Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন, জলসঙ্কট, ভাঙল গাছ
Cyclone Amphan

তছনছ হুগলি, অবরুদ্ধ রাস্তা

বুধবার বিকেল পাঁচটার পর থেকে ঝড়ের দাপট বাড়ে।

আমপানের দাপটে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ডানকুনিতে হেলে যাওয়া গাড়ি। ছবি: দীপঙ্কর দে

আমপানের দাপটে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ডানকুনিতে হেলে যাওয়া গাড়ি। ছবি: দীপঙ্কর দে

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২০ ০৬:৩২
Share: Save:

জল নেই। আলো নেই। রাস্তা নেই।

চার জনের প্রাণ তো নিলই, বুধবার রাতের আমপান তছনছ করে দিয়ে গেল গোটা হুগলি জেলাকেও। যার ধাক্কা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কাটিয়ে উঠতে পারেননি সাধারণ মানুষ। দফারফা হয়েছে চাষেরও। সব মিলিয়ে ঘণ্টাচারেকের ঝড় জেলাকে এক বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড করে দিয়েছে।

বুধবার বিকেল পাঁচটার পর থেকে ঝড়ের দাপট বাড়ে। সঙ্গে বৃষ্টি। প্রশাসনের সর্তকবার্তায় রাস্তাঘাট ফাঁকাই হয়ে গিয়েছিল। তবু প্রাণহানি এড়ানো গেল না। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ কাজ সেরে সাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন রিষড়ার এন এস রোডের বাসিন্দা রাজেশ্বর পাল (২২)। সেখানে আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতেন বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার ওই কর্মী। তাঁর আদত বাড়ি বর্ধমানের পালসিটে। লালবাহাদুর শাস্ত্রী রোডে জমা জলে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছিল। সেখান দিয়ে যাওয়ার সময়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। প্রায় একই সময়ে শহরের বি পি দে স্ট্রিটে একই রকম দুর্ঘটনায় মারা যান শ্রীরামপুরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা উত্তম পাল (৩৫)। বাঁশবেড়িয়ার কাঠাঁলপুকুর এলাকায় গাছ চাপা পড়ে মৃত্যু হয় পরশুরাম যাদব (৪৪) নামে এক ব্যক্তির। দেওয়াল চাপা পড়ে মারা যান চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগরের বাসিন্দা সঞ্জীব পোদ্দার (৪০)। ঝড়ে জখম হন ৮ জন। সকলেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

ঝড়ের দাপট বাড়তেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করে বিভিন্ন এলাকা থেকে। বন্ধ হয়ে যায় পাইপলাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহও। মোবাইলের ইন্টারনেট পরিষেবা এবং ফোন সংযোগও ব্যাহত হতে শুরু করায় কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করেন বহু মানুষ। যার জের চলে বৃহস্পতিবারও। প্রশাসন জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত জেলার ১৮টি ব্লকে ক্ষতিগ্রস্ত মাটির বাড়ির সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝড়ে রিষড়ার গঙ্গায় একটি ছোট নৌকা ডুবে যায়। নৌকার দুই আরোহী সাঁতরে পাড়ে ওঠেন। উত্তরপাড়ার মন্দিরবাড়ি ঘাটের কাছে উপকূলরক্ষী বাহিনীর একটি ছোট জাহাজ নিখোঁজ হয়ে যায়। পুলিশ জাহাজের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে। জাহাজে কেউ না থাকায় প্রাণহানি ঘটেনি।

ঝড়ের তাণ্ডব সাধারণ মানুষের কাছে স্পষ্ট হয় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে। ক্ষয়ক্ষতির সম্পূর্ণ রিপোর্ট এখনও মেলেনি। জেলা জুড়ে কত যে গাছ এবং বিদ্যুতের খুঁটি উপড়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। প্রাচীন বট-অশ্বত্থও রেহাই পায়নি। যার জেরে অবরুদ্ধ হয়েছে একের পর এক রাস্তা। শ্রীরামপুরের কাঠগোলা বাসস্টপের কাছে তেমনই এক বটগাছ উপড়ে যাওয়ায় জি টি রোডে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দমকল এসেও সেই গাছ কাটতে ব্যর্থ হয়। শেষে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্য নিয়ে পুরসভাই হাত লাগায়। বৃহস্পতিবার বিকেলের পর রাস্তা পরিষ্কার হয়।

শুধু পান্ডুয়া ব্লক প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, সেখানে এক হাজারেরও বেশি কাঁচাবাড়ি ভেঙেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ত্রিপল দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অভাবে এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দেওয়ায় পান্ডুয়ার কয়েকজন যুবক মোটরভ্যানে জেনারেটর নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সাব-মার্সিবল চালাতে সাহায্য করেন সামান্য অর্থের বিনিময়ে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আজ, শুক্রবার পুরমন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিম হুগলি জেলার অবস্থা খতিয়ে দেখতে আসছেন বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE