Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পাশে সহপাঠীরা, যাতায়াতের কষ্ট লাঘব প্রতিবন্ধীর

রাতুলদের বাড়ি স্কুল থেকে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে, কেলেপাড়া গ্রামে। মাসখানেক আগের এক বিকেলে স্কুলে দশম শ্রেণির বাংলার ক্লাস চলছিল। তখন পঞ্চম শ্রেণির ছুটি হয়েছে।

উপহার: ট্রাই-সাইকেলে রাতুল।

উপহার: ট্রাই-সাইকেলে রাতুল।

পীযূষ নন্দী
পুরশুড়া শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৯ ০২:৫৯
Share: Save:

সহপাঠীর কাঁধে ভর দিয়েও ভাল করে এগোতে পারে না ছেলেটি। দু’পায়ের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে পুরশুড়ার সোঁয়ালুক আজাদ হাইস্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রাতুল মালিককে ওই ভাবে যাতায়াত করতে দেখে কষ্ট পাচ্ছিল উঁচু ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা। চাঁদা তুলে ট্রাই-সাইকেল কিনে তারা শনিবার রাতুলের হাতে তুলে দিল। এই উদ্যোগে তাদের পাশে দাঁড়ালেন শিক্ষকেরা।

রাতুলদের বাড়ি স্কুল থেকে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে, কেলেপাড়া গ্রামে। মাসখানেক আগের এক বিকেলে স্কুলে দশম শ্রেণির বাংলার ক্লাস চলছিল। তখন পঞ্চম শ্রেণির ছুটি হয়েছে। ওই ক্লাসের পড়ুয়ারা হই-হুল্লোড় করতে করতে বাড়ি ফিরছিল। দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা শ্রেণিকক্ষের জানলা থেকে দেখতে পায়, রাতুল এক সহপাঠীর কাঁধ ধরে কোনও মতে এগোচ্ছে। একবার টাল সামলাতে না পেরে সে পড়েও যায়। দৃশ্যটি বাংলার শিক্ষক বিনায়ক ঘোষের নজরে এনে ছাত্রছাত্রীরা ওই দিনই সিদ্ধান্ত নেয়, রাতুলকে ট্রাই-সাইকেল কিনে দেবে। বিনায়কবাবু বলেন, “ওই সময় নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমার স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা মানবিকতার এক নজির গড়ল।’’

প্রধান শিক্ষক উৎপলকুমার পণ্ডিত বলেন, “পড়ুয়াদের এই উদ্যোগে আমি গর্বিত। ওদের বলেছিলাম, চাঁদার পরে আরও টাকা লাগলে আমি দিয়ে দেব। শিক্ষকেরাও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এগিয়ে আসেন। গরিব পরিবারের ছেলেটির ছোট থেকেই পায়ে সমস্যা। সেই সমস্যা এ বার কিছুটা লাঘব হবে।’’

উপহার পেয়ে খুশি রাতুল। সে বলে, ‘‘আর কোনও কষ্ট হবে না। স্কুলের দাদা-দিদি আর স্যারদের দেওয়া ট্রাই-সাইকেলে যাতায়াত করতে পারব। পড়াশোনাও ভাল করে করব।” রাতুলের বাবা মেঘনাদবাবু দিনমজুরি করেন। এ দিন স্কুলের তৃতীয় পিরিয়ডের পরে ওই ট্রাই-সাইকেল প্রদান অনুষ্ঠানে তাঁকেও ডাকা হয়েছিল। ছেলেকে ওই গাড়ি পেতে দেখে তাঁর আনন্দ ধরে না। রাতুলের জন্য চাঁদা উঠেছিল ১০ হাজার টাকা। ট্রাই-সাইকেলের দাম মিটিয়ে বাকি টাকা মেঘনাদবাবুর হাতে তুলে দেওয়া হয়। মেঘনাদবাবু বলেন, ‘‘ছেলে নিজের জেদেই স্কুলে আসে। কিন্তু প্রতিবন্ধকতার জন্য কতদূর পড়াশোনা চালাতে পারবে, তা নিয়ে আমার সন্দেহ ছিল। স্কুল যে ভাবে ওর পাশে দাঁড়াল, তাতে আমার সব দুশ্চিন্তা মুছে গেল।’’

আর এই উদ্যোগের নেপথ্য যারা, দশম শ্রেণির সেই আকাশ ঘোষ, সমাপ্তি পানরা বলে, ‘‘রাতুলকে বন্ধুর কাঁধে ঝুলে স্কুলে যাতায়াত করতে দেখে কান্না পেত। এ বার ও নিজেই যাতায়াত করতে পারবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Physically Challenged Student Tricycle Classmates
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE