প্রতীকী চিত্র
সেই কোন ভোরে লাইন দিতে আসেন গ্রাহকেরা। সকাল ১০টা নাগাদ খোলে ডাকঘর। তারও কয়েক ঘণ্টা পর হাতে লেখা রসিদ কাটিয়ে পাওয়া যায় টাকা। এটিএম কার্ড তো দূর অস্ত। নিজেরই জমানো টাকা, সংসার খরচের জন্য তুলতে গিয়ে প্রতিদিন হয়রানির শিকার হন হাওড়ার কয়েকটি এলাকার গ্রাহকেরা। কারণ, সারা রাজ্যে ডাকঘরে কোর ব্যাঙ্কিং চালু হয়ে গেলেও ওই সব ডাকঘর ও তার শাখাগুলিতে এখনও সেই ব্যবস্থা চালু করা যায়নি।
হাওড়া গ্রামীণ জেলার বাগনান, মুগকল্যাণ, বাউড়িয়া ফোর্টগ্লস্টার, পাঁচলার ডাকঘরে এখনও এমনই ছবি। লক্ষাধিক গ্রাহক এখনও আটকে আছেন টাকা জমা দেওয়া বা তোলার মান্ধাতার আমলের পদ্ধতিতে। অথচ হাওড়া জেলার প্রায় সর্বত্রই চালু হয়ে গিয়েছে কোর ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা। গ্রাহকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এটিএম কার্ড।
২০১৪ সালের মধ্যেই জেলার মোট ১০২টি ডাকঘরের বেশির ভাগে চালু হয়েছে কোর ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা। তাদের অধীনে থাকা শাখা ডাকঘরের গ্রাহকেরা উন্নত ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পাচ্ছেন। এখনও গ্রামের বাসিন্দারা ডাকঘরেই অ্যাকাউন্ট খোলেন। কিন্তু অন্য যে কোনও ব্যাঙ্কের মতোই উন্নত পরিষেবা পান তাঁরা। চিকিৎসা বা অন্য কোনও প্রয়োজনে বাইরের রাজ্যে গেলেও এ রাজ্যের ডাকঘরের এটিএম ব্যবহার করতে পারেন।
হাওড়া প্রধান ডাকঘর বাদ দিলে বাগনান ডাকঘরে গ্রাহকের সংখ্যা জেলার মধ্যে সর্বাধিক। এই ডাকঘরের অধীনে আছে ৩৩টি শাখা ডাকঘর। ডাকঘর ও শাখা ডাকঘর মিলিয়ে গ্রাহকদের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। মুগকল্যাণের অধীনে আছে ২০টি, পাঁচলার অধীনে আছে ১০টি শাখা ডাকঘর। ফোর্ট গ্লস্টারের অধীনে অবশ্য কোনও শাখা ডাকঘর নেই। সব মিলিয়ে এই বিপুল সংখ্যক গ্রাহকেরা আধুনিক ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কোর ব্যাঙ্কিং চালু না হওয়ার জন্য।
কোথায় সমস্যা?
হাওড়া জেলা ডাকঘর সূত্রের খবর, ২০১৪ সালে জেলার সর্বত্র কোর ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা চালু করতে উদ্যোগী হন কর্তৃপক্ষ। এর জন্য প্রতিটি ডাকঘরে বিশেষ একটি যন্ত্র বসানো হয়। কিন্তু ডাক বিভাগের নিজস্ব প্রশাসনিক জটিলতার ফাঁদে পড়ে বাগনান, মুগকল্যাণ, ফোর্ট গ্লস্টার, পাঁচলায় চালু হয়নি কোর ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা। কোর ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা চালু না হওয়ায় গ্রাহকদের দেওয়া যায়নি এটিএম কার্ড।
এইসব ডাকঘরে সাবেক পদ্ধতিতেই চলছে ব্যাঙ্কিং-এর কাজ। বাগনান ডাকঘরের গ্রাহক মুরালিবাড়ের বাসিন্দা সুমন রায় বলেন, ‘‘আমাদের জেলার অনেক প্রত্যন্ত এলাকার ডাকঘরও কোর ব্যাঙ্কিং-এর আওতায় এসেছে শুনেছি। কিন্তু আমরা সে সুবিধা পাই না। কে জানে কেন?’’
আন্দুলে যে ডাকঘর রয়েছে তার অবস্থাও তথৈবচ। আন্দুল রোডের ধারের ওই ডাকঘরের গ্রাহকের সংখ্যা কয়েক হাজার। এখানেও কোনও এটিএম কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়নি। উপভোক্তাদের অভিযোগ, যখনই এটিএম কার্ডের প্রসঙ্গে তোলা হয়, তখনই এড়িয়ে যান পোস্টমাস্টার।
উপভোক্তা অমিতকুমার ঘোষের অভিযোগ, ‘‘আমার ওই পোস্ট অফিসে কয়েক লক্ষ টাকা ফিক্সড করে রাখা রয়েছে। তিন মাস অন্তত কয়েক হাজার টাকা আনতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।’’ কী রকম ভোগান্তি। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমত, ওই টাকা একেবারে গেলে মেলে না। আর এটিএম কার্ডের কথা তুললেই পোস্টমাস্টার বলেন, ওটা না কি কলকাতা থেকে করাতে হবে।’’
জেলা ডাকঘরের অধিকর্তা অশোক পাল বলেন, ‘‘বিশেষ একটি যন্ত্র বসানো হয়নি বলে বেশ কয়েকটি ডাকঘরে কোর ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা চালু করা যায়নি। আমরা দিল্লিতে আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার চিঠি লিখছি যন্ত্রটি বসানোর ব্যবস্থা করার জন্য। এর বেশি আর কিছু আমাদের করণীয় নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy