Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কত ধান বাঁচবে? প্রশ্ন সব মহলেই

বৃষ্টি কম হওয়ায় এ বার আমন চাষে খুব কষ্ট করে বীজতলা বাঁচিয়েছিলেন চাষিরা। অনেককে চড়া দামে সেচের জল কিনতেও হয়েছিল।

জলে ডুবে রয়েছে পাকা ধান। পান্ডুয়ায়।  ছবি: সুশান্ত সরকার

জলে ডুবে রয়েছে পাকা ধান। পান্ডুয়ায়। ছবি: সুশান্ত সরকার

নিজস্ব সংবাদদাতা
উলুবেড়িয়া-চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০১:২৫
Share: Save:

দুই জেলা মিলিয়ে এ বার আমন চাষ হয়েছে ২ লক্ষ ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে। কিন্তু বুলবুলের দাপটে সেই ধানের কতটা বাঁচবে সেটাই এখন প্রশ্ন। দিশাহারা চাষিরা।

বৃষ্টি কম হওয়ায় এ বার আমন চাষে খুব কষ্ট করে বীজতলা বাঁচিয়েছিলেন চাষিরা। অনেককে চড়া দামে সেচের জল কিনতেও হয়েছিল। তাই চাষিরা আশায় ছিলেন, ধান বিক্রি করে সেই বাড়তি খরচের ধাক্কা পুষিয়ে নেবেন তাঁরা। কিন্তু সেই ধান ওঠার মুখেই বুলবুল বিপর্যয়ে চাষির বাড়া ভাতে ছাই পড়েছে। দুই জেলা মিলিয়ে ধান চাষে ক্ষতির পরিমাণ ঠিক কত, তা অবশ্য এখনও জানা যায়নি। শুরু হয়েছে হিসেব-নিকেশ। একই দশা বাঁধাকপি, ফুলকপির মতো শীতের আনাজ চাষেও। ক্ষতির কথা মানছে কৃষি দফতরও।

রাজ্যের অন্যতম ধান উৎপাদক জেলা হুগলি। এ বার এখানে ১ লক্ষ ৮০ হাজার হেক্টর জমি আমন চাষ হয়েছিল। হাওড়ায় চাষ হয়েছে ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে। কৃষি-কর্তারা জানিয়েছেন, ঝড়বৃষ্টিতে হুগলির চারটি মহকুমার অধিকাংশ চাষিরই ধান ও আনাজে ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে আরও একটু সময় লাগবে। জমিতে কতটা জল জমেছে তার উপরেই নির্ভর করবে ক্ষতির পরিমাণ। যে সব জমিতে জল জমেছে, সেখানে ধান বা ধানের ফুলের উদ্ধার হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সব ধান চিটে হয়ে যাবে। নষ্ট হয়ে যাবে ফুলও। তবে জমিতে নিকাশির ব্যবস্থা থাকলে জল বের করে কিছু ধান বাঁচানো সম্ভব।

ধান বাঁচানোর চেষ্টা ইতিমধ্যে শুরু হলেও বেশির ভাগ চাষিই দিশাহারা। কতটা ধান তাঁরা বাঁচাতে পারবেন, তা নিয়ে চাষিরা নিশ্চিত নন। তারকেশ্বরের রামনগরের চাষি অনুপ ঘোষের কথাই ধরা যাক। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘এ বার চাষের শুরুতে আকাশের জল ছিল না। তাই ধানের বীজতলা আগলে রেখে বাঁচিয়ে ছিলাম। ধান ওঠার মুখে বৃষ্টি সব শেষ করে দিল। ঝড়ে পাকা ধান ঝরে গিয়ে মাটিতে মিশে গিয়েছে। কিছু করতে পারলাম না।’’

হাওড়ার অনেক জমিরই ধান পেকে গিয়েছিল। বাকি জমির ধান গাছগুলিতে ফুল এসেছিল। কিন্তু বুলবুলের প্রভাবে ধান গাছগুলি শুয়ে পড়ায় পাকা ধান‌ এবং ধানের ফুল— দুয়েরই ক্ষতির আশঙ্কা দেখছে জেলা কৃষি দফতর। একই সঙ্গে ক্ষতি হয়েছে আনাজেরও। আমতা-১ ও ২ এবং উদয়নারায়ণপুর— এই তিন ব্লকেই মূলত ফুলকপি, বাঁধাকপি, টোম্যাটো, ক্যাপসিকামের মতো আনাজ চাষ হয়। এর মধ্যে আমতা-১ ব্লক এবং উদয়নারায়ণপুরের কিছু জায়গায় দামোদরের চরে আনাজ চাষ হয়। ঝড়বৃষ্টিতে চরের আনাজে ক্ষতি কিছুটা কম বলে কৃষি দফতরের দাবি। ক্ষতি হয়েছে পান চাষেও। আমতা-১, উলুবেড়িয়া-২ এবং বাগনান-১ ব্লকের বেশ কিছু জমিতে পান চাষ হয়। কিন্তু বুলবুলের প্রভাবে বহু পানের বরজ ভেঙে পড়েছে।

এই অবস্থায় হাওড়ায় চাষিদের ক্ষতিপূরণের দাবি উঠতে শুরু করেছে। একই দাবি তুলেছেন আমতার বিধায়ক অসিত মিত্রও। আমতা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকান্ত পাল জানিয়েছেন, চাষিদের ক্ষতিপূরণের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। ক্ষতিপূরণের দাবি করেছেন আমতার বিধায়ক অসিত মিত্রও। জেলাশাসক মুক্তা আর্য জানান, কৃষি দফতর ক্ষতির পরিমাণ মূল্যায়ণ করছে। এতে একটু সময় লাগবে। তারপরে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Bulbul Crops
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE