—প্রতীকী ছবি
সহায়ক মূল্যে ধান কেনা ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে গোঘাটের শ্যামবাটি বায়ুগ্রাম সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির পরিচালন কমিটির বিরুদ্ধে। প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকার হিসাবের গরমিল জানিয়ে স্থানীয় চাষি তথা সমবায়ের সাধারণ সদস্যরাই লিখিত অভিযোগ করেছেন সমবায় দফতরের বিভিন্ন স্তরে।
গোঘাট-১-এর সমবায় পরিদর্শক শুভঙ্কর সরকার বলেন, “সদস্যদের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টা জেলা দফতর দেখছে।” জেলা সমবায় দফতর থেকে জানানো হয়েছে, অভিযোগ খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা সমবায় সমূহের সহকারী নিবন্ধক শোভন দাস বলেন, ‘‘ব্লক সমবায় পরিদর্শককে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
সমবায় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণ সদস্যদের দাবি অনুযায়ী, গত ৯ সেপ্টেম্বর সমবায়ের বার্ষিক সাধারণ সভায় ধান কেনার হিসাব পেশ করার কথা ছিল। কিন্তু পরিচালন কমিটি কোনও হিসাব পেশ করতে না পারায় গোলমালে সভা মুলতুবি হয়ে যায়। পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে যাবতীয় হিসাব পেশ করে সভা ডাকার প্রতিশ্রতি দেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ১৫ দিন পার হলেও হিসাব পেশ হয়নি। এর প্রতিবাদে ১ অক্টোবর সদস্যরা সমবায়ে বিক্ষোভ দেখান ও হিসাবের দাবিতে স্মারকলিপি জমা দেন। কিন্তু তারপরেও সাধারণ সভা ডাকা হয়নি বলে অভিযোগ।
গোঘাটের ওই সমবায়টির সদস্য সংখ্যা প্রায় ৭০০। সদস্য তথা চাষিদের পক্ষে শঙ্কর চক্রবর্তী, চন্দন বন্দোপাধ্যায়, সুকুমার নন্দী, রামপ্রসাদ আলু প্রমুখদের অভিযোগ, “২০১৫-২০১৬ সালে চাষিদের কাছ থেকে সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান কেনার নামে অধিকাংশ ধানটাই স্থানীয় কয়েকটি চালকল থেকে কেনা হয়েছে। তার প্রমাণ আছে আমাদের কাছে। এবং তার কমিশন বাবদ বিপুল টাকা সমবায়ে জমাও পড়েনি। পরিচালন কমিটি কোন হিসাবও দাখিল করতে পারেনি। ম্যানেজার এবং পরিচালন কমিটি যোগসাজশ করে পুরো টাকাটাই নয়ছয় করেছেন।’’
সদস্যরা জানান, ২০১৫-২০১৬ সালে সমবায় ধান কিনেছে ৫৩,৬৮৪.১৩ কুইন্টাল। কুইন্টাল প্রতি সরকারি দাম ১৪১০ টাকা দরে যার দাম ৭কোটি ৫৬ লক্ষ ৯৪ হাজার ৬২৪ টাকা। এই ধানের মধ্যে এলাকার প্রকৃত চাষিদের থেকে ধান কেনা হয়েছে মাত্র ৩০০০ কুইন্টাল। সদস্যদের অভিযোগ, বাকি সমস্ত ধান পরিচালন কমিটি এবং চালকল মালিকরা মিলে ভুয়ো চাষির নামে কিনেছে। ধান কেনার মাস্টাররোল প্রকাশের দাবি করলেও কর্ণপাত করেননি পরিচালন কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ওই ধানের কেনার খরচ ও কমিশন বাবদ ৪৫.৯৬ টাকা প্রতি কুইন্টাল হিসাবে সংশ্লিস্ট এজেন্সির কাছে প্রাপ্য ২৪ লক্ষ ৮১ হাজার ১১০ টাকা সমবায়ের অ্যকাউন্টে দেখানো হয়নি বলেও অভিযোগ।
সমবায় পরিচালন কমিটির সভাপতি নির্মল চক্রবর্তীর বক্তব্য, “পরিচালন কমিটির আমাদের কাউকে কিছু না জানিয়ে চালকলগুলির সঙ্গে রফা করেছেন সম্পাদক এবং ম্যানেজার মিলে। সমিতির চালান নিয়ে মিলগুলির সঙ্গে যে কোটি টাকার মত লেনদেন হয়েছে তানিয়ে কমিটিকে তাঁরা জানাননি।”
অভিযোগ নিয়ে সমবায়ের ম্যানেজার কাজল আলু বলেন, “যা করার সবটাই পরিচালন কমিটির সম্পাদক নারায়ণ ঘোষ করেছেন। পরিচালন কমিটিকে না জানিয়ে তিনি মিল থেকেই বেশি ধানটা কিনেছেন। চালকলগুলির সঙ্গে যদি কাটমানি থেকে থাকে সেটার কোন নথি পাওয়া যাবে না। ওগুলোর মাস্টাররোলও নেই।” মূল অভিযুক্ত পরিচালন কমিটির সম্পাদক নারায়ণ ঘোষের অবশ্য দাবি করেছেন, “হিসাবে গরমিল কিছু নেই। কমিশনের টাকাটা এখনও পুরোপুরি পাইনি। খরচের বিল এখনও পাইনি। তার জন্যই কোন হিসাব দেখাতে পারিনি।’’ মিল থেকে ধান কেনার অভিযোগ অবশ্য স্বীকার করেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy