Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দূষণ নিয়ে ক্ষোভ চুঁচুড়ার বাসিন্দাদের, খবর পেয়ে এল দমকল

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গোটা শীতকাল জুড়ে এখানে নাড়া পোড়ান হয়।

দগ্ধ: পুড়ছে ফসলের পড়ে থাকা অংশ। ছবি: সুশান্ত সরকার

দগ্ধ: পুড়ছে ফসলের পড়ে থাকা অংশ। ছবি: সুশান্ত সরকার

প্রকাশ পাল ও তাপস ঘোষ
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৪৬
Share: Save:

ফসল কাটার পরে নাড়া জমিতেই পুড়িয়ে দেওয়ায় দূষণ ছড়ায়। চাষিদের এই প্রবণতায় উদ্বিগ্ন পরিবেশকর্মী এবং কৃষি বিজ্ঞানীরা। সরকারের তরফে নাড়া পোড়া বন্ধে প্রচার চলছে। অথচ চুঁচুড়া ধান্য গবেষণা কেন্দ্রেই নিয়মিত ভাবে নাড়া পোড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকরা অবশ্য অভিযোগ মানেননি। বাইরের লোকজন এই কাজ করে বলে তাঁদের পাল্টা দাবি।

চুঁচুড়া স্টেশনের কাছেই রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ধান্য গবেষণা কেন্দ্র। একই চৌহদ্দিতে অবশ্য আরও কিছু সরকারি দফতর রয়েছে। বিশাল এলাকায় পরীক্ষামূলক ভাবে ধান চাষ করা হয়। উদ্যানপালন দফতরও বিভিন্ন রকমের চাষ করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গোটা শীতকাল জুড়ে এখানে নাড়া পোড়ান হয়। কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী বাতাসে ছড়ায়। ফলে পরিবেশে মারাত্মক দূষণ ছড়ায়। বহু মানুষ এখানে সকাল-বিকেল হাঁটতে আসেন। দূষণে তাঁরা সমস্যায় পড়েন।

দিন কয়েক আগে ওই চৌহদ্দিতে নাড়া পোড়ানোর ছবি স্যোসাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন এক ব্যক্তি। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে সরব হন। দূষণ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। স্থানীয় ফার্মসাইড রোডের বাসিন্দা নিতাই মণ্ডল বলেন, ‘‘ওখানে প্রতিদিন প্রাতঃর্ভ্রমনে যাই। দিন কয়েক আগে দেখলাম, খড়ের গাদায় আগুন ধরানো। ধোঁয়ায় চারদিক ঢেকে গিয়েছে। দূষণ ছড়াচ্ছে। টাটকা বাতাসের জন্য ওখানে যাই। এতে তো বাতাস দূষিত হচ্ছে।’’ শহরের রামমন্দির এলাকার বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা অন্নদি রায় বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমে জেনেছি, নাড়া পোড়ান কতটা ক্ষতিকর। কিন্তু ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের জমিতে প্রায়ই এই জিনিস দেখি। এখানেই এমন চললে বাকী জায়গায় বন্ধ হবে কী করে?’’ একই প্রশ্ন ময়নাডাঙার বাসিন্দা শুভজিৎ দাসেরও।

বুধবার দুপুরে ওই চত্বরে গিয়ে খেতে আগুন জ্বলতে দেখা গিয়েছিল। বৃহস্পতিবারেও একই দৃশ্য চোখে পড়েছে। এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ ওই কেন্দ্রের একটি জায়গায় নাড়া পুড়ছিল। পাশের পেয়ারাবাগান এবং কলাবাগানেও আগুন জ্বলছিল। প্রচুর ধোঁয়া ছড়াচ্ছিল। আগুন এতটাই ছড়ায় যে তা নেভাতে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে আসে।

ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের আধিকারিকরা জানান, ধান কাটার পরে গাছের গোড়ার যে অংশ জমিতে থেকে যায়, তা কোনও পরিস্থিতিতেই পোড়ান হয় না।

তা হলে আগুন লাগায় কারা?

এই প্রশ্নের উত্তরে যুগ্ম কৃষি অধিকর্তা (ধান্য উন্নয়ন) মাধব ধাড়া বলেন, ‘‘বহিরাগতরা এখানে ঢুকে দুষ্কর্ম করে। তারাই এই কাজ করে।’’ আধিকারিকদের অভিযোগ, বাইরের লোকজন অবাধে এই কেন্দ্রে ঢুকে চুরি করে। লাইট ভেঙে দেয়। এই সব নিয়ে তাঁরা পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছেন। সেই কারণে রাগে দুষ্কৃতীরা এই কাণ্ড করে। মাধববাবু বলেন, ‘‘আমরা তো নাড়া পোড়ানোর ক্ষতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। আমরা কেন এই ভুল করব!’’

এ দিন যে কলাবাগান এবং পেয়ারাবাগানে আগুন লেগেছিল, সেই জমি উদ্যানপালন দফতরের। দফতরের জেলা আধিকারিক মৌটুসি ধর বলেন, ‘‘কেন্দ্রটি ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের অধীনে। আমাদের জায়গায় বর্ষায় ঘাস হয়ে যায়। সেই ঘাস পরিস্কারের কাজ চলছে। আজ পাশের জমির আগুন আমাদের পেয়ারা এবং কলাবাগানে ছড়ায়। সঙ্গে সঙ্গে দমকলে খবর দিই। আমাদের আগুন জ্বালানোর কোনও প্রয়োজন হয় না।’’

আধিকারিকরা যাই বলুন, এ দিন আগুনের ছবি তুলতে গেলে সেখানে উপস্থিত লোকজন নিষেধ করেন। ওই কেন্দ্রেরই এক কর্মী পরে বলেন, ‘‘খড় ডাঁই করে রাখলে তাতে সাপ ঢুকে থাকে। পরিষ্কারের সময় বিষধর সাপের ছোবল খাওয়ার ভয় থাকে। তাই মাঝেমধ্যে ওই খড়ে আগুন জ্বালিয়ে দিই।’’

সর্প বিশারদ বিশাল সাঁতরা বলেন, ‘‘সাপ চাষির বন্ধু। ওরা জমিতে থাকা ইঁদুর খেয়ে ফেলে। কিন্তু নাড়া পোড়ার আগুনে অনেক সাপ মারা পড়ে। শুধু সাপ নয়, উপকারী বহু কীটপতঙ্গও বিপন্ন হয়। তাই কোনও ভাবেই জমিতে আগুন দেওয়া উচিত নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chinsurah Stubble Burning Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE