Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Cyclone Amphan

টাস্ক ফোর্সের তদন্ত হয়নি বহু পঞ্চায়েতে

বিভিন্ন পঞ্চায়েতের সচিবদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, প্রধানের নেতৃত্বে তদন্তকারী দলের কাজ করার কথা।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

পীষূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২০ ০৪:২৩
Share: Save:

আমপান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় বহু ভুয়ো নাম রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগের তদন্তে প্রতিটি পঞ্চায়েতে গঠিত হয়েছিল চার সদস্যের টাস্ক ফোর্স। তদন্তের রিপোর্ট জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ২৯ জুন। প্রশাসন সূত্রে খবর, আরামবাগ মহকুমায় অধিকাংশ পঞ্চায়েতে এখনও তদন্তই শুরু হয়নি।

কিন্তু তাঁরা তদন্তের বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। অনেক পঞ্চায়েতের সচিবের বক্তব্য, ‘‘তালিকায় থাকা বহু নাম ভুয়ো বলে আশঙ্কা। এই অবস্থায় তদন্তে গিয়ে জনরোষের মুখে পড়তে হতে পারে প্রধানদের। তালিকায় ভুল থাকলেও তার দায়ও তাঁদের উপরে বর্তাবে। সেই কারণে তদন্তে যেতে রাজি নন অনেক পঞ্চায়েতের প্রধান।”

বহু জায়গায় আমপানে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বঞ্চিত করে শাসকদলের নেতা-নেত্রীর ঘনিষ্ঠদের ক্ষতিপূরণের টাকা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে ভুরিভুরি অভিযোগ আসে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে। গত ২৫ জুন রাজ্য সরকার জানায়, অভিযোগের তদন্তে প্রতি পঞ্চায়েতে চার জনের টাস্ক ফোর্স গঠন করা হবে। ঘোষণা মতো মহকুমার প্রতি পঞ্চায়েতেই প্রধান বা তাঁর প্রতিনিধি, পঞ্চায়েত সমিতির এক সদস্য, সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের সচিব এবং এক জন ‘ভিলেজ পুলিশ’কে নিয়ে টাস্ক ফোর্স গড়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ২৯ জুনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। সময়সীমা শেষ হওয়ার দুই দিন পরেও মহকুমার কোনও ব্লকেই তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়েনি বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

কেন যাচ্ছেন না তদন্তে? উত্তরে বিভিন্ন যুক্তি সাজিয়েছেন প্রধানরা।

পুরশুরা ব্লকের পুরশুড়া-১ পঞ্চায়েতের প্রধান সমীর দাসের যুক্তি, “স্বচ্ছতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন যাতে না ওঠে, তা নিশ্চিত করতেই আমি যাচ্ছি না। গেলে ক্ষতিপূরণ নিয়ে রাজনীতি করা বা ইচ্ছামতো তালিকা বানানোর অভিযোগ উঠবে।” আরামবাগের বাতানল পঞ্চায়েতের প্রধান দিলীপ রায় বলেন, “তদন্ত শুরু করিনি। স্বচ্ছতার স্বার্থে ব্লক প্রশাসন তদন্ত করলে ভাল হয়।” গোঘাট ১ ব্লকের ভাদুর পঞ্চায়েতের প্রধান শান্তিনাথ রায়ের বক্তব্য, “এক বার তদন্তকারীদের সঙ্গে গিয়েছিলাম। তারপর চলে আসি। বেশ কিছু নাম বাদ যাবে। পঞ্চায়েত সচিবই তদন্তের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবেন।”

তদন্তের কাজ ঢিমে তালে চলছে বলে স্বীকার করেছেন কয়েকজন বিডিও। বিডিও (গোঘাট ১) সুরশ্রী পাল বলেন, “রিপোর্ট জমা দেওয়ার সময়সীমা বাড়িয়ে ২ জুলাই করা হয়েছে।” বিডিও (গোঘাট ২) অভিজিৎ হালদার জানান, ন’টি পঞ্চায়েতে ব্লক থেকে নোডাল অফিসার নিয়োগ করে তদন্ত চলছে। তদন্তের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন বিডিও (পুরশুড়া) অচিন্ত্য ঘোষ এবং বিডিও (খানাকুল-২) দেবল উপাধ্যায়।

এ দিকে টাস্ক ফোর্স গঠন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। সিপিএমের আরামবাগ এরিয়া কমিটির সম্পাদক পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “চার সদস্যের তিন জনই শাসকদলের লোক। শুধু পঞ্চায়েত সচিব একা সরকারি প্রতিনিধি। তিনি আবার প্রধান এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ মতো চলতে বাধ্য। তাই টাস্ক ফোর্স স্রেফ মানুষকে বোকা বানানোর কৌশল।” বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিমান ঘোষের অভিযোগ, “নিজেরা উদ্যোগী হয়ে কোথাও তদন্ত করছে না প্রশাসন। স্থানীয় মানুষ অভিযোগ তুললে তবেই সামান্য নড়াচড়া হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE