বর্ধমান থেকে হাওড়া মেন লাইনের জরুরি পরিষেবার জন্য চার বগির লোকাল ট্রেন চলল সোমবার সকালে। পান্ডুয়া স্টেশনের ছবি।
সকালে দোকান-বাজারে ভিড় ছিল। বাসে-অটোতে তেমন যাত্রী না-থাকলেও রাস্তায় লোকজন ছিলেন। কিন্তু সোমবার বিকেল পাঁচটার পরেই বদলে গেল ছবিটা। অলি-গলি থেকে জাতীয় সড়ক— সর্বত্র যেন শ্মশানের স্তব্ধতা। কেউ কোথাও নেই। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বা ওষুধের দোকানও বিলকুল ফাঁকা! ছিল শুধু পুলিশ।
ভাইরাস-ভীতিতে গত কয়েক দিন ধরেই রাস্তায় বাসের সংখ্যা কমছিল। রবিবার জনতা-কার্ফু, তারপরে সোমবার থেকে ‘লকডাউন’— বন্ধই হয়ে গেল যাত্রী পরিষেবার অন্যতম বড় ভরসা বাস। এ দিন বিকেল থেকে রাজ্যে লকডাউন শুরু হলেও সকাল থেকেই বাসের চাকা সে ভাবে গড়ায়নি। অবশ্য যাত্রীও কার্যত ছিল না।
অটো-টোটো-ট্রেকারের দাপটে দীর্ঘদিন ধরেই হুগলিতে বাস-শিল্প সঙ্কটে। দীর্ঘদিন ধরেই বাসমালিক এবং কর্মীরা বিপাকে পড়েছেন। করোনা পরিস্থিতিকে ‘মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘা’ বলে মনে করছেন তাঁরা। হুগলিতে এই মুহূর্তে বেসরকারি বাসের সংখ্যা ৫০০-৬০০। বাসমালিকদের আশঙ্কা, করোনা পরিস্থিতি না-শোধরোলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার উপায় নেই। জেলা বাসমালিক সংগঠন সূত্রের খবর, রবিবার সন্ধ্যায় জেলা আঞ্চলিক পরিবহন দফতরের তরফে ফোন করে জানিয়ে দেওয়া হয়, আগামী শুক্রবার পর্যন্ত রাস্তায় বাস নামানো চলবে না।
সোমবার সকাল পর্যন্ত অনেক বাসকর্মীই সেই খবর জানতেন না। বাস নিয়ে বেরনোর জন্য তাঁরা স্ট্যান্ডে চলে আসেন। বাস বন্ধের খবর জেনে তাঁদের ফিরে জেতে হয়। জেলা বাসমালিক সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি দেবব্রত ভৌমিক কথায়, ‘‘আমাদেরও হাল কর্মীদের মতোই। বাস চললে তবেই তো আমরা টাকা পাই। রোজগার পুরো বন্ধ হয়ে গেল। অন্যরা যখন কেনাকাটা করছেন, আমাদের বাজারের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে।’’
শ্রীরামপুর মহকুমা বাসমালিক সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক রঞ্জন প্রামাণিক বলেন, ‘‘করোনার জেরে এমনিতেই গত দশ দিনে ডাহা লোকসান হচ্ছিল। আর এখন তো যা অবস্থা হল, কহতব্য নয়।’’ এক বাস মালিকের কথায়, ‘‘বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের তো এগিয়ে আসতেই হবে। সবাই ঘরের ভিতরে থাকলে যদি, ভাইরাস দূর হটে তবে সেটাই হোক।’’
জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাস চলে আরামবাগে। এ দিন সকালে সেখানেও আঙুলে গোনা কিছু সরকারি-বেসরকারি দূরপাল্লার বাস চলেছে। বেসরকারি লোকাল বাস চলেনি। ট্রেকারও বিভিন্ন জায়গায় বন্ধ ছিল। একমাত্র টোটো এবং অটোই সকালে সচল রেখেছিল আরামবাগ শহর এবং আশপাশের কিছু এলাকাকে।
হুগলির (গ্রামীণ) পুলিশ তথাগত বসু বলেন, ‘‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্যবাহী গাড়ি ছাড়া, অন্য সব গাড়িকে নাকা করে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভিন্ রাজ্যের খালি ট্রাক বের করে দেওয়া হচ্ছে জেলা থেকে। সোমবার বিকেলে ঠিক নির্দিষ্ট সময়েই শুরু হয়েছে নাকা।’’
সকালের বাগনান বাসস্ট্যান্ড দেখলে কে বলবে, এখানে বাস, অটো ও ছোট গাড়ির থিকথিকে ভিড় থাকে প্রতিদিন! সোমবার সকালে ছিল সেই সব গাড়ি ছিল নামমাত্র। রাস্তাতেও লোকজন কম। একই ছবি অন্যত্রও। তবে, মেদিনীপুরগামী দূরপাল্লার বাসগুলিতে ছিল প্রচণ্ড ভিড়। হাওড়া ও কলকাতা থেকে যাঁরা বাড়ি ফিরেছেন, তাঁরা, ট্রেন বন্ধ থাকায় বাস ধরতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু যাত্রীর তুলনায় বাস ছিল অপ্রতুল। ফলে, বাসের ছাদে বা অনেকে ঝুলেও গিয়েছেন। লকডাউন হওয়ার পর থেকে রাস্তা একেবারে সুনসান। সর্বত্র বন্ধ হয়ে যায় দোকান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy