Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
হুগলির বৈদ্যবাটী, কানাইপুর ও চাপাডাঙায় আতঙ্ক

ত্রিফলা দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য, জখম ৪

মঙ্গলবার রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার সময় আক্রান্ত হন বৈদ্যবাটীর এনসি ব্যানার্জি রোডের বাসিন্দা এক গয়না ব্যবসায়ী। সুদর্শন আঢ্য নামে বছর পঁয়ষট্টির ওই ব্যবসায়ীর দোকা‌ন স্থানীয় ১১ নম্বর রেলগেটের কাছে জিটি রোডের ধারে। 

অকুস্থল: হাসপাতালে রক্তাক্ত বৈদ্যবাটীর ব্যবসায়ী সুদর্শনবাবু। পড়ে রয়েছে বন্দুকের ম্যাগাজিন (ইনসেটে) নিজস্ব চিত্র

অকুস্থল: হাসপাতালে রক্তাক্ত বৈদ্যবাটীর ব্যবসায়ী সুদর্শনবাবু। পড়ে রয়েছে বন্দুকের ম্যাগাজিন (ইনসেটে) নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বৈদ্যবাটী ও তারকেশ্বর শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৮ ০২:২১
Share: Save:

মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার ভোর— কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে জেলার তিন জায়গায় দুষ্কৃতী হামলার শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ। অভিযোগ, লুট হয়েছে টাকা-গয়না। আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ অবশ্য ধরা পড়েনি।

মঙ্গলবার রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার সময় আক্রান্ত হন বৈদ্যবাটীর এনসি ব্যানার্জি রোডের বাসিন্দা এক গয়না ব্যবসায়ী। সুদর্শন আঢ্য নামে বছর পঁয়ষট্টির ওই ব্যবসায়ীর দোকা‌ন স্থানীয় ১১ নম্বর রেলগেটের কাছে জিটি রোডের ধারে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতে দোকান বন্ধ করার সময় ছেলে অমিত থাকেন তাঁর সঙ্গে। দু’জনে হেঁটেই ফেরেন। ওই রাতে অমিত রিষড়ায় গিয়েছিলেন। ফলে সুদর্শনবাবু রাত ৯টা নাগাদ দোকান বন্ধ করে ব্যাগে ৩০-৩৫ গ্রাম সোনা এবং নগদ কয়েক হাজার টাকা নিয়ে ফিরছিলেন একাই।

অভিযোগ, বাড়ির কিছুটা আগে এক দুষ্কৃতী তাঁর ব্যাগ ধরে টানাটানি শুরু করে। তিনি বাধা দেন। অপর এক দুষ্কৃতী পিছন থেকে বন্দুকের বাঁট দিয়ে সুদর্শনবাবুর মাথায় আঘাত করতে থাকে। মাথা ফেটে রক্ত পড়তে থাকে। শেষে ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে দুষ্কৃতীরা মোটরবাইক ছুটিয়ে চম্পট দেয়।

সুদর্শনবাবুকে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে স্থানীয় নার্সিংহোমে ভর্তি করান পরিবারের লোকজন। পুলিশ জানিয়েছে, দুষ্কৃতীরা পালিয়ে গেলেও তাদের বন্দুকের গুলি রাখার চেম্বারটি খুলে পড়ে গিয়েছিল। সেটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ওই চেম্বার দেখে তদন্তকারীদের ধারণা, দুষ্কৃতীদের কাছে সেভেন এমএম পিস্তল ছিল।

সুদর্শনবাবুর ছেলে অমিত বলেন, ‘‘যে জায়গায় বাবার উপরে হামলা হল, সেখানে লাইটপোস্টে আলো জ্বলে না। অনেকবার বলেও কাজ হয়নি। সোমবারেও ওখানে দু’টো অচেনা ছেলেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি।’’ তাঁদের দাবি, গত বছরই তাঁদের দোকানে চুরি হয়েছিল। তার পরে সিসি ক্যামেরা লাগান। কিন্তু গয়না আর দোকানে রাখতেন না। কিন্তু বাড়ি নিয়ে যাওয়ায় যে কাল হল। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশের সক্রিয় ভূমিকা তো দেখি না। থানার সামনে কেরোসিন ঢেলে গায়ে আগুন লাগাতে হবে দেখছি।’’

স্থানীয় এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘দুষ্কৃতীরা এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। ভয়ে চুপ থাকতে হয়। হামলা নিশ্চয়ই পূর্ব পরিকল্পিত। সুদর্শনবাবুর গতিবিধির খবর নিশ্চয়ই দুষ্কৃতীদের কাছে ছিল।’’ তাঁর প্রশ্ন‌, ‘‘এত আগ্নেয়াস্ত্র কোথা থেকে আসছে? পুলিশ কী করছে? আমরা আতঙ্কিত।’’

চন্দননগর কমিশনারেটের এডিসিপি (শ্রীরামপুর) অম্লান ঘোষ জানান, ‘‘তদন্ত চলছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এলাকায় পুলিশি টহলদারি

বাড়ানো হবে।’’

শুধু বৈদ্যবাটী নয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে, বুধবার ভোর ৪টে নাগাদ কানাইপুরের বাঁশাই অটোস্ট্যান্ডে আর এক ব্যবসায়ী দুষ্কৃতীদের হামলার মুখে পড়েন। তাঁর দাবি, ভোরে তিনি ফুল আনতে যাওয়ার জন্য অটোস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই সময় একটি মোটরবাইকে তিন দুষ্কৃতী এসে তাঁর মাথায় রিভলভার ঠেকায়। বোমা বের করে। কিছু নগদ টাকা এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে চম্পট দেয়। ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘ওরা বোমা ছোড়ার ভঙ্গি করছিল। ভয় পেলে বলি, ‘চেঁচাব না’। তখন ওরা চলে যায়।’’

কমিশনারেটের আধিকারিকদের দাবি, ওই ঘটনায় দুষ্কৃতী হামলার ব্যাপারে লিখিত কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে, সর্বত্রই দুষ্কৃতীদের ধরতে এবং অস্ত্র উদ্ধার করতে অভিযান চা‌লানো হবে বলে পুলিশকর্তাদের আশ্বাস।

বুধবার ভোরেই তারকেশ্বরের চাঁপাডাঙা পঞ্চায়েতের সাহাচকে দুষ্কৃতীরা দুই ব্যক্তিকে মারধর করে টাকা ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই দু’জন কলকাতায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। ভোর ৪টে নাগাদ সাইকেলে চেপে তারকেশ্বর স্টেশনে যাচ্ছিলেন ট্রেন ধরতে। অভিযোগ, দামোদর বাঁধের রাস্তায় চার-পাঁচ জন তাঁদের পথ আটকায়। বেধড়ক মারধর করে টাকা হাতিয়ে নেয়। জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের দাবি, ওই ঘটনায় অভিযোগ হলে তদন্ত করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE