Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মশার রক্তে তিমি এঁকেছিল ছাত্রটি

কেন সে ব্যান্ডেজ বেঁধেছে তার কোনও সদুত্তরটি দিতে পারেনি ছাত্রটি। এরপরই ছাত্রটিকে নিয়ে থানায় যান শিক্ষকরা। ব্যান্ডেজ খুলে দেখা যায়, কব্জিতে লাল রঙে ইংরেজিতে লেখা ‘ব্লু হোয়েল।’

করাল: ছাত্রটির হাতে লেখা।— নিজস্ব চিত্র।

করাল: ছাত্রটির হাতে লেখা।— নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্যামপুর শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:২৭
Share: Save:

ক্লাসে বসে ট্যাব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছিল ছেলেটা। বারবার তাকাচ্ছিল ডান হাতের ক্রেপ ব্যান্ডেজ ঢাকা কব্জির দিকেও। সন্দেহ হওয়ায় শিক্ষকরা বিষয়টি জানান প্রধান শিক্ষককে। কেন সে ব্যান্ডেজ বেঁধেছে তার কোনও সদুত্তরটি দিতে পারেনি ছাত্রটি। এরপরই ছাত্রটিকে নিয়ে থানায় যান শিক্ষকরা। ব্যান্ডেজ খুলে দেখা যায়, কব্জিতে লাল রঙে ইংরেজিতে লেখা ‘ব্লু হোয়েল।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে হাওড়ার শ্যামপুরের অনন্তপুর সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুলের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টি জানার পরই দশম শ্রেণির ওই ছাত্রটির কাছ থেকে মোবাইলটি নিয়ে নেওয়া হয়। কাউন্সেলিংও করানো হয় তার। হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ছেলেটি ব্লু হোয়েল খেলার কথা স্বীকার করেছে।

পুলিশের দাবি, ছেলেটি কাউন্সেলিংয়ে জানিয়েছে, দিন চারেক আগে এক বন্ধু মারফত ‘ব্লু হোয়েল গেম’-এ এন্ট্রি নিয়েছিল সে। প্রথমে সে হাতের কব্জিতে নীল কালি দিয়ে ‘ব্লু হোয়েল’ শব্দটি লিখে ছবি তুলে পাঠিয়েছিল। কিন্তু ছবি গৃহীত হয়নি। তাকে পাল্টা জানানো হয়, সে যেন রক্ত দিয়ে ‘ব্লু হোয়েল’ শব্দটি লিখে পাঠায়। ছাত্রটি তখন মশা মেরে তার রক্ত আলতার সঙ্গে মিশিয়ে কব্জিতে ‘ব্লু হোয়েল’ শব্দটি লেখে। এ বার সেটি গৃহীত হয়। তারপরে চলতে থাকে খেলা। পুলিশকে ওই ছাত্রটি জানিয়েছে, এক সময় খেলা থেকে সে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু তার বাবাকে খুন করার হুমকি দেওয়ায় সে ভয়ে খেলা ছাড়তে পারেনি।

বৃহস্পতিবার ছাত্রটিতে থানায় আনার পরে তাকে কাউন্সেলিং-এর দায়িত্ব নেন ওসি সুমন দাস। ডেকে পাঠানো হয় ছাত্রটির বাবা-মা ও স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে। কাউন্সেলিং শেষে ওসি ওই ছাত্রকে খেলা ছেড়ে বেরিয়ে আসতে বলেন। হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ওসির কাছ থেকে অভয় পেয়ে ছাত্রটি মোবাইল থেকে খেলাটি ডিলিট করে দেয়।

পুলিশ ও স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, অনন্তপুরের মণ্ডলপাড়ার বাসিন্দা ওই ছাত্রের বাবা পেশায় গাড়ির খালাসি। ছেলেটির বাবা জানান, অনেক দিন ধরেই তার মোবাইলে গেম খেলার শখ ছিল। তবে সপ্তাহ খানেক ধরেই সে কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল। ছেলেটির বাবার কথায়, ‘‘আমরা ভাবতাম পড়ার চাপে হয়তো অন্যমনস্ক।। কিন্তু এমন ঘটনা শুনে তো আঁতকে উঠছি।’’ স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রামানন্দ সেনাপতি বলেন, ‘‘এই মারণ খেলার ফাঁদে যাতে পড়ুয়ারা না পড়ে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। আরও একজন ছাত্র এই ফাঁদে পড়েছিল। আমরা তাকে ধরে ফেলেছি।’’

বৃহস্পতিবারই শ্যামপুর থানার সব হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করে পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, গোপনে ছাত্রদের উপরে নজর রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয় প্রধান শিক্ষকদের। জেলা পুলিশের ওই কর্তা বলেন, ‘‘বিশেষ করে ছাত্রদের কবজির দিকে নজর রাখার কথা বলা হয়েছে শিক্ষকদের। সন্দেহজনক কিছু পেলেই তাঁদের বিষয়টি থানায় জানাতে বলা হয়েছে।’’

(প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশের সময় ব্লু হোয়েল গেম ‘ডাউনলোড করেছিল’ এবং ‘অ্যাপে নিজের ছবি পাঠিয়েছিল’ বলে লেখা হয়েছিল যা তথ্যগত ভাবে সম্পূর্ণ ভুল। পাঠকদের ধন্যবাদ এই ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE