Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
মমতার ধমকে কাজ হবে, আশায় কর্মীরা

অসীমার বিরুদ্ধে সোচ্চার অনেকেই

তাঁর ছড়ি ঘোরানো এ বার কমবে, মনে করছেন গ্রামীণ হুগলির তৃণমূল নেতা ও কর্মী-সমর্থকদের একটা বড় অংশ। তিনি অসীমা পাত্র

অসীমা পাত্র।

অসীমা পাত্র।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৯ ০০:৫২
Share: Save:

তাঁর ছড়ি ঘোরানো এ বার কমবে, মনে করছেন গ্রামীণ হুগলির তৃণমূল নেতা ও কর্মী-সমর্থকদের একটা বড় অংশ।
তিনি অসীমা পাত্র। ধনেখালির বিধায়ক এবং মন্ত্রী। লোকসভা ভোটের আগে পর্যন্ত ছিলেন গ্রামীণ হুগলির দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেত্রী। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ একাধিক। চলছে মামলাও। তবু এতদিন অসীমা ছিলেন নিজের মেজাজেই। হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে দলের বিপর্যয়ের পরে ছবিটা বদলাল।
গত সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বলে অসীমাকে ধমকান, ‘‘যাঁরা ভোটে আমাদের হয়ে কাজ করেছেন, তাঁদের তুমি পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিচ্ছ?’’ এ সব দেখেশুনে ধনেখালি তো বটেই, জেলার অন্যত্রও তৃণমূল নেতাকর্মীদের একটা বড় অংশ সম্তোষ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই মনে করছেন, দেরিতে ঘুম ভাঙল শীর্ষ নেতৃত্বের। আর এই ফাঁকে অসীমার বিরুদ্ধে পুরনো অভিযোগগুলি আরও একবার সামনে চলে এসেছে।
অসীমার বিরুদ্ধে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে মদত দেওয়ার অভিযোগ বহু পুরনো। বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে তিনি মিথ্যে মামলা করেছেন, এই অভিযোগও উঠেছে। ধনেখালির সমসপুর-১ পঞ্চায়েতের প্রাক্তন তৃণমূল সদস্যা বেবি ধাড়া তাঁর পুরনো ক্ষোভ আবার সামনে এনেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার বাপ-ঠাকুরদার ১০০ বছরের ভিটে থেকে প্রোমোটার আর পুলিশ দিয়ে অসীমা আমাকে উৎখাত করেছেন। ওই জায়গায় আবাসন বানিয়ে টাকা রোজগার হচ্ছে। আর আমি বে-ঘর হয়েছি।’’
গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট বিলির দায়িত্বে ছিলেন অসীমা। কিন্তু তার আগের দফায় সমসপুর-১ পঞ্চায়েতে দলের জয়ী সদস্য বেবিকে টিকিট দেওয়া হয়নি। কয়েক বছর আগে থেকেই অসীমা ও তাঁর দলবল বেবির বাড়ি দখলের চেষ্টা করছিলেন বলে অভিযোগ। বেবি বলেন, ‘‘আমি মমতাদিকে লিখিত ভাবে পুরো ঘটনা জানিয়েছিলাম। পুলিশ প্রশাসনকে ফোন করে নিজে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। দলের কর্মী হলেও আমার ভিটেটাই লুট হয়ে গেল। বিচার পেলাম না। এখন আত্মীয়ের বাড়িতে থাকি।’’
সামনে এসেছে ছ’বছর আগে ধনেখালিতেই পুলিশ লক-আপে তৃণমূল নেতা কাজি নাসিরুদ্দিনের অপমৃত্যুর ঘটনাও। অভিযোগ ওঠে, অসীমার বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা নাসিরুদ্দিনকে বিধায়কের প্ররোচনাতেই পিটিয়ে মারে পুলিশ। সেই মামলার সিবিআই তদন্ত চলছে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘মনে হয় না সিবিআই সঠিক তদন্ত করেছে। চার্জশিটে অসীমা পাত্র ও তাঁর অনুগামী সৌমেন ঘোষ ওরফে পটলের নাম নেই। আমরা হাইকোর্টে ফের যথাযথ সিবিআই তদন্তের আবেদন করেছি।’’ ধনেখালির কংগ্রেস নেতা বিভাস কুমার নিহত নাসিরুদ্দিনের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেই সময়। সেই জন্য তাঁর হেনস্থাও কম হয়নি।
বিভাসবাবু বলেন, ‘‘ওই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমাকে অনেক ‘পুরস্কার’ দিয়েছেন অসীমাদেবী। আমাকে বাড়িছাড়া হতে হয়েছে। পুলিশ দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তবে সঠিক বিচারের জন্য যতদূর যেতে হয় যাব। ফের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং সিবিআইয়ের কাছে ওই মামলার তদন্তের জন্য আবেদন করেছি।’’
গত পঞ্চায়েত ভোটে গ্রামীণ হুগলিতে একের পর এক পঞ্চায়েত বিরোধীশূন্য হয়েছিল। বহু পঞ্চায়েতে অসীমার নেতৃত্বে ভোটারদের ভোট দিতে দেওয়া হয়নি, এ অভিযোগও উঠেছিল। পান্ডুয়ায় আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হয়েছিল ভোটের দিন। অসীমা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সব পরিচালনা করেন বলে অভিযোগ তোলে বামেরা। জেলা সিপিএমের সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে কী ভাবে হুগলিতে ভোট করানো হয়েছে তা সকলের জানা। পান্ডুয়া, ধনেখালিতে শাসকদলের এক বিধায়কের ভূমিকায় সব বিরোধী দলই সরব হয়। মানুষ হুগলি লোকসভায় তার উত্তর দিয়ে দিয়েছেন।’’
পুরনো অভিযোগগুলি নিয়ে অসীমা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত বা লোকসভা ভোট পরিচালনার ক্ষেত্রে দলের ভূমিকা নিয়ে সাধারণ মানুষ আমাকে কোনও অভিযোগ জানাননি। দলের কর্মীদের সঙ্গে বুথ স্তরে আলোচনা করেই সব কিছু ঠিক করেছি। আগামী দিনে দলের বিধায়কদের নিয়ে বসে হুগলিতে হারের প্রসঙ্গে পর্যালোচনা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Politics TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE