মঞ্চ: চলছে সই সংগ্রহ। ছবি: মোহন দাস
বিষ্ণুপুর-তারকেশ্বর রেলপথ নির্মাণের পথে গোঘাটের ভাবাদিঘিতে সমস্যা মেটেনি। এ ব্যাপারে সরকারের তরফে আপাতত তেমন কোনও উদ্যোগও নেই। তবে মঙ্গলবার সকাল থেকে ভাবাদিঘিতে প্রস্তাবিত রেলপথ নির্মাণের পক্ষে ও বিপক্ষে গণস্বাক্ষর সংগ্রহে নামল গোঘাট ২ ব্লক যুব তৃণমূল।
কামারপুকুর চটি দুর্গা মন্দিরের সামনে ব্যানার টাঙিয়ে শিবির শুরু হয় সকাল থেকেই। মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেওয়া ব্যানারে লেখা আছে, ‘লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে গোঘাট থেকে বিষ্ণুপুর রেল লাইনের ভাবাদিঘির ৫২ বিঘা অংশের মাত্র ৯ বিঘা (উত্তর পাড়) অধিগ্রহণের বিনিময়ে দ্বিগুণ পরিমাণ পুকুর খনন-সহ কেন্দ্র ও রাজ্যের একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে অবিলম্বে কাজ শুরু এবং সমাপ্তির দাবিতে গণস্বাক্ষর অভিযান পক্ষে ও বিপক্ষে।’ এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রস্তাবিত পথে রেললাইন পাতার পক্ষে সই পড়েছে প্রায় ১২০০। তবে বিপক্ষে একটিও সই পড়েনি।
ভাবাদিঘির গ্রামের দিঘিবাঁচাও আন্দোলনের নেতা স্বপন রায় অবশ্য বলেন, ‘‘দিঘির উত্তরপাড় দিয়ে রেলপথ করার জন্যই তো আমরা লড়ছি। যুব তৃণমূলকে ধন্যবাদ, তাঁরা আমাদের হয়েই লড়ছেন। আমরা সকলেই রেলের পক্ষেই সই করতে চাই।’’ কিন্তু ব্যানারে মিথ্যা লিখে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে বলে তাঁর দাবি। তিনি বলেন, ‘‘উত্তরপাড় বিশাল চওড়া। আমাদের দাবি, রেল যাক ওই পাড়ের উপর দিয়ে। কিন্তু প্রস্তাবিত রেলপথটি দিঘির জলপথ দিয়েই যাচ্ছে। সেটা ব্যানারে স্পষ্ট করে না লিখে মানুষকে আমাদের উপর খেপানো হচ্ছে।’’
আরামবাগ, কামারপকুর, জয়রামবাটির উপর দিয়ে রেলপথের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। গনিখান রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বিষ্ণুপুর-তারকেশ্বর রেলপথের জরিপের কাজ শুরু হয়। পরে এনডিএ সরকারের সময়ে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তারকেশ্বর থেকে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর— এই ৮২.৫ কিলোমিটার রেল প্রকল্পের শিল্যন্যাস করেন। পরে ফের ইউপিএ সরকারের রেলমন্ত্রী হওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকল্পটিতে গুরুত্ব দেন। অবশেষে ২০১২ সালের ৪ জুন আরামবাগ থেকে তারকেশ্বর তথা হাওড়া পর্যন্ত রেল চলাচল উদ্বোধন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে গোঘাট পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণ হয়ে গিয়েছে।
পরবর্তীতে কামারপুকুর পর্যন্ত রেলপথের মাটির কাজও শেষ। শুধু ভাবাদিঘির অংশটি বাকি। গ্রামের মানুষেরা তথা দিঘির অংশীদাররা দিঘির জলপর বুজিয়ে দিঘিকে দ্বিখণ্ডিত করে রেলপথে আপত্তি করে আন্দোলন শুরু করেন। প্রায় ৫২ বিঘার বেশি এলাকা নিয়ে ভাবাদিঘি। দিঘির অংশীদার ৫২টি পরিবার ভেঙে এখন ২৬৮ জন অংশীদার। ৩ একর জলপথ রেলপথের জন্য অধিগ্রহণ হয়েছে। ২৬৮ জন অংশীদারের মধ্যে ১৭৭ জন ক্ষতিপূরণ নিয়েছেন। তাঁদের ভুল বুঝিয়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি দিঘিবাঁচাও কমিটির।
এ দিনের গণস্বাক্ষর শিবিরের আয়োজক গোঘাট ২ ব্লক তৃণমূল যুব সভাপতি সৈয়দ মকবুল হোসেন অবশ্য বলেন, ‘‘প্রস্তাবিত রেলপথটি দিঘির উত্তরপাড় ঘেঁসে। তার মানেই তো উত্তরপাড়।’’
শুধু ভাবাদিঘি নয়, বিষ্ণপুর-তারকেশ্বর রেলপথের আরও একটি জট রয়েছে গোঘাটেরই পশ্চিম অমরপুরে। ভাবাদিঘি থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে। ভাবাদিঘিতে যেমন ‘দিঘি বাঁচাও কমিটি’ করে আন্দোলন চলছে। তেমনি পশ্চিম অমরপুরে ‘রেল চালাও, গ্রাম বাঁচাও’ কমিটি গড়ে আন্দোলন চলছে। এখানে গ্রাম বাঁচাতে অনেক দাবির মধ্যে জমির কম দাম নিয়ে সমস্যা থেকে সরে এসেছেন অনিচ্ছুকেরা। কিন্তু বন্যার জল নিকাশির ব্যবস্থার দাবি করে অন্তত ১ কিলোমিটার পথে সেতু করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। রেল কর্তৃপক্ষ এবং জেলা প্রশাসন যৌথভাবে গ্রামবাসীদের সঙ্গে সেতুর অপ্রয়োজনীয়তার কথা বলে কয়েক বার বৈঠক করেছেন। কিন্তু গ্রামবাসীরা অনড় তাঁদের দাবিতে। ফলে জমি অধিগ্রহণ হলেও একজনও চেক না নেওয়ায় কাজ শুরু করা হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy