Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নীল তিমিতে বিপদ, ছাত্রীদের বার্তা পুলিশের

নীল তিমির হাতছানিতে ইতিমধ্যেই দেশে শোরগোল পড়েছে। মারা গিয়েছে এক কিশোর। জখম হয়েছে কয়েক জন। সেই হাতছানিতে জেলার ছাত্রছাত্রীরা যাতে সাড়া না-দেয়, সেই লক্ষ্যে উদ্যোগী হয়েছে হাওড়া (গ্রামীণ) পুলিশ।

আলোচনা: ছাত্রীদের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের কর্তারা। নিজস্ব চিত্র

আলোচনা: ছাত্রীদের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের কর্তারা। নিজস্ব চিত্র

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৬:৫০
Share: Save:

শান্ত ভঙ্গিতেই প্রশ্নটা করেছিলেন হাওড়া (গ্রামীণ) পুলিশের ডিএসপি (ডি অ্যান্ড টি) শান্তি সেন, ‘‘নীল তিমি খেলার কথা তোমরা জানো?’’

হাত তুলল তুলিকা মান্না। এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ওই ছাত্রী বলে, ‘‘জানি। ওই খেলায় ৫০টি ধাপ আছে। হাতে একটি তিমি মাছ আঁকতে হয়। তারপরে ধাপে ধাপে পৌঁছে যেতে হয় আত্মহত্যার দোরগোড়ায়।’’

‘‘খেলা থেকে সরে আসা যায় না?’’ ফের প্রশ্ন শান্তিদেবীর।

তুলিকার উত্তর, ‘‘মাঝপথে সরে এলে মেসেজ করে ভয় দেখানো হয়। বাবা-মাকে খুন করার হুমকিও দেওয়া হয় যে।’’

পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘এ কী সম্ভব? রাশিয়া বা আমেরিকায় বসে এখানকার কাউকে খুন করা সম্ভব নয়। যাইহোক, এত ঝামেলায় যাওয়ার দরকার নেই। সবচেয়ে ভাল খেলাটির সঙ্গে জড়িয়ে না পড়া।’’

সমস্বরে সব ছাত্রী বলে উঠল, তারা খেলাটির কথা জানে। কিন্তু কেউ খেলে না। পুলিশ যখন বারণ করছে, তখন তারা তো খেলবেই না, সবাইকে বারণও করবে— এমন অঙ্গীকারও শোনা গেল ছাত্রীদের মুখে।

নীল তিমির হাতছানিতে ইতিমধ্যেই দেশে শোরগোল পড়েছে। মারা গিয়েছে এক কিশোর। জখম হয়েছে কয়েক জন। সেই হাতছানিতে জেলার ছাত্রছাত্রীরা যাতে সাড়া না-দেয়, সেই লক্ষ্যে উদ্যোগী হয়েছে হাওড়া (গ্রামীণ) পুলিশ। বৃহস্পতিবার উলুবেড়িয়া-১ ব্লক প্রশাসনের অডিটোরিয়ামে জনাপঞ্চাশ ‘কন্যাশ্রী’র ছাত্রীদের নিয়ে হয়ে গেল পুলিশের সেই সচেতনতা শিবির। ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ প্রকল্পে স্কুলে স্কুলে পুলিশের পক্ষ থেকে বাল্যবিবাহ এবং নারী-শিশু পাচার রোধ নিয়ে ছাত্রীদের সচেতন করা হয়। সেই প্রকল্পে নীল তিমি নিয়ে সচেতনতাও যুক্ত করা হয়েছে বলে শান্তিদেবী জানান।

এ দিন হাওড়া জেলায় কন্যাশ্রী পুরস্কার পাওয়া ছাত্রীদের নিয়ে ‘দিশারি’ নামে একটি প্রকল্পও শুরু হয়। বিভিন্ন স্কুলের উঁচু ক্লাসের বাছাই ছাত্রীদের নিয়ে কর্মশালা হবে। তাতে মহিলাদের সুরক্ষা সংক্রান্ত আইন এবং তার প্রয়োগ, বাড়ির কেউ আচমকা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে বা সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাথমিক চিকিৎসা প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার উলুবেড়িয়া ১ ব্লকের চারটি স্কুলের পঞ্চাশ ছাত্রীকে নিয়ে এই প্রকল্পের সূচনা হল। কর্মশালায় ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেন স্বাস্থ্য এবং পুলিশ বিভাগের পদস্থ আধিকারিকেরা। প্রকল্পের উদ্বোধন করতে এসে জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী জানান, পড়াশোনার সঙ্গে মেয়েরা যাতে বিভিন্ন বিষয়ে স্বনির্ভর হয় সেই লক্ষ্য নিয়েই দিশারি চালু হল।

‘কন্যাশ্রী’র দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা আধিকারিক সোমা দাস বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় দিশারিকে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।’’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক পুলক রায়, বিডিও কার্তিকচন্দ্র রায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE