কলকাতার পর এ বার হাওড়া। পড়ুয়াদের অভাবে সঙ্কটে জেলার ৩৩টি সরকার পোষিত স্কুল। তবে ওই স্কুলগুলি একেবারে বন্ধ করে দেওয়ার আগে শেষ চেষ্টা করতে উদ্যোগী হয়েছে জেলা স্কুল দফতর।
স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, হাওড়াতে শহর ও গ্রামীণ এলাকায় মোট ৩৩টি স্কুলের পড়ুয়া-সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে তলানিতে। কোনও স্কুলে এক জনও পড়ুয়া নেই, কোথাও আবার শিক্ষক নেই। এই অবস্থায় ওই স্কুলগুলির ভবিষ্যৎ কি হবে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজ্য জুড়ে যেখানে বাংলা মাধ্যম স্কুলের দৈন্যদশা, সেখানে এই স্কুলগুলির পড়ুয়া-সঙ্কট কোনও ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু, জেলা স্কুল দফতর এই স্কুলগুলিকে বাঁচাতে কিছুটা ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নিয়েছে।
ওই দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, দফায় দফায় ওই স্কুলগুলির পরিচালন সমিতির সঙ্গে বৈঠক চলছে। প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, এলাকাভিত্তিক চাহিদা অনুযায়ী ওই স্কুলগুলির মাধ্যম পরিবর্তন করা হতে পারে। ওই কর্তার কথায়, ‘‘স্কুলগুলি বাংলা মাধ্যমের। তা হলেও যদি স্থানীয় মানুষের চাহিদা অন্য মাধ্যম হয়, তাহলে তাই করা হবে। হিন্দি, উর্দু এমনকি ইংরেজি মাধ্যমও হতে পারে।’’ তবে কোন স্কুলে কোন মাধ্যম করা হবে, তা পুরোপুরি ভাবে স্কুল শিক্ষা দফতরের উপরে নির্ভর করছে।
তবে এর মধ্যেও প্রশ্ন উঠেছে, এই স্কুলগুলির এই সঙ্কট এক দিনে তৈরি হয়নি। এত দিন স্কুলগুলির এই অবস্থা আটকাতে আদৌ কি কোনও পদক্ষেপ করা হয়েছিল? শিক্ষা মহলের একাংশের অভিযোগ, স্কুল পরিদর্শনে বরাবরই উদাসীনতা দেখায় দফতর। পড়ুয়া-সংখ্যা কমতে থাকার সময়েই যদি শক্ত হাতে হাল ধরা হত, তাহলে এই অবস্থার পরিবর্তন হতে পারত বলে মনে করছেন তাঁরা।
শিক্ষক নেতা স্বপন মণ্ডলেরও অভিযোগ, দফতরের উদাসীনতা ও নীতি নির্ধারণের সমস্যার জন্য এই ভাবে স্কুলগুলিতে পড়ুয়া সংখ্যা কমে যাচ্ছে। কলকাতা শহরও খুব কাছাকাছি হওয়ায় অনেকেই শহরের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি হচ্ছে বলে মত তাঁর।
শিক্ষা শিবিরের একাংশ মনে করে, সিবিএসই এবং আইসিএসই স্কুলের সঙ্গে এমনিতেই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছে সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুল। তাই শুধু কলকাতাতেই নয়, বিভিন্ন জেলাতেও সরকার পোষিত স্কুলগুলি কার্যত ধুঁকছে। অধিকাংশ স্কুলেই পড়ুয়া হাতে গোনা। তাই গোটা রাজ্যে এই সমস্ত স্কুলের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনার সময় এসেছে বলে অভিমত ওই শিক্ষা মহলের। রাজ্য জুড়ে ইতিমধ্যে এক হাজারেরও বেশি স্কুল পড়ুয়ার অভাবে ধুঁকছে বলে জানিয়েছিলেন দফতরের কর্তারা। কিন্তু তার পরে ওই স্কুলগুলিকে বাঁচাতে দফতরের পক্ষ থেকে কোনও সক্রিয় পদক্ষেপ সে ভাবে দেখা যায় না বলে অভিযোগ উঠছে।অভিজ্ঞ মহলের মত, এটা সার্বিক ভাবে দফতরের ব্যর্থতা। কারণ হাওড়া শহরের পড়ুয়াদের মধ্যে কলকাতায় আসার প্রবণতা থাকলেও গ্রামীণ অঞ্চলের চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। সেখানে বিকল্প স্কুলের সংখ্যা খুবই কম। অথচ তাও সরকারি সুযোগসুবিধা পাওয়া স্কুল থেকে মুখ ফেরাচ্ছে অনেকেই। প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে সেখানেই। বিকাশ ভবনের এক কর্তা জানিয়েছেন, এই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy