Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পোড়া ঘর, পচা মাছের  দুর্গন্ধে সন্ত্রস্ত বীরকুল

গ্রামে রয়েছে ‘ষোলআনা কমিটি’র বিঘা দশেকের পুকুর। সেখানে মাছ চাষ করে আয় করতেন গ্রামের অনেকে। অভিযোগ সেই পুকুরে বিষ দিয়ে গিয়েছে বাইক বাহিনী। এ দিন সকালে গিয়ে দেখা যায় পুকুরে ভাসছে মরা মাছ। পচা গন্ধে বুথেও টেঁকা দায়। 

উঁকি: বাইরের পরিস্থিতি বুঝে নেওয়ার চেষ্টা। নিজস্ব চিত্র

উঁকি: বাইরের পরিস্থিতি বুঝে নেওয়ার চেষ্টা। নিজস্ব চিত্র

নুরুল আবসার
বাগনান শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৮ ০৩:০৩
Share: Save:

পুনর্নির্বাচন! তা মাথায় থাক— বুধবার সকাল থেকে দেখাই মেলেনি বাগনানের বীরকুল দক্ষিণপাড়া গ্রামের বাসিন্দাদের। মাঠের এ পাশে প্রাথমিক স্কুলের ভিতর যখন চলছে ভোট গ্রহণ, ও পাশে গ্রামের ২২টি বাড়ি তখন দাঁড়িয়ে রয়েছে কালি মেখে। ভিতরে নড়ে চড়ে বেড়িয়েছেন দু’একজন। তাঁদেরই জিজ্ঞেস করা— ভোট দিতে যাবেন না? উত্তর এসেছে, ‘‘বাঁচব কী করে তাই ভাবছি।’’ বুথের পাশের পুকুর থেকে মরা মাছের পচা গন্ধে গা গুলিয়ে ওঠে। নাকে রুমাল চাপা দিয়ে দাঁড়িয়ে পুলিশও।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার ভোট শেষ হয়ে যাওয়ার মুখে বীরকুল প্রাথমিক লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন বেশ কয়েকজন ভোটার। তাদের হাতে কুপন দেওয়া হচ্ছিল, যাতে পাঁচটার পরেও তাঁরা ভোট দিতে পারেন। তা নিয়েই বিজেপি ও তৃণমূল সমর্থকের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। একদল দুষ্কৃতী ব্যালট বাক্স তুলে পুকুরে ফেলে দেয়।

অভিযোগ, ওই রাতে বাইক বাহিনী হামলা চালায় দক্ষিণপাড়ায়। পুড়িয়ে দেওয়া ২২টি বাড়ি। হামলায় ক্ষতিগ্রস্তরা নিজেদের বিজেপির সমর্থক বলে দাবি করেছেন। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, বিজেপি এবং তৃণমূল উভয় পক্ষই বাড়িতে আগুন লাগানোর অভিযোগ জানিয়েছে। তদ‌ন্ত চলছে।

প্রাথমিক স্কুল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে দক্ষিণপাড়ায় মূলত ধীবর সম্প্রদায়ের বাস। তাঁদের দাবি, সোমবার রাত ৯টা নাগাদ তাঁদের মহল্লায় মোটর বাইক নিয়ে হামলা চালায় প্রায় জনা ষাটেক যুবক। বাইক ঢুকতে দেখেই অবশ্য এলাকা ছাড়েন বাসিন্দারা। ফলে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু প্রতিটি বাড়িতে হামলা চালায় বাইক বাহিনী। অভিযোগ, দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে আসবাবপত্র তছনছ করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বাদ যায়নি টিভি, কম্পিউটার, ফ্রিজ, খাট, আলমারি। গ্যাসের সিলিন্ডার বের করে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয় পুকুরে। ভ্যানরিকশা, মিনি ট্রাকেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।

গ্রামে রয়েছে ‘ষোলআনা কমিটি’র বিঘা দশেকের পুকুর। সেখানে মাছ চাষ করে আয় করতেন গ্রামের অনেকে। অভিযোগ সেই পুকুরে বিষ দিয়ে গিয়েছে বাইক বাহিনী। এ দিন সকালে গিয়ে দেখা যায় পুকুরে ভাসছে মরা মাছ। পচা গন্ধে বুথেও টেঁকা দায়।

মঙ্গলবার দুপুরে উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক অংশুল গুপ্ত ওইসব গ্রামে যান। নিরাপত্তার দাবিতে বাসিন্দারা তাঁকে ঘিরে ধরেন। মহকুমাশাসক তাঁদের অভয় দিয়ে গ্রামে থাকার কথা বলেন। সেই সঙ্গে আবেদন জানান, তাঁরা যেন বুধবার পুনর্নির্বাচনে ভোট দেন। নিরাপত্তার ঘাটতি রাখা হয়নি প্রশাসনের তরফে। এ দিন বুথের এক কিলোমিটার দূর থেকে মোতায়েন করা হয়েছিল সশস্ত্র পুল‌িশ বাহিনী। ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসারের নেতৃত্বাধীন সেই নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে মাছি গলার উপায় ছিল না। হাজির ছিলেন বাগনান ২ ব্লকের জয়েন্ট বিডিও নিজে।

ভোট দেওয়া তো দূর, গোলমালের আশঙ্কায় এ দিন সকালে ফের উধাও হয়ে যান বেশির ভাগ বাসিন্দা। যে দু’একজন মহিলা ও বয়স্ক ছিলেন গ্রামে। তাঁরাও বুথ মুখো হননি। বছর পঞ্চাশের মায়া দাস ছাই হওয়া ঘরে খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন গৃহস্থালির জিনিস। বললেন, ‘‘কিছুই তো আস্ত নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Panchayat Elections 2018 Vote
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE