এমন সেতু দিয়েই নিত্য যাতায়াত। নিজস্ব চিত্র।
ফাঁকা হয়ে গিয়েছে সেতুর পাটাতনের ফলক, কোথাও সিমেন্টের স্ল্যাবে গর্ত তৈরি হয়েছে, কোনটি আবার ভাঙা। নীচের স্তম্ভগুলিতেও স্পষ্ট দেখা যায় ফাটল, কোথাও বেরিয়ে লোহার র়ড। আরামবাগের দ্বারকেশ্বরের উপর নড়বড়ে এই ‘রামকৃষ্ণ সেতু’র উপর দিয়েই যাতায়াত করে দক্ষিণবঙ্গের অনেকগুলি জেলার বাস, মালবাহী গাড়ি-সহ হাজার যানবাহন।
কিছুদিন আগেই অবশ্য শুরু হয়েছে সেতুটি সংস্কারের কাজ। মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পর বুধবার তড়িঘড়ি রামকৃষ্ণ সেতুর উপর দিয়ে মালবাহী গাড়ি যাতায়াত বন্ধের বিজ্ঞপ্তি জারির জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে সুপারিশ করল পূর্ত দফতর।
এ দিন দুপুরে সেতু সংস্কারের কাজ খতিয়ে দেখেন জেলা পূর্ত দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রণব বিশ্বাস। তবে তাঁর দাবি, মাঝেরহাটের ঘটনার সঙ্গে তাঁর পরিদর্শনের কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, “পুরোন সেতুটি সংস্কারের কাজ অনেক আগেই শুরু করেছি। সেই কাজ চলছে। কাজের সুবিধার জন্য কিছু দিন মালবাহী গাড়ি চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। নতুন বিকল্প সেতুর জন্য সমীক্ষক দল আসবে দু’একদিনের মধ্যেই।’’
মহকুমা পূর্ত দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার নিরঞ্জন ভড় বলেন, “জীর্ণ সেতু। অথচ এতই গাড়ির চাপ যে সেতু বন্ধ রেখে সংস্কার করার উপায় নেই। সেতুটি সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত অন্তত একমাস মালবাহী ভারী গাড়ি যাতায়াত বন্ধ রাখার সুপারিশ করেছি আমরা।”
নিরঞ্জনবাবু জানান, সেতুর বয়স এবং ভারবহন ক্ষমতা অনুপাতে গাড়ির সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। তাই সংস্কার করেও যে তেমন কোনও লাভ হবে এমন আশ্বাস দিতে পারেননি তিনি। তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয় মানুষের দাবি মেনে বিকল্প সেতু নির্মাণ নিয়ে সরকারি স্তরে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’’
পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রামকৃষ্ণ সেতু ১৯৬৫ সালে তৈরি। লম্বায় ৩২৫ মিটার এবং ৭ মিটার চওড়া। দক্ষিণবঙ্গের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুর জেলা ও ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে কলকাতা, তারকেশ্বর এবং বর্ধমান যোগাযোগ হয় এই সেতুর উপর দিয়েই। প্রতিদিন প্রায় আট হাজারের উপর লরি যাতায়াত করে। এর বাইরেও প্রায় ১০ হাজার বেশি গাড়ির ধকল সইতে হয় সেতুটিকে।
দফতরের এক কর্তা বলেন, সেতুর সাধারণত আয়ুষ্কাল ধরা হয় ৩৫-৪০ বছর। ধারাবাহিক সংস্কার করলে বড় জোড় ৫০ বছর অটুট থাকে। সে ক্ষেত্রে রামকৃষ্ণ সেতুর বয়স হল ৫৩ বছর। ফলে জরা ধরেছে বটে।
ফলে কলকাতার দুর্ঘটনার পর রামকৃষ্ণ সেতুর ভগ্নদশা নিয়ে মহকুমাতে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বিকল্প সেতুর দাবিতে সরব হয়েছেন মানুষ। গোঘাট বিধায়ক মানস মজুমদার বলেন, “সেতুর ভবিষ্যৎ আশঙ্কা করে আমরা ২০১৭ সাল থেকে মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য পূর্ত দফতরে বিকল্প সেতুর দাবি করেছি। সেই দাবির যৌক্তিতা খতিয়ে দেখাও হচ্ছে রাজ্য স্তরে। আমরা চাই কোনও দুর্ঘটনার আগে বিকল্প সেতুর কাজ ত্বরান্বিত করা হোক।” দ্রুত বিকল্প সেতুর প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন আরামবাগ বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy