Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বন্ধ চটকলের ছাদ ভেঙে মৃত্যু ৩ জনের

পুলিশের অনুমান, বন্ধ ওই চটকলে যন্ত্রাংশ চুরির জন্যই ওই চার জন গুদামে ঢোকার চেষ্টা করছিল। এর আগেও এই চটকল থেকে বহু জিনিস চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ।

অকুস্থল: এখানেই চাঙড় ভেঙে মৃত্যু হয় তিনজনের।

অকুস্থল: এখানেই চাঙড় ভেঙে মৃত্যু হয় তিনজনের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাঁকরাইল শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৪০
Share: Save:

অনেক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে সাঁকরাইলের রাজগঞ্জের ন্যাশনাল জুটমিল। দেড় বছর আগে সেখানেই ‘তিন’ সিনেমার শ্যুটিং করতে এসেছিলেন অমিতাভ বচ্চন। সেই চটকলের ভিতরেই ছাদের চাঙ়ড় ভেঙে মারা গেল তিন যুবক। বুধবার সকালে তাদের দেহ উদ্ধার হয়। আহত হয়েছে একজন।

পুলিশের অনুমান, বন্ধ ওই চটকলে যন্ত্রাংশ চুরির জন্যই ওই চার জন গুদামে ঢোকার চেষ্টা করছিল। এর আগেও এই চটকল থেকে বহু জিনিস চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম চন্দন চৌধুরী (২৫) শম্ভু বিসওয়াল (৩১) ও শেখ ভোদো (৩০)। আহতের নাম অজয় চৌধুরী। তাকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক। চার জনের বাড়িই রাজগঞ্জ এলাকায়। ওই চার জন মঙ্গলবার রাতে বাড়ি না ফেরায় বাড়ির লোক বুধবার ভোর থেকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। চটকলের একটি গুদামঘরের ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, মেঝেতে পড়ে রয়েছে প্রায় ২০ ফুট লম্বা ও ১০ ফুট চওড়া ছাদের ভাঙা চাঙড়। তার তলায় চার জন চাপা প়়ড়ে রয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তিন জনের মৃত্যু হয়।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, গুদামের মেঝেতে পড়ে রয়েছে চাপ চাপ রক্ত। নিরাপত্তা রক্ষী ও পুলিশের অনুমান, মঙ্গলবার গভীর রাতে চটকলের বাইরে থেকে গাছের ডাল বেয়ে ওই চার যুবক গুদামের ছাদে উঠেছিল। তখনই জীর্ণ সেই ছাদের একাংশ ভেঙে যায়। চাপা পড়ে যান চার জন। চটকলের আশপাশে জনবসতি না থাকায় বিষয়টি প্রথমে বোঝা যায়নি।

যে তিন জন মারা গিয়েছে তাদের মধ্যে শম্ভু আগে স্থানীয় আলমপুরের একটি হোটেলে কাজ করত। সম্প্রতি সেই কাজ ছেড়ে দিয়েছিল। তার পাঁচ বছরের এক মেয়ে রয়েছে। শম্ভুর মা সন্ধ্যাদেবী বলেন, ‘‘ছেলে রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। চটকলের গুদামে কেন গিয়েছিল জানি না।’’ চন্দন ধুলাগড়িতে একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করত। তার দাদা সুনীলবাবুরও দাবি, ‘‘ভাই কেন চটকলের গুদামে গিয়েছিল বলতে পারব না।’’ ভোদো ওই এলাকাতেই একা বাড়ি ভাড়া করে থাকত। সে পেশায় ফেরিওয়ালা ছিল।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রাজগঞ্জের এই চটকলে একসময়ে প্রায় ২২ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। ধীরে ধীরে সেটি রুগ্ন হয়ে যায়। ২০০২ সালে সব কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর দিয়ে চটকলটি বন্ধ করে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। বিশাল ওই চটকলটি দেখভালের জন্য এখন ২৭ জন নিরাপত্তারক্ষী রয়েছেন। চত্বরটি এখন ঘন জঙ্গলে ঢেকে গিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে যে গুদামে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেই রকম প্রায় ৫০টি গুদামঘর সেখানে রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, চটকলের গুদামঘরগুলি সমাজবিরোধীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। চটকলের ভিতরের ভাঙা লোহা, কাঠ, যন্ত্রাংশ প্রায়ই চুরি হয়। স্থানীয় যুবকদের একাংশই তার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ। চটকলের বিভিন্ন জায়গায় পাঁচিল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। যদিও পুলিশের দাবি, চুরি ঠেকাতে নিয়মিত টহলদারি করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, অবিলম্বে চটকলটির জীর্ণ গুদাম এবং কারখানা ভেঙে দিয়ে নতুন শিল্পতালুক গড়ে তোলা হোক।

ছবি: সুব্রত জানা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jute mill Roof Dead
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE