Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
করোনা সতর্কতায় বন্ধ আইসিডিএস
Anganwadi

খাবার পেল না সাড়ে ৫ লক্ষেরও বেশি শিশু

মঙ্গলবার হাওড়া ও হুগলি— দুই জেলার কোনও শিশুই খাবার পেল না অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র (আইসিডিএস) থেকে।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

নুরুল আবসার ও পীযূষ নন্দী
উলুবেড়িয়া ও আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২০ ০৪:১৪
Share: Save:

এক জেলায় উপভোক্তা শিশুর সংখ্যা প্রায় আড়াই লক্ষ।

পাশের জেলায় সংখ্যাটা তিন লক্ষেরও বেশি।

মঙ্গলবার হাওড়া ও হুগলি— দুই জেলার কোনও শিশুই খাবার পেল না অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র (আইসিডিএস) থেকে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে রাজ্যে আইসিডিএসে ছুটি ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উপভোক্তাদের বাড়িতে চাল-আলু পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন। সোমবার ওই নির্দেশের পরে পাশাপাশি দুই জেলায় কেন্দ্রগুলি বন্ধ হয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার কোনও উপভোক্তাই খাবার পায়নি। আজ, বুধবারেও তারা খাবার পাবে কিনা, তার নিশ্চয়তাও মেলেনি।

কেন?

দুই জেলার প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, মেলেনি সরকারি নির্দেশিকা। কেউ কেউ শুকনো খাবার বিলি নিয়ে বিভ্রান্তিতেও রয়েছেন। হাওড়া জেলা নারী ও শিশুকল্যাণ বিভাগের এক কর্তা জানান, সরকারি নির্দেশিকা হাতে না পেলে এ বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়। হুগলির অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) প্রতীপকুমার মণ্ডল বলেন, “অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি বন্ধ থাকবে, এটা রাজ্যস্তরের নীতি। উপভোক্তাদের খাবার পৌঁছনো সংক্রান্ত নির্দেশিকা খুব শীঘ্রই এসে যাবে।”

রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেক উপভোক্তা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও এ দিন খাবার না-মেলায় তাঁরা ক্ষুব্ধ। গোঘাটের কামারপুকুর ১৫১ নম্বর আদিবাসীপাড়া অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের উপভোক্তা এক শিশুর মা টুম্পা কোটাল বলেন, ‘‘বাচ্চাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে কেন্দ্র যেমন বন্ধ রাখা হল, তেমনই খাবারের নিশ্চয়তার দিকটাও খেয়াল রাখা উচিত ছিল। আমাদের তো এখন নতুন করে পুষ্টিকর খাবার জোগাতে সমস্যা হবে।”

অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে ০-৫ বছর পর্যন্ত শিশুদের পড়াশোনা করানো হয়। ওই সব শিশু, তাদের মা এবং গর্ভবতী মহিলাদের রান্না করা পুষ্টিকর খাবার (ডিমের ঝোল-ভাত, সয়াবিন দিয়ে খিচুড়ি, পৌষ্টিক লাড্ডু ইত্যাদি) দেওয়া হয়। হুগলিতে মোট অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে ৬ হাজার ৫৭৩টি। শিশু, গর্ভবতী এবং প্রসূতি মা মিলিয়ে উপভোক্তার সংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষ। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যাই ৩ লক্ষের কিছু বেশি। প্রশাসনের একটি সূত্রের হিসেবে, ব্লকপিছু গড়ে ৬-৮টি চরম অপুষ্ট শিশু আছে। মাঝারি অপুষ্ট শিশু আছে গড়ে ১০-১২টি। সেই সংখ্যা শূন্যতে নামিয়ে আনতে জেলা জুড়ে বিশেষ উদ্যোগ চলছিল। কিন্তু করোনার কোপে সেই প্রয়াস ধাক্কা খাবে বলে মনে করছেন শিশু বিকাশ প্রকল্প আধিকারিকেরা। শিশু এবং মায়েদের ডাক্তারি পরীক্ষার কী হবে, সে প্রশ্নও রয়েছে।

হাওড়ায় মোট অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে ৪ হাজার ৩৪৭টি। উপভোক্তা শিশুর সংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ ৪০ হাজার। গর্ভবতী ও সদ্য মা হয়েছেন, এমন উপভোক্তা আছেন ৬০ হাজার জন। এ দিনও তাঁরাও বঞ্চিত হয়েছেন। কেন্দ্র বন্ধ হয়ে য়াওয়ার কথা অনেকেই জানতেন না। ফলে, সকালে তাঁরা শিশুদের নিয়ে কেন্দ্রগুলিতে আসেন। সঙ্গে আনেন রান্না করা খাবার নিয়ে যাওয়ার পাত্র। কিন্তু ফিরতে হয় খালি হাতে। শুধু কর্মী-সহায়িকাদের থেকে জেনে যান, আপাতত কিছুদিন তাঁদের বাড়িতে ‘শুকনো খাবার’ পৌঁছে দেওয়া হবে। কিন্তু তা কবে থেকে, সেই উত্তর পাননি।

জেলা নারী ও শিশুকল্যাণ বিভাগের এক পদস্থ কর্তা জানান, তাঁদের প্রাথমিক ভাবে জানানো হয়েছে মা এবং শিশুদের চাল, ডাল দিয়ে দিতে হবে। কিন্তু সেটা কী ভাবে দেওয়া হবে (প্রতিদিন না একসঙ্গে কিছুদিনের) সেটা জানানো হয়নি। একসঙ্গে বেশি পরিমাণে দিতে হলে খাদ্যসামগ্রী জোগানে সমস্যাও হতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anganwadi Uluberia Arambag Coronavirus Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE