Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শুভলগ্না খুনে দোষী স্বামী, আজ সাজা

মামলার সরকারি আইনজীবী অরুণকুমার আগরওয়াল বলেন, ‘‘এক বছর চার মাসের মধ্যেই মামলার নিষ্পত্তি হল। অত্যন্ত নৃশংস ভাবে ওই যুবতীকে খুন করেছি‌ল আসামি।

শুভলগ্না চক্রবর্তী

শুভলগ্না চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৪২
Share: Save:

গত বছরের জুলাইতে বাপের বাড়িতে খুন হয়েছিলেন কোন্নগরের শুভলগ্না চক্রবর্তী। সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে যেতে চেয়ে স্ত্রী ডিভোর্সের মামলা করায় তা মানতে পারেনি শুভলগ্নার স্বামী, কোন্নগরের করাতিপাড়ার বাসিন্দা শেখ সুলতা‌ন আলি। সেই খুনের ঘটনায় বুধবার সুলতা‌নকে দোষী সাব্যস্ত করল শ্রীরামপুর আদালত। আজ, বৃহস্পতিবার ওই আদালতের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক মহানন্দ দাস সাজা ঘোষণা করবে‌ন।

মামলার সরকারি আইনজীবী অরুণকুমার আগরওয়াল বলেন, ‘‘এক বছর চার মাসের মধ্যেই মামলার নিষ্পত্তি হল। অত্যন্ত নৃশংস ভাবে ওই যুবতীকে খুন করেছি‌ল আসামি। অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে বিচারক নিশ্চয়ই উপযুক্ত সাজাই দেবেন।’’

শুভলগ্না কোন্নগর অলিম্পিক মাঠের কাছে শ্রীনাথ ঘোষ সরণিতে বাবা তুষার চক্রবর্তী এবং মা শুভ্রাদেবীর সঙ্গে থাকতেন। পুলিশ সূত্রের খবর, কয়েক বছর আগে শুভলগ্নার সঙ্গে সুলতানের রেজিস্ট্রি বিয়ে হয়। যদিও, দু’জনে নিজেদের বাড়িতেই থাকতেন। উচ্চশিক্ষিতা শুভলগ্না ওই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছিলেন। সুলতান‌ অবশ্য শুভলগ্নাকে ছাড়তে চাননি। এ নিয়ে ওই যুবকের সঙ্গে চক্রবর্তী পরিবারের গোলমাল বাধে। থানা-পুলিশ হয়।

পুলিশ জানায়, গত বছরের ১২ জুলাই সন্ধ্যায় বাবা-মায়ের সঙ্গে কাছেই একটি জায়গা থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন শুভলগ্না। তাঁদের বাড়ির কাছে হাইস্কুল সংলগ্ন পার্কের ঝোপে লুকিয়ে ছিল সুলতান। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ বাড়িতে ঢুকতেই শুভলগ্নাদের উপরে সে চড়াও হয়। তুষারবাবুকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় সুলতান। তার পরে সঙ্গে থাকা সেভেন এমএম পিস্তল থেকে শুভলগ্নাকে গুলি করে। শুভলগ্নার পিঠে গুলি লাগে। ওই অবস্থাতেও তিনি প্রতিরোধের চেষ্টা করলে তাঁর মাথায় বন্দুকের বাট দিয়ে আঘাত করে সু‌লতান। আগ্নেয়াস্ত্রের বাট দিয়ে তুষারবাবু-শুভ্রাদেবীরও মাথা ফাটিয়ে দেয় সে। তবে আগ্নেয়াস্ত্রটি ‘লক’ হয়ে যাওয়ায় একটির বেশি গুলি করতে পারেনি। ‘অপারেশন’ সেরে ওই যুবক পালায়। ঘটনাস্থলেই শুভলগ্নার মৃত্যু হয়।

তুষারবাবু উত্তরপাড়া থানায় সুলতানের বিরুদ্ধে এফআইআর করেন। খুন, খুনের চেষ্টা, অস্ত্র আইনের নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোলটি পাওয়া যায়। তুষারবাবু এবং শুভ্রাদেবীর রক্তমাখা পোশাক তদন্তের জন্য নিয়ে যায় পুলিশ। ওই রাতেই সুলতান গ্রেফতার হয়। পালানোর সময় সে হাইস্কুলের পাশে পার্কের ঝোপে আগ্নেয়াস্ত্রটি লুকিয়ে রেখেছিল। তাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে পুলিশ সেটি উদ্ধার করে।

মামলার সরকারি আইনজীবী জা‌নান, নব্বই দিনের মধ্যেই আদালতে চার্জশিট জমা দেন তদন্তকারী পুলিশ অফিসার অনুপকুমার মণ্ডল। ধৃতকে জেলে রেখে শুনানি (কাস্টডি ট্রায়াল) হয়। শুভলগ্নাদের বাড়ির দেওয়ালে রক্তমাখা আঙুলের ছাপ ছিল। ওই ছাপ যে সুলতানেরই, তা প্রমাণিত হয়। আদালতে ১৪ জন সাক্ষ্য দেন। তাঁদের মধ্যে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তুষারবাবু-শুভ্রাদেবী এবং তুষারবাবু এক ভাইও ছিলেন। চিৎকার শুনে তিনি বাইরে এসে সুলতানকে পালাতে দেখেছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE