Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভোটে হেরেও ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই পুরোদমে

উলুবেড়িয়া উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস সভাপতি, বাণীবনের উত্তর পিরপুর গ্রামের নীলাদ্রি চক্রবর্তী নিজেই  ক্যানসার আক্রান্ত।প্রচারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দু’জনে  ক্যানসার নিয়ে মানুষকে সচেতন করেছেন। তামাক বা বিড়ি-সিগারেট খাওয়ার কুফলের কথা বুঝিয়েছেন। প্রচারের দেওয়ালও ভরিয়ে তোলেন সতর্কবার্তায়।

সচেতনতায়: ভোটের সময় দেওয়াল লিখনে ব্যস্ত নীলাদ্রিবাবু। ফাইল চিত্র

সচেতনতায়: ভোটের সময় দেওয়াল লিখনে ব্যস্ত নীলাদ্রিবাবু। ফাইল চিত্র

সুব্রত জানা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৮ ০০:২৩
Share: Save:

ভোটের ময়দানে তাঁরা পরাজিত। তবু লড়াই থেকে সরছেন না। তাঁদের আসল লড়াই ক্যানসারের বিরুদ্ধে।

উলুবেড়িয়া উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস সভাপতি, বাণীবনের উত্তর পিরপুর গ্রামের নীলাদ্রি চক্রবর্তী নিজেই ক্যানসার আক্রান্ত। তিনি এবং স্ত্রী মন্দিরা এ বার পঞ্চায়েত ভোটে দলের টিকিটে লড়েছিলেন। বছর পঁয়তাল্লিশের নীলাদ্রি লড়েন উলুবেড়িয়া-২ পঞ্চায়েত সমিতির ২৩ নম্বর আসনে। মন্দিরা জেলা পরিষদের ১৪ নম্বর আসনে। প্রচারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দু’জনে ক্যানসার নিয়ে মানুষকে সচেতন করেছেন। তামাক বা বিড়ি-সিগারেট খাওয়ার কুফলের কথা বুঝিয়েছেন। প্রচারের দেওয়ালও ভরিয়ে তোলেন সতর্কবার্তায়। দম্পতির সেই প্রচার তাঁদের ভোট-বাক্সে ছাপ ফেলেনি। তবু তাঁরা দমে যাওয়ার মানুষ নন।

মন্দিরা বলছেন, ‘‘নির্বাচন এখন উৎসবের মতো হয়ে গিয়েছে। আমরা সহজে মানুষের কাছে পৌঁছতে ভোটে দাঁড়িয়ে ছিলাম। জিততে না-পারলেও মানুষ আমাদের প্রচার গ্রহণ করেছেন। আমরা ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে যাব।’’ আর নীলাদ্রি বলছেন, ‘‘আগামী দিনে সুযোগ পেলে আবার ভোটে দাঁড়াব। ভোটে দাঁড়ালে সহজে মানুষের কাছে পৌঁছনো যায়। তাতে ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রচারে আরও জোর আসে।’’

আগে বিড়ি-সিগারেট, গুটখা খেতেন নীলাদ্রি। চার বছর আগে মুখে ক্যানসার ধরে পড়ে তাঁর। তারপরে সব ছেড়েছেন। ছোটখাটো ব্যবসা করেন। মুখে সব সময় ‘মাস্ক’ পড়ে থাকেন। চিকিৎসায় জলের মতো টাকা খরচ হচ্ছে। নীলাদ্রির কথায়, ‘‘আমার অবস্থা যাতে আর কারও না-হয়, সেটাই বোঝাচ্ছি গ্রামবাসীদের।’’

শুধু নিজেদের এলাকাতেই নয়, ওই বিধানসভা কেন্দ্রের যেখানে-যেখানে কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছিল, সেখানেই প্রচার করেছেন দম্পতি। ক্যানসার আক্রান্তদের মাসিক পেনশনের ব্যবস্থা করার দাবিও তুলেছেন তাঁরা। নীলাদ্রি বলেন, ‘‘সর্বত্র প্রার্থী দিতে পারিনি। তবে যেখানে যেখানে পেরেছি, সেখানেই আমরা মানুষের স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য প্রচার করেছি। ক্যান্সারে অনেকে অকালে মারা যাচ্ছেন। সংসারগুলো ভেসে যাচ্ছে।’’

ভোট-প্রচারে রাজনীতি যে একেবারে ছিল না, তা নয়। শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ ছিল। কিন্তু তা চড়া মাত্রায় নয়। দম্পতির এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছিল অন্য রাজনৈতিক দলগুলি। ভোট-প্র্রচারে এ রাজ্যে, এমনকী এ দেশেও পরিবেশের কথা, স্বাস্থ্যের কথা তেমন গুরুত্ব পায় না। সেখানে ওই দম্পতির ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রচার নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তথা চিকিৎসক নির্মল মাজি বলেছিলেন, ‘‘আমরা সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ভাবে ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রচার করি। কেউ যদি এ বিষয়ে প্রচার করেন, তাঁদের কাজকে আমরা সমর্থন করি।’’ সিপিএম প্রার্থী গৌর মালিক বলেছিলেন, ‘‘উনি নিজে ক্যানসার আক্রান্ত বলে কষ্টটা বোঝেন। ওঁর প্রচারকে সমর্থন করি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE