ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে কামারপুকুর জয়রামবাটিতে রাস্তার উপর ভেঙে পড়েছে গাছ।
আবহাওয়া দফতরের সতর্কবাণী ছিল। প্রশাসনেরও দাবি ছিল, আমপান মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত। কিন্তু সন্ধ্যা নাগাদ আমপানের তাণ্ডব দেখাল, প্রকৃতির কাছে মানুষ কতটা অসহায়। রাত পর্যন্ত জেলা প্রশাসন ক্ষয়ক্ষতির হিসেব জানাতে পারেনি। তবে রিষড়ায় গাছ পড়ে তিনজন জখম হয়েছেন বলে জানা গেছে।
দুপুর ১টা থেকেই আমপান আসার আসার প্রহর গোনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। বিকেল ৪টে পর্যন্ত প্রশাসনের কাছে স্বস্তি ছিল। কিন্তু এর পর থেকেই আমপানের দাপট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে।
পরিস্থিতি এমনই হয়, বিদ্যুৎস্তম্ভ উল্টে পড়তে শুরু করে। বিপদ এড়াতে চার মহকুমায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।
বাউড়িয়া নদীর বাঁধে ফাটল।
গঙ্গাপাড়ের ৯টি পুরসভা এবং গ্রামীণ হুগলির তিনটি পুর এলাকা ঝড়ের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। শ্রীরামপুরের ক্ষেত্রসায় বেশ কয়েকটি বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়ে। ঝড়ের দাপটে দুপুরে শ্রীরামপুরের শ্রীরামপুর ওয়ালস হাসপাতালের কাছে, মাহেশে গাছ ভেঙে পড়ে। চন্দননগরে মহকুমাশাসকের দফতরের কাছেও রাস্তার উপরে ভেঙে পড়ে গাছ। রিষড়ায় বাড়ির উপর গাছ পড়ে জখম হয়েছেন তিনজন। তাঁদের শ্রীরামপুর ওয়ালস হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সব থেকে বিড়ম্বনায় পড়ে ভেলোর থেকে আসা প্রায় ৩০০ মানুষদের আশ্রয় দিতে গিয়ে। তাঁরা ভেলোর থেকে ফিরে গাড়ি করে দুর্গাপুরে রওনা দেওয়ার মধ্যেই আমপান শুরু হয়ে যায়। বিপদ এড়াতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শ্রীরামপুর পুরসভার বাসস্ট্যান্ডের একটি বিশ্রামালয়ে প্রাথমিকভাবে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়।
চণ্ডীতলা, জাঙ্গিপাড়া, পোলবা, বলাগড়, ধনেখালির বেশ কিছু এলাকায় কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়েছে। বুধবার সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন শহরে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে প্রচার চালানো হয়। বিভিন্ন জায়গায় কাঁচাবাড়ি এবং বিপজ্জনক বাড়ি থেকে লোকজনকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝড়ে বিভিন্ন রাস্তায় ভাঙা গাছ দ্রুত সরানো হচ্ছে। খানাকুলের রামচন্দ্রপুরে বাড়ির দেওয়ালের একাংশ ভেঙে গুরতর আহত হয়েছেন এক বৃদ্ধা। সুন্দরী ভাঙি নামের ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে খানাকুল গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে খানাকুল-২ পঞ্চায়েত সমিতির তরফে। মহকুমার খানাকুলের আরামবাগ এবং গোঘাটের দুটি ব্লক এলাকায় অন্তত ২৫০ মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। দুপুর ২টো থেকে আরামবাগ শহর-সহ পুরো মহকুমা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্যুতের একটি ট্রান্সফর্মার সহ পোল ভেঙেছে মোট ১২টি।
পোলবা ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়, ত্রাণ শিবিরগুলিতে এলাকার প্রায় ২২০০ মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পান্ডুয়া ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় মোট পাঁচটি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে।
জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, "আমরা জেলার বিভিন্ন প্রান্তের উপর নজর রেখেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও কিছু জানা যায় নি।’’
ছবি তুলেছেন সঞ্জীব ঘোষ, সুব্রত জানা, দীপঙ্কর দে ও কেদারনাথ ঘোষ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy