Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

রক্ত ভাগের প্রথম দিশা শ্রীরামপুরে

শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকের পিয়ারাপুর পঞ্চায়েতে অবস্থিত এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, রাজ্যের আর কোনও পঞ্চায়েত এলাকায় ব্লাডব্যাঙ্ক নেই। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘এতে গোটা রাজ্যের রক্তের সঙ্কট মিটবে না। অন্যান্য জেলাতেও এমন উদ্যোগ হোক। তা হলেই আমাদের ভাবনা সফল হবে।’’

প্রকাশ পাল
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

ছাড়পত্র মিলেছে।গণ-উদ্যোগে তৈরি শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্ক শীঘ্রই চালু হচ্ছে। তাও আবার রক্তের পৃথকীকরণ যন্ত্র (সেপারেটর মেশিন)-সহ। এলাকাবাসীর আশা, রক্তের নির্দিষ্ট কোনও উপাদান দরকার হলে তাঁদের আর কলকাতায় ছুটতে হবে না। আশপাশের জেলার মানুষও উপকৃত হবেন।

শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকের পিয়ারাপুর পঞ্চায়েতে অবস্থিত এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, রাজ্যের আর কোনও পঞ্চায়েত এলাকায় ব্লাডব্যাঙ্ক নেই। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘এতে গোটা রাজ্যের রক্তের সঙ্কট মিটবে না। অন্যান্য জেলাতেও এমন উদ্যোগ হোক। তা হলেই আমাদের ভাবনা সফল হবে।’’

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, শুক্রবার দিল্লি থেকে কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের ছাড়পত্র এসেছে। আগামী ২ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক ভাবে ব্লাডব্যাঙ্ক চালু করা হবে। পূর্ণ রক্ত (হোল ব্লাড) ছাড়াও রক্তের বিভিন্ন উপাদান কেনা যাবে সরকারি ব্লাডব্যাঙ্কের দামেই। এই হাসপাতালে রক্তদানের কার্ড থাকলে রক্ত কেনার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ব্লাডব্যাঙ্কে প্রক্রিয়ার খরচ নেওয়া হবে। থ্যালাসেমিয়া রোগী বা ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে তা-ও

লাগবে না।

বেলুড় শ্রমজীবী স্বাস্থ্য প্রকল্প সমিতির কার্যকরী সভাপতি ফণিগোপাল ভট্টাচার্য জানান, ব্লাডব্যাঙ্কের পরিকাঠামো তৈরি করতে প্রায় ১ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কুপন ছাপিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা তোলা হয়েছে। যন্ত্রপাতি কিনতে আর্থিক সাহায্য করেছে কোল ইন্ডিয়া।

এক মহিলা এবং একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের কর্মচারী সমিতি ব্লাডব্যাঙ্কের জন্য দু’টি গাড়ি দিয়েছেন। ফনিবাবু বলেন, ‘‘পুরো পরিকাঠামো তৈরি হলে তবেই ব্লাডব্যাঙ্কের ছাড়পত্র পাওয়া যায়। অর্থাৎ কাজ শুরুর জন্য আমরা তৈরি। পর্যাপ্ত চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান বা কর্মী আছেন। দিনে দু’টি বা তিনটি শিবির করার পরিকাঠামো আমাদের আছে।’’

কেন এখানে ব্লাডব্যাঙ্কের প্রয়োজন হল?

হুগলিতে চারটি সরকারি হাসপাতালে ব্লাডব্যাঙ্ক আছে। চুঁচুড়া ইমামবাড়া (সদর) এবং শ্রীরামপুর, আরামবাগ ও চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে। কিন্তু কোনওটিতেই রক্ত পৃথকীকরণের ব্যবস্থা নেই। ফলে রক্তের নির্দিষ্ট কোনও উপাদান দরকার হলে কলকাতায় ছুটতে হয়।

২০১৬ সালে শ্রীরামপুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় ডেঙ্গি মহামারির আকার নেয়। রক্তের অনুচক্রিকা বা প্লেটলেট জোগাড় করতে রোগীর পরিজনদের কালঘাম ছুটেছিল ফেলতে হয়েছিল। সরকারি ব্লাডব্যাঙ্কে ওই উপাদান অপ্রতুল হওয়ায় বেসরকারি ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে চড়া দামে তা কিনতে হয়েছে। গ্রীষ্মকালে, পুজোর মরসুমে বা যে কোনও সাধারণ নির্বাচনের সময়েও ব্লাডব্যাঙ্ক রক্তাল্পতায় ভোগে।

এমন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার লক্ষ্যেই এই ব্লাডব্যাঙ্কের ভাবনা। হাসপাতালের এক কর্তার কথায়, ‘‘আমাদের হাসপাতালে ভর্তি রোগীর পরিজনদের দেখেছি, রক্ত জোগা়ড়ের জন্য ছোটাছুটি করছেন। অসহায়তার কথা বলছেন। আমরা হয়তো সাহায্য করতে পারিনি।

মানুষের এই অসহায়তা দূর করতেই দু’বছর আগে ব্লাডব্যাঙ্ক গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘মানুষ সাড়া দেওয়ায় সেপারেটর মেশিন-সহ আস্ত একটা ব্লাডব্যাঙ্ক তৈরি করা গেল কোনও ঋণ ছাড়াই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Blood Bank Serampore Separator Machine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE