Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Education

স্মার্টফোনে শুনে পড়ার পাঠ শুরু জাহিরাদের

উলুবেড়িয়া, বাগনান ও পাঁচলার প্রায় দশটি চক্রের ৩২জন পড়ুয়ার পাঠ চলছে স্মার্ট ফোনে।

অন্যরকম: শুনে শুনে পড়া মুখস্থ করছে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

অন্যরকম: শুনে শুনে পড়া মুখস্থ করছে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

সুব্রত জানা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৪৬
Share: Save:

ছুঁয়ে পড়ার দিন শেষ। এ বার কানে শুনে শ্রতিধর হয়ে উঠবে দৃষ্টিহীন পড়ুয়ারা।

এই স্মার্ট ফোন অন্যরকম। এতে কথা বলা যাবে না। শুধুই ব্যবহার করা যাবে পড়াশোনার জন্য। এই স্মার্টফোনই ব্যবহার করছে হাওড়া জেলা সমগ্র শিক্ষা মিশন। সম্প্রতি উলুবেড়িয়া দক্ষিণ চক্রের কোটালঘাটায় বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পড়ুয়াদের নিয়ে পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ শিবিরে স্মার্টফোনেই চলল পড়াশোনা। খুশি পড়ুয়ারাও।

হাওড়া জেলা সমগ্র শিক্ষা মিশনের আধিকারিক শারদ্বতী চৌধুরী বলেন, ‘‘দৃষ্টিহীন ও ক্ষীণদৃষ্টি সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য পড়ার সুবিধা রয়েছে স্মার্টফোনের একটি অ্যাপে। ‘ইজ়ি রিডিং’ নামের এই অ্যাপে পাঠক্রমের সব কিছুই রয়েছে। কানে হেডফোন লাগিয়ে শুনে মুখস্থ করে ফেললেই কেল্লা ফতে। রাজ্যের মধ্যে হাওড়া জেলায় এই উদ্যোগ প্রথম।’’ তিনি জানান, জেলায় মোট দৃষ্টিহীন পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় দুশো। মাস ছয়েক আগে একটি শিবির করে এই সব পড়ুয়াদের চিহ্নিত করা হয়। ধীরে ধীরে সকলের হাতেই ওই স্মার্টফোন দেওয়া হবে।

উলুবেড়িয়া, বাগনান ও পাঁচলার প্রায় দশটি চক্রের ৩২জন পড়ুয়ার পাঠ চলছে স্মার্ট ফোনে। গঙ্গারামপুর হাই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী মন্দিরা ঘোষ ও পাঁচলা বেলডুবি হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির জাহিরা নস্কর জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন। তারা এর আগে ব্রেইল পদ্ধতির মাধ্যমে পড়াশোনা করেছে। তারাই এখন পড়া মুখস্থ করছে স্মার্টফোনে। মন্দিরা আর জাহিরার কথায়, ‘‘ব্রেইল বই অনেক মোটা মোটা হয়। স্কুলে নিয়ে যেতে কষ্ট হয়। স্মার্ট ফোন শুনে শুনে পড়া মুখস্থ হয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি।’’

দৃষ্টিহীনদের পড়ার জন্য ব্রেইল পদ্ধতি ব্যবহার করা হল না কেন?

হাওড়া জেলা প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর সম্পাদক ও দৃষ্টিহীন পড়ুয়াদের শিক্ষক অজয় দাস জানান, ব্রেইল লিপি উদ্ভাবনের পর কেটে গিয়েছে কয়েকশো বছর। এই সময়ের মধ্যে ব্রেইল পদ্ধতির অন্য কোনও বিকল্প দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের কাছে ছিল না। ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনা করার কিছু সমস্যা রয়েছে। এক পাতা ছাপার অক্ষর ব্রেলে হয়ে যায় প্রায় পাঁচ পাতা। তাই এই পদ্ধতি পড়াশোনা করতে শিক্ষার্থীদের কাছে কিছুটা ক্লান্তিজনকও বটে। তাঁর আরও ব্যাখ্যা, গ্ৰামের দরিদ্র পরিবারের শিশুরা আঙুল দিয়ে দাঁত মাজে। ফলে ক্রমশ কমতে থাকে তর্জনীর অনুভূতি। তাদের কাছে ব্রেইল খুবই জটিল প্রক্রিয়া। তাঁর কথায়, ‘‘স্মার্টফোনে অনেক নেতিবাচক কথাই শোনা যায়। সেটা যদি দৃষ্টিহীনদের কাছে এমন জাদুমন্ত্র নয়, তার চেয়ে ভাল আর কীই বা হতে পারে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education Blind Student Smartphone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE