উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণ দফতরের জেলা প্রকল্প আধিকারিক জাফর ইমাম বলেন, “অপুষ্টি নির্মূল করার জন্যই হুগলিতে বেশ কিছু কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আমরা সফলও হয়েছি। এ বার ধারাবাহিক পুষ্টি বজায় রাখতে খাদ্য তালিকায় কলা রাখায় বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে।”

এর আগে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে জেলায় সুসংহত শিশু বিকাশ সেবা প্রকল্পে (আইসিডিএস) রান্না করা খাবারের পাশাপাশি সকালের খাবার দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এ জন্যে উপভোক্তাদের বাড়িতেই রেশন দেওয়ার ব্যবস্থা হয়। রবিবার বাদে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে শিশু এবং গর্ভবতী মায়েদের জন্য মাথাপিছু ১০ গ্রাম ছোলার ছাতু এবং ৫ গ্রাম চিনি বরাদ্দ হয়েছে। আর শহরের ক্ষেত্রে ২৭ গ্রাম নিউট্রিমিক্স। তিন বছরের উপরের শিশুদের অবশ্য একই বরাদ্দ দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে। আগে অবশ্য সকালে কেন্দ্র থেকে ৩ বছরের উপরের শিশুদের মুড়ি ও ছোলা দেওয়া হত। কেন্দ্রগুলিতে রান্না করা খাবার অবশ্য একই রকম রয়েছে— তিন দিন গোটা ডিমের ঝোল-ভাত, বাকি তিন দিন নানা রকম সব্জি এবং সয়াবিন দিয়ে খিচুড়ি।

শিশু এবং মায়েদের পুষ্টির মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৭৫ সাল থেকে প্রকল্পটি চলছে। হুগলিতে ‘চরম অপুষ্ট’ শিশুদের চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু হয় ২০১৩ সাল নাগাদ। তাদের সুস্থ ও স্বাভাবিক করতে অতিরিক্ত ‘পৌষ্টিক লাড্ডু’ এবং অর্ধেকের বদলে গোটা ডিমের ব্যবস্থা হয়। তা ছাড়া ৬ মাস অন্তর ডাক্তারি পরীক্ষার পর প্রয়োজনে পরবর্তী চিকিৎসার জন্য উচ্চতর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থাও শুরু হয়।

কিন্তু তার পরেও কমানো যায়নি অপুষ্ট শিশুর সংখ্যা। প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০১৬ সালের জুলাই নাগাদ জেলায় ‘চরম অপুষ্ট’ শিশুর সংখ্যা ছিল ৬৩৪। এই রিপোর্ট প্রকাশের পরই তৎকালীন জেলাশাসক সঞ্জয় বনসল নতুন ব্যবস্থা চালু করতে উদ্যোগী হন। শিশুর জন্য পুষ্টি সরবরাহের পাশাপশি পরিবারটির আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘পুষ্টি ও বিকাশ’ নামে এক নতুন কর্মসূচি চালু হয়। তাতে ১০০ দিন কাজ প্রকল্প ও প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের যৌথ উদ্যোগে প্রতিটি শিশুর পরিবারকে মুরগি খামার করে দেওয়া হয়।

তাতে খানিকটা হলেও কাজ হয়েছে বলে দাবি প্রশাসনের। জাফর ইমাম বলেন, “হুগলিতে চরম অপুষ্ট শিশুর সংখ্যা কমে এখন ২৩৫। তবে এই সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনা আমাদের লক্ষ্য।’’ তাঁর দাবি, কলার জোগানে যাতে ঘাটতি না হয়ে সে দিকে নজর রাখবে স্থানীয় প্রশাসন।

জেলায় মোট অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সংখ্যা ৬৫১৮। শিশু ও প্রসূতি মা মিলিয়ে উপভোক্তার সংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষ। এঁদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই ৩ লক্ষের কিছু বেশি। এই ৩ লক্ষ শিশুর জন্য সপ্তাহে তিন দিন ৯ লক্ষ কলা যোগাতে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা ভোর থেকে দৌড়াদৌড়ি করছেন। অভিযোগও উঠছে। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের দাবি, অত কলা নিয়ে আসতে গিয়ে অনেক সময়ই থেঁতলে যাচ্ছে। দাগ হয়ে যাচ্ছে কলায়। সে সব কলাকে পচা বলে মনে করছেন অভিভাবকেরা। ফলে ক্ষোভ বিক্ষোভ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nutrition Banana Anwadi Centre
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE