কালিমা: কালো ধোঁয়ায় ছড়াচ্ছে দূষণ। ছবি: মোহন দাস
মোটরভ্যানে রক্ষে নেই, দোসর বাসও!
আরামবাগ শহরে তো বটেই, মহকুমার প্রায় সর্বত্র কেরোসিনে চলছে মোটরভ্যান। যার জেরে দীর্ঘদিন ধরেই বায়ু দূষণের অভিযোগ তুলছিলেন পরিবেশপ্রেমীরা। এ বার বাসেরও ভরসা ওই জ্বালানি! পথচারীকে সহ্য করতে হচ্ছে কালো ধোঁয়া। আধুনিক শহরে যখন ডিজেলের পরিবর্তে বিদ্যুৎ বা ব্যাটারি চালিত বাস চালানো নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে, তখন আরামবাগ যেন পিছনে হাঁটছে!
ডিজেলের পরিবর্তে আরামবাগ মহকুমা থেকে ছাড়া প্রায় ১৬২টি বাসের মধ্যে ৫০ শতাংশই কেরোসিনে চলছে বলে মেনে নিয়েছেন পরিবহণ কর্মীদের একটা বড় অংশই। মেনেছেন অনেক বাস-মালিকও। কেরোসিন চালিত বাসের দূষণ নিয়ে সম্প্রতি খানাকুলের গড়েরঘাট থেকে আরামবাগ এবং তারকেশ্বর রুটের বেশ কিছু নিত্যযাত্রী মহকুমাশাসক লক্ষ্মীভব্য তান্নিরু কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়ে বিহিত চান। মহকুমা প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, “এটা দেখা সম্পূর্ণ পরিবহণ দফতরের কাজ। রাস্তায় নেমে ওই কাজ করার ক্ষমতা আমাদের নেই। আইনও আমাদের হাতে নেই। পুলিশ মামলা করতে পারে। গাড়ি থেকে কতটা দূষণ ছড়াচ্ছে আজকাল সেই যন্ত্রপাতিও পরিবহণ দফতরের আছে।” হুগলির আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক শুভেন্দুশেখর দাস বলেন, “আমরা নিয়মিত চেকিং করছি। ধরা পড়লে বাস বন্ধ করে দেওয়া হবে।”
অটো-টোটো এবং ছোট যাত্রিবাহী গাড়ির দাপটে মহকুমায় বাস-শিল্প বেশ কিছুদিন ধরেই ধুঁকছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু বাসরুট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অনেক রুটে বাসের সংখ্যা কমেছে। বাস-মালিকদের একাংশের দাবি, ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে জ্বালানি হিসেবে কেরোসিন ছাড়া গতি নেই। কারণ, ডিজেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। সেই অনুপাতে বাস ভাড়া বাড়ছে না। এখন অটো-টোটোতে উঠলেই ১০ টাকা দিতে হয়। সেখানে বাসে সাত কিলোমিটার পর্যন্ত সরকার সাত টাকা ভাড়া বেঁধে দিয়েছে। তার মধ্যে ছাত্রছাত্রী এবং নিত্যযাত্রীদের ছাড় দিতে হয়। ফলে, ডিজেলে বাস চালিয়ে লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে না।
তা বলে কেরোসিন?
১৬/ ২০ রুটের (আরামবাগ থেকে গোতান ভায়া মুথাডাঙা) এক বাস-মালিকের দাবি, “বাস ব্যবসার সঙ্গিন অবস্থার মোকাবিলা করতে এখন আমাদের অনেকেরই কেরোসিনই ভরসা। ৪৮ টাকায় এক লিটার কেরোসিন পাওয়া যায়। তাতে বাস চালিয়ে অল্প হলেও লাভের মুখ দেখা যায়।” ৩০ নম্বর রুটের (আরামবাগ-গোপালগঞ্জ) বাস-মালিক অভয় বিটের কথায়, ‘‘সরকার ভাড়া-নীতি ঠিক রাখলে বাসে কেরোসিন ব্যবহার করতে হতো না। আমরা বাধ্য হয়েই চালাচ্ছি।’’
এত কেরোসিন মিলছে কোথায়?
পরিবহণ কর্মীদের একাংশ মেনে নিয়েছেন, এক শ্রেণির রেশন ডিলার এবং এজেন্টদের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগসাজশের কথা। তাঁরা জানিয়েছেন, কেরোসিনে যাতে বাস চলতে পারে, সেই মতো ইঞ্জিন বদলে নেওয়া হচ্ছে। ওই ইঞ্জিন আনা হচ্ছে পানাগড় এবং কলকাতার ফুলবাগান থেকে। কয়েকদিন পরীক্ষার পরে সেই বাস নামানো হচ্ছে রুটে। কিন্তু ওই বাস বেশিদিন চললে আরামবাগে বায়ু দূষণ মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছতে পারে বলে মনে করছেন পরিবেশপ্রেমীরা। পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “কেরোসিনে বাস চালানোয় দূষণ খুব বেশিমাত্রায় হবে। সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ। পুলিশ এবং পরিবহণ দফতরের সক্রিয় হয়ে এ সব রোখা দরকার। ওইসব বাস বাতিল বলে ভেঙে দিতে হবে। যেমন আমরা আগে অটোর ক্ষেত্রে করেছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy