মুহূর্ত: উলুবেড়িয়ার একটি সার্কাসে। ছবি: সুব্রত জানা
বাঘ, সিংহ, হাতি উধাও হতেই তারা সঙ্কটে পড়েছিলেন। এ বার জিএসটি-র জেরে সেই সঙ্কট বেড়েছে বলে তাঁদের দাবি।কয়েকটি কুকুর, তোতাপাখি আর ঘোড়া দিয়ে খেলা চলানো গেলেও উপরি রোজগার কী ভাবে হবে, তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় রাজ্যের সার্কাস দলগুলির কর্তারা।
বন্যপ্রাণীর খেলা বন্ধ হওয়ার পরে গত কয়েক বছর ধরেই পুজোর বাজার ধরতে বেরিয়ে পড়ছিলেন তাঁরা। এ বারও তার ব্যতিক্রম হল না। ষষ্ঠী থেকে একটি সার্কাসের তাঁবু পড়েছে হাওড়ার পাঁচলায়। আরও কয়েকটির রাজ্যের আরও নানা প্রান্তে।
পাঁচলায় যে সার্কাসের তাঁবু পড়েছে, তার ম্যানেজার শেখ রবিয়াল হক বলেন, ‘‘হাজার হাজার মানুষ পুজো দেখতে বেরোন। তাঁদের একটা অংশ যাতে সাঁকাসের তাঁবুতে ঢোকেন, সেই চেষ্টার ত্রুটি রাখিনি। পুজোর ক’দিন ভাল ভিড় হয়েছিল। দেখা যাক, উৎসবের মরসুমের বাকি দিনগুলো কেমন কাটে!’’
এক সময়ে শীত মানেই ছিল সার্কাস। তার প্রধান আকর্ষণ ছিল বাঘ, সিংহ, হাতি, জলহস্তীর মতো বন্যপ্রাণীদের খেলা। ২০০০ সালের গোড়া থেকে সার্কাসে বন্যপ্রাণীদের ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়ে যায়। কিছু কিছু দল তারপরেও হাতি নিয়ে খেলা দেখাত। ২০১৪ সালে এনডিএ সরকার এসে হাতির ব্যবহারও নিষিদ্ধ করে দেয়। ফলে, গভীর সঙ্কটে পড়ে সার্কাসের দলগুলি। গত বছরে সার্কাসের টিকিটেও আরোপ করা হয় জিএসটি। ফলে, সঙ্কট গভীরতর হয় বলে সার্কাস-কর্মীদের দাবি।
বন্যপ্রাণীর খেলা নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই অনেক সার্কাসের দর্শকসংখ্যা কমতে থাকে। গত বছর জিএসটি চালুর হওয়ার পর থেকে লভ্যাংশও কমতে থাকে বলে সার্কাস-কর্মীরা জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, সঙ্কট এতটাই, ২০০০ সালে এ রাজ্যে যেখানে ১২টি সার্কাস দল ছিল, এখন তা কমে হয়েছে চারটি। তারাও ধুঁকছে। এখন বছরভর শো চলে। এক-একটি সার্কাসে গড়ে একটি শোয়ে ৩০০০ দর্শক ধরে। ৪০ শতাংশ আসন ভরলেই সেই শো-কে সফল বলে ধরে নেন সার্কাস-কর্তারা।
কিন্তু সেই সংখ্যক দর্শকও হয় না বলে দাবি বিভিন্ন সার্কাস কর্তৃপক্ষের। তাঁদের বক্তব্য, বন্যপ্রাণীর খেলা নিষিদ্ধ হওয়ায় তাঁদের বারের খেলা, জিমন্যাস্টিকস প্রভৃতির উপরে জোর দিতে হয়েছে। বিদেশ থেকেও কলাকুশলী আনতে হচ্ছে। ফলে, দল চালানোর খরচ বাড়ছে। এই অবস্থায় সরকারি হস্তক্ষেপেরও দাবি তুলেছেন বিভিন্ন সার্কাস কর্তৃপক্ষ।
শেখ রবিয়াল বলেন, ‘‘সার্কাসের সঙ্গে শুধু যে বাঙালিদের আবেগ জড়িয়ে আছে তাই নয়, এক-একটি দলের অন্তত দেড়শো জনের রুটি-রুজি নির্ভর করে। ফলে, কোনও দল চট করে তুলে দেওয়া যায় না। কিন্তু মালিকেরা আর কত লোকসান সহ্য করবেন? তাই অনেকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও সার্কাসের তাঁবু গোটাচ্ছেন।’’
তবুও ‘আশায় বাঁচে চাষা’। যদি ‘অচ্ছে দিন’ আসে, সেই আশায় গুটিকয় মালিক সার্কাসের দল চালাচ্ছেন। রবিয়ালের কথায়, ‘‘প্রায়ই তো ট্রেনে কাটা পড়ে হাতি মারা যাচ্ছে। আমাদের যদি অন্তত হাতি রাখার অনুমতিও দেওয়া যায়! কিছু হাতির ভরণপোষণ তো আমরা করতে পারি নিজেদের স্বার্থে। কেন্দ্র যদি কোনও দিন অনুমতি দেয়, সেই আশাতে আছি। বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে মালিকেরা কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy