Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

গান গাওয়া খুচরোয় মিলছে না ভাত, অবরোধ

সোমবার সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত পান্ডুয়া সিমলাগ়ড়ে জিটি রোড অবরোধ চলে। পরে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন তাঁরা।

দাবি-আদায়: পথ আটকে প্রতিবাদ দৃষ্টিহীনদের। সোমবার পান্ডুয়া সিমলাগড় জিটি রোডে। —নিজস্ব চিত্র।

দাবি-আদায়: পথ আটকে প্রতিবাদ দৃষ্টিহীনদের। সোমবার পান্ডুয়া সিমলাগড় জিটি রোডে। —নিজস্ব চিত্র।

সুশান্ত সরকার
পান্ডুয়া শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:০৭
Share: Save:

ওঁরা চোখে দেখতে পান না। পরিবারে স্বাচ্ছন্দ্যও নেই। তাই বেছে নিয়েছিলেন ভিক্ষাবৃত্তি। গত কয়েকমাসে তাঁদের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে বলে দাবি। অভিযোগ, ভিক্ষা করে উপার্জিত খুচরো টাকা দিয়ে নিত্যদিনের বাজারও করা যাচ্ছে না। তাই একঘণ্টা জিটি রোড অবরোধ করলেন ওই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা। সোমবার সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত পান্ডুয়া সিমলাগ়ড়ে জিটি রোড অবরোধ চলে। পরে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন তাঁরা।

হেলেন কেলার হ্যান্ডিক্যাপড্ অ্যাসোসিয়েশনের তরফে নূপুরকান্তি মাইতি বলেন, ‘‘আমরা প্রতিবন্ধী, অনেকেই সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন। ট্রেনে গান গাই, বাবুরা খুশি হয়ে পয়সা দেন— কেউ এক বা দু’টাকার কয়েন। ওই দিয়েই সংসার চলে আমাদের। নোট পাব কোথায়?’’

বছর পঞ্চাশের এক প্রতিবন্ধী গান করেন ট্রেনের কামরায়। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ব্যাগে টাকা রয়েছে। কিন্তু সারাদিন খেতে পারছি না। কোন দোকানদার খুচরো পয়সা নিতে চাইছেন না।’’

প্রতিবন্ধীদের অভিযোগ, প্রতিদিন কমবেশি একশো টাকা রোজগার করতে পারেন তাঁরা। কিন্তু সবই মুদ্রায়। আগে এই সব খুচরো পয়সার আলাদা কদর ছিল। কারণ তখন বাজারে খুচরোর টান ছিল। কিন্তু নোটবন্দির পর থেকে পরিস্থিতি উল্টে গিয়েছে। গত কয়েক মাসে সমস্যা আরও বেড়েছে। মুদি দোকান থেকে কাঁচা আনাজ, এমনকি চায়ের দোকানেও চলছে না খুচরো পয়সা।

নূপুরবাবুর দাবি, তাঁদের মধ্যে অনেকেই ব্যাঙ্কে গিয়ে কিছু কিছু টাকা জমান। কিন্তু সেই ব্যাঙ্কও খুচরো নিতে অস্বীকার করছে। তিনি বলেন, ‘‘গত কয়েক দিনে ব্যাঙ্কে গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। সাফ বলে দেওয়া হয়েছে ওই টাকা জমা হবে না। কারণ খুচরো গোনার লোক নাকি ব্যাঙ্কে নেই। বাধ্য হয়েই আমরা আজ পথ অবরোধে নেমেছি।’’

সমস্যায় ব্যবসায়ীরাও। পান্ডুয়ার ব্যবসায়ী রতন দত্ত বলেন, ‘‘আমাদের কাছেই হাজার হাজার টাকা রয়েছে খুচরোয়। আবার নতুন করে খুচরো নেব কোন ভরসায়। মহাজন অত খুচরো নিতে চান না।’’ পান্ডুয়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক গোপালচন্দ্র দে বলেন, ‘‘নোটবন্দির পরে পরে ব্যাঙ্ক আমাদের খুচরো পয়সা ধরিয়ে দিয়েছিল। এখন আর আমাদের থেকে খুচরো নিচ্ছে না। অনেক ব্যবসায়ী আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন।’’

এ কথা অবশ্য অস্বীকার করেছেন সিমলাগড়ের এক সরকারি ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। তিনি বলেন, ‘‘অ্যাকাউন্ট থাকলে আমরা খুচরো নিতে বাধ্য। কিন্তু যাঁর এই শাখায় অ্যাকাউন্ট নেই তাঁর খুচরো জমা নিই কী করে?’’

হুগলি (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা বলেছি, থানায় লিখিত অভিযোগ হলে পদক্ষেপ করব। এ বিষয়ে কোনও অভিযোগ এতদিন আমাদের কাছে আসেনি। এলে খতিয়ে দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE