প্রতীকী ছবি
জানি না কপালে আরও কত দুর্ভোগ আছে!
স্ত্রীর ক্যানসার। তার মধ্যে আবার কোভিড-১৯ পজ়িটিভ হয়েছিল। শনিবার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো নিভৃতবাসে রয়েছে। কিন্তু ক্যানসারের যন্ত্রণাটা ওর আবার বেড়েছে। ছটফট করছে। কী করব বুঝতে পারছি না। নিভৃতবাস শেষ না হলে তো ওকে নিয়ে কেমোথেরাপিতে যেতে পারব না। খুব অসহায় লাগছে।
ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই ও অসুস্থ হয়ে পড়ে। কলকাতার একটি নার্সিংহোমে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে জানতে পারি, ওর গলব্লাডারে ক্যানসার হয়েছে। চিকিৎসকেরা অবশ্য সুস্থ হওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। ২৯ ফেব্রুয়ারি ওর প্রথম কেমোথেরাপি হয় কলকাতা রাজারহাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। দ্বিতীয় কেমোথেরাপি হয় ৭ মার্চ। ২৩ মার্চ কেমোথেরাপি করাতে গিয়ে দেখা যায়, স্ত্রীর বিলিরুবিন বেড়ে গিয়েছে। সে দিন আর কেমোথেরাপি হয়নি। আমরা ফিরে আসি।
এরপরে কলকাতার অন্য একটি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যাই। ৯ এপ্রিল ও সেখানে ভর্তি হয়। পরের দিন পরীক্ষায় দেখা যায়, ওর কোভিড-১৯ পজ়িটিভ। ও খুব ভেঙে পড়েছিল। স্ত্রী, মেয়ে এবং বৃদ্ধা মাকে নিয়ে আমার সংসার। আমরাও দিশাহারা হয়ে পড়েছিলাম। এ যেন গোদের উপরে বিষফোঁড়া!
আমি একটি বিমা সংস্থার এজেন্ট। কী ভাবে চিকিৎসা হবে, কত খরচ— কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। কোভিড ধরা পরায় ওকে বাঙুর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় সল্টলেকের একটি বেসরকারি করোনা হাসপাতালে। আমাদের তিন জন, কাজের লোক, গাড়ির চালক-সহ মোট ১১
জনকে প্রশাসন উলুবেড়িয়া ইএসআই হাসপাতালে নিভৃতবাসে পাঠায়। ফোনেই স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতাম।
কোভিড ‘নেগেটিভ’ আসায় চার দিন পরে, ১৪ এপ্রিল অবশ্য আমাদের বাড়ি পাঠিয়ে নিভৃতবাসে থাকার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দু’জন লোক ঠিক করে দেওয়া হয় বাজার করে দেওয়ার জন্য। ১৩ এবং ১৪ এপ্রিল দু’দফায় পরীক্ষায় স্ত্রীর কোভিড ‘নেগেটিভ’ আসে। চিকিৎসকেরা ১৭ এপ্রিল ওকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হবে বলে জানানোয় আপত্তি জানিয়েছিলাম। আমাদের নিভৃতবাস শেষ হওয়ার আগে ওকে বাড়ি আনা ঠিক হবে কিনা, এ প্রশ্ন ছিল। কিন্তু শনিবার দুপুরেই ওকে বাড়ি পাঠিয়ে ১৪ দিন নিভৃতবাসে থাকতে বলা হয়।
কোভিডে়র উপসর্গ কিছুই ওর আর নেই। কিন্তু ক্যানসারের যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছে না। ওষুধ খাইয়ে যন্ত্রণা খানিকটা কমানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু কবে যে সব স্বাভাবিক হবে! ওর ক্যানসারের চিকিৎসা তো দ্রুত শুরু করতে হবে।
অনুলিখন: সুব্রত জানা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy