Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
হাওড়া

নিষেধ অমান্য, শিশুরা সেই হোমেই

হাওড়া মালিপুকুর সমাজ উন্নয়ন সমিতি কর্তৃপক্ষ চালিত তিনটি হোমে শিশুদের না পাঠানোর নির্দেশিকা জারি হয় পুজোর আগে। কিন্তু রাজ্যের শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের সেই নির্দেশ অগ্রাহ্য করে ফের ওই হোমগুলিতে বাচ্চা পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে হাওড়া শিশু কল্যাণ সমিতির বিরুদ্ধে।

দীক্ষা ভুঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৫ ০০:৪৩
Share: Save:

হাওড়া মালিপুকুর সমাজ উন্নয়ন সমিতি কর্তৃপক্ষ চালিত তিনটি হোমে শিশুদের না পাঠানোর নির্দেশিকা জারি হয় পুজোর আগে। কিন্তু রাজ্যের শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের সেই নির্দেশ অগ্রাহ্য করে ফের ওই হোমগুলিতে বাচ্চা পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে হাওড়া শিশু কল্যাণ সমিতির বিরুদ্ধে।

মালিপুকুর সমাজ উন্নয়ন সমিতি হাওড়ায় জুভেনাইল ও কটেজ হোম ছাড়াও গোন্দলপাড়া সেবা ভারতী নামে ‘স্পেশালাইজ্‌ড অ্যাডপশন এজেন্সি’ (সা) হোম চালায়। শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতর জানায়, বছরখানেক ধরে একাধিক অভিযোগ পেয়ে এবং তদন্তের ভিত্তিতে তারা গত ১৪ অক্টোবর সব জেলা শাসক-সহ শিশু কল্যাণ সমিতিকে চিঠি দিয়ে ওই তিনটি হোমে বাচ্চা পাঠানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু অভিযোগ, ওই নির্দেশিকা অগ্রাহ্য করে গত এক মাস ধরে হাওড়া শিশু কল্যাণ সমিতি হোমগুলিতে শিশুদের পাঠিয়ে চলেছে। রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘‘বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি।’’

শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতর জানায়, ২০১৪ সালে মালিপুকুর সমাজ উন্নয়ন সমিতির আবাসিক হোম জানিয়েছিল, দুর্জয় ভক্তি (ভক্ত) নামে এক বাংলাদেশি কিশোর সেখানে রয়েছে। তার ভিত্তিতে দফতর বাংলাদেশি কিশোরদের বাড়ি ফেরানোর তালিকা তৈরি করে পাঠায় বাংলাদেশ হাই-কমিশনে। বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র দফতর মারফৎ খবর পেয়ে দুর্জয়ের পরিবার ছেলেকে আনতে এ পারে আসেন এবং হোমে যান ছেলের খোঁজে। কিন্তু দুর্জয়কে পাননি। এর পরেই দুর্জয়ের পরিবার শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতরের কাছে অভিযোগ জানালে সরকার গঠিত টাস্ক ফোর্স কমিটি হোম পরিদর্শন করে একাধিক অনিয়মের খোঁজ পায়।

শুধু তাই নয়। শিশু সুরক্ষায় হাইকোর্টের যে মনিটরিং কমিটি আছে, তাদের কাছে জমা পড়া রিপোর্টও বলছে, সমিতির কটেজ, জুভেনাইল ও ‘সা’ হোমে থাকা আবাসিকদের খাবারের মান ‘পশুখাদ্যের’ মানের থেকেও খারাপ। সেখানকার আবাসিকদের চেহারায় অপুষ্টির ছাপ স্পষ্ট। তাদের দীর্ঘ দিন ধরে স্নান বা পরিষ্কার করানো হয় না। অসুস্থ হলে মেলে না সঠিক চিকিৎসাও।

এর মধ্যে ১৩ অগস্ট আনন্দবাজারে দুর্জয়ের খবর প্রকাশিত হলে তা দেখে দুর্জয় শিয়ালদহ স্টেশনের একটি শিশু উদ্ধারকারী সংস্থার মাধ্যমে পত্রিকার সঙ্গে যোগাযোগ করে। সে জানিয়েছিল, মালিপুকুর আবাসিক হোমের অত্যাচারে সেখান থেকে পালিয়ে গিয়েছিল সে। আরও জানায়, হোমে পোকা-সহ খাবার দেওয়া হত। অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হতো না। ফেলে রাখা হতো হোমেই। খালি গায়ে হাফপ্যান্ট ছাড়া আর কোনও পোশাকও মিলত না।

গত এক বছরে একের পর এক এমনই অভিযোগের তদন্ত করে ১৪ অক্টোবর শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতর মালিপুকুর সমাজ উন্নয়ন সমিতির জুভেনাইল ও কটেজ হোমে বাচ্চা না পাঠানোর নির্দেশ দেয়। আরও জানিয়ে দেয়, ওই হোম কর্তৃপক্ষ তাঁদের অধীনে থাকা বাচ্চাদের দত্তকও দিতে পারবেন না। কিন্তু হাওড়া শিশু কল্যাণ সমিতি কর্তৃপক্ষ জানান, ১৪ অক্টোবর ওই নির্দেশিকা জারি হলেও সেই সংক্রান্ত চিঠি এখনও তাদের কাছে পৌঁছয়নি। ফলে গত এক মাসে ওই সমিতির মাধ্যমে যে সব শিশু ওই হোমে গিয়েছে, তারা আদৌ সুরক্ষিত কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে।

বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে হোমের মালিক রফিক মিদ্দাকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। রাতে অন্য এক ব্যক্তি ফোন ধরে কিছু বলতে চাননি। মেলেনি এসএমএসের উত্তরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE