Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
দুর্নীতির নালিশ তারকেশ্বর পুরসভায়

চাকরি ছাড়লেন দুই আধিকারিক

দলের সংখ্যা গরিষ্ঠ কাউন্সিলরদের অন্ধকারে রেখে পুরসভার নানা আর্থিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। আর সেটা পুরসভার আর্থিক ভিত দুর্বল করছে।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
তারকেশ্বর শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৭ ০২:০৬
Share: Save:

চাকরি ছাড়ছেন তারকেশ্বর পুরসভার দুই আধিকারিক।

তৃণমূল কাউন্সিলরদের একাংশের অভিযোগ, পুরসভার ক্রমাগত চাপের মুখে অনৈতিক কাজে রাজি না হওয়ায় চাকরি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন পুরসভার এফও (ফাইনানসিয়াল অফিসার) অরিন্দম দত্ত এবং আইটি কো-অর্ডিনেটর বিট্টু বাগুই। পুরপ্রধান স্বপন সামন্ত অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।

তারকেশ্বর পুরসভার আর্থিক অবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ তুলছেন দলের কাউন্সিলরা। তাঁদের অভিযোগ, দলের সংখ্যা গরিষ্ঠ কাউন্সিলরদের অন্ধকারে রেখে পুরসভার নানা আর্থিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। আর সেটা পুরসভার আর্থিক ভিত দুর্বল করছে। নজিরবিহীনভাবে এক খাতের টাকা অন্য খাতে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু সেই খাতের টাকা ফেরানোর কী সংস্থান হবে, তার কোনও দিশা নেই। পুরসভার নিজস্ব তহবিলের কী অবস্থা, তা কেউ জানে না বলেও অভিযোগ। আর এই কাজে পুরসভার কয়েকজন আধিকারিক জড়িত বলেও অভিযোগ উঠেছে।

পুরসভা সূত্রে খবর, পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা দীর্ঘদিন পেনশন পাননি। পুরসভার কর্মীদের নিজস্ব সমবায়ের (কো-অপারেটিভের) ১৫ লক্ষ টাকা বহুদিন জমা পড়েনি। সম্প্রতি পুরসভা বাসস্ট্যান্ডে ১৪টি দোকানঘর বিক্রি করে। সেই নিলামের পদ্ধতি নিয়েও অভিযোগ উঠেছিল। নিলামের পুরো টাকাও পুরসভায় জমা পড়েনি বলে অভিযোগ।

পুরসভা সরকারি প্রকল্পে গরিবদের বাড়ি তৈরির খাতে ৩৫ লক্ষ টাকা পায়। সেই টাকা অন্য খাতে খরচ হলেও তা ফিরে আসেনি। নিয়ম অনুয়ায়ী পুরসভার সরকারি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট করার কথা। কিন্তু সেই নিয়মও মানা হয়নি। বেসরকারি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এছাড়াও আরও নানা আর্থ সংক্রান্ত অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি তারকেশ্বরে জেলার প্রশাসনিক বৈঠক হয়। সেই বৈঠক খাতে মোট ৩০ লক্ষ টাকা খরচ করে পুরসভা। সেই টাকাও ফেরত আসেনি। আদতে প্রত্যেক জায়গায় ওই খরচের দায়িত্বে থাকে জেলা প্রশাসন। কিন্তু তারকেশ্বরে পুরসভা নিজেই ওই দায়িত্ব নিয়েছে কি না তা কেউ জানে না। আর যদি তা নিয়েও থাকে তার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দলের এক কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘পুরসভার একে নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর দশা। ওই সভার দায়িত্ব আমরা নেব কেন?’’

এইসব নানা জটিলতার মাঝেই বিপদ বুঝে অরিন্দম দত্ত এবং বিট্টু বাগুই চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ। তাঁরা পুরসভার কোনও কাজে সই করতে চাইছেন না বলেও অভিযোগ। মাস কয়েক আগে পুরসভা এলাকায় একটি সমীক্ষার কাজ করানো হয়। যে সংস্থাটি ওই কাজ করেছিল, তাঁদের নামে যে অঙ্কের বিলের অনুমোদনের কথা বলা হচ্ছিল তাতে বিট্টুবাবু রাজি হননি বলে খবর।

এই বিষয়ে অরিন্দমবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘আমি কোনও বির্তকিত বিষয়ে কিছু বলব না। তবে আমি অন্য একটা জায়গায় চাকরিতে যোগ দিয়েছি।’’ বিট্টুবাবুকে অবশ্য ফোনে পাওয়া যায়নি। পুরপ্রধান স্বপন সামন্ত অবশ্য বলেন, ‘‘ওঁরা দু’জনেই ভাল চাকরি পেয়েছেন। তাই চাকরি ছেড়েছেন। এর বেশি কিছু নয়। যাঁরা অন্য কিছু বলছেন, তাঁদের প্রশ্ন করুন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tarakeswar Municipality Officials corruption
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE