Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে মারধরের নালিশ

দুজনেই বিবাহিত। একই গ্রামের বাসিন্দা। বছর ছয়েক ধরে মহিলা ও পুরুষটির মধ্যে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। যা মেনে নিতে পারেনি ছেলেটির পরিবার। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে অশান্তিও চলছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৬ ০১:৫২
Share: Save:

দুজনেই বিবাহিত। একই গ্রামের বাসিন্দা। বছর ছয়েক ধরে মহিলা ও পুরুষটির মধ্যে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। যা মেনে নিতে পারেনি ছেলেটির পরিবার। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে অশান্তিও চলছিল।

অভিযোগ, বুধবার রাতে ছেলেটি মহিলাকে তার বাড়িতে ডাকে। মহিলা সেখানে গেলে তাঁর হাত-পা বেঁধে প্রচণ্ড মারধর করে ছেলেটির পরিবারের লোকজন। খবর পেয়ে মহিলাকে উদ্ধার করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন স্থানীয় এক পঞ্চায়েত সদস্য। বৃহস্পতিবার সকালে মহিলার বাড়ি থেকে তাঁর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মারধরের জেরে মহিলা অপমানে আত্মঘাতী হয়েছেন বলে অভিযোগ তাঁর প্রতিবেশীদের। যদিও তাঁর স্ত্রীকে মারধর করে মেরে তার পর ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মহিলার স্বামী পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনার পর থেকেই ছেলেটি ও তার পরিবার পলাতক। বৃহস্পতিবার উলুবেড়িয়ার বীরশিবপুরের মালঞ্চবেড়িয়ায় ওই ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন গ্রামবাসীরা। পুলিশ গেলে তাদের দেহ তুলতে বাধা দেওয়া হয়। পরে অভিযুক্ত ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ ওঠে। পরে এ দিনই দুপুরে মুম্বই রোডে একটি ধাবা থেকে অভিযুক্ত সুশীল ভোঁড় ধরা পড়ে। অন্যদের খোঁজেও তল্লাশি চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ওই মহিলাকে সুশীলের বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে যে মারধর করা হয়েছিল, প্রতিবেশীদের কাছ থেকে তার সত্যতা জানা গিয়েছে। তবে তার পরে কী ঘটেছিল তা মৃতদেহের ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই জানা যাবে। তার ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর চল্লিশের ওই মহিলার স্বামী কলকাতায় চাকরি করেন। সপ্তাহে একদিন বাড়িতে আসেন। দম্পতির আঠারো বছরের ছেলে কাজের সূত্রে অন্যত্র থাকে। দুই মেয়ে বিবাহিত। বাড়িতে একাই থাকতেন তিনি। তাঁদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই বাড়ি সুশীলদের। মুদির দোকানের মালিক সুশীলের স্ত্রী ও বছর কুড়ির এক ছেলে রয়েছে। বছর ছয়েক ধরে সুশীলের সঙ্গে মহিলার সম্পর্ক ছিল। এর জন্য সুশীলের পরিবারে অশান্তিও হতো বলে গ্রামবাসীরা জানান। তবে কিছুদিন হল মহিলা ওই সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছিলেন। কিন্তু সুশীল রাজি হচ্ছিল না। বুধবার রাত ১০টা নাগাদ সূশীল ফোন করে মহিলাকে তার বাড়িতে ডাকেন। অভিযোগ, মহিলা যাওয়ার পরেই তাঁকে ঘিরে ধরেন সুশীলের পরিবারের লোকজন। তার স্ত্রী, বাবা-মা, এক দাদা, ছেলে সবাই মিলে মহিলার হাত বেঁধে ফেলেন। তাঁকে উবু করে বসিয়ে পা দু’টিও বেঁধে ফেলে শুরু হয় মারধর।

ইতিমধ্যে ঘটনার কথা সুশীলেরই কয়েকজন প্রতিবেশী স্থানীয় পঞ্চায়েতের সদস্য রাজকুমার হাজরাকে জানান। রাজকুমারবাবু বলেন, ‘‘খবর পাওয়া মাত্র গ্রামের লোকজনকে নিয়ে সুশীলের বাড়িতে যাই। গিয়ে দেখি পিছমোড়া করে বাঁধা হয়েছে মহিলাকে। মারের চোটে তাঁর হাতে, পিঠে কালশিটে পড়ে গিয়েছে। আমি মহিলাকে উদ্ধার করে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দিই। সকালে শুনি গলায় দড়ি দেওয়া অবস্থায় তাঁর দেহ পাওয়া গিয়েছে।’’ মহিলা মৃত্যুর খবর শুনেই সুশীল ও তার বাড়ির লোকজন পালিয়ে যায়। পরে মুম্বই রোডে একটি ধাবা থেকে সুশীলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। স্ত্রী মৃত্যুর খবর শুনে বাড়ি ফিরে আসেন তাঁর স্বামী। পুলিশের কাছে সুশীল ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে মেরে ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন তিনি। পুলিশের দাবি, মহিলাকে বেঁধে রেখে যে তার পরিবার মারধর করেছে সে কথা সুশীল স্বীকার করেছে। তবে তাকেও মারধর করা হয় বলে পুলিশকে জানিয়েছে সে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

extramarital affairs
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE