বদল: সংস্কার কাজ শুরু হওয়ার দিনে ত্যাভার্ন (বাঁ দিকে)। কাজ পরিদর্শন করছেন প্রতিনিধি দল। নিজস্ব চিত্র
দু’বছর আগেও যে একটা পোড়ো বাড়ি দাঁড়িয়েছিল, কে বলবে!
যেন কোনও জাদুকাঠির ছোঁয়ায় ভগ্নস্তূপে প্রাণ ফিরেছে। শ্রীরামপুরের ডেনিস শাসনকালে তৈরি ‘ড্যানিশ ত্যাভার্ন’ এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। শোনা যাচ্ছে, খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে চলতি মাসের শেষ দিনে নব কলেবরে ভবনটির উদ্বোধন হবে।
জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল অবশ্য বলেন, ‘‘আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন হবে, এটা ঠিক। তবে মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন, না কি অন্য কেউ, তা এখনও পর্যটন দফতর থেকে চূড়ান্ত করে জানানো হয়নি।’’
১৭৫৫ সালে শ্রীরামপুরে ডেনমার্কের উপনিবেশ গড়ে ওঠে। পরের নব্বই বছর এই শহরে ঘাঁটি ছিল দিনেমারদের। সেই সময় একের পর এক স্থাপত্য গড়ে ওঠে এখানে। তারই একটি এই ‘ত্যাভার্ন’ বা সরাইখানা। ১৫ হাজার বর্গফুটের উপর জায়গা নিয়ে ১৭৮২ সালে তৈরি হয়েছিল দ্বিতল এই সরাইখানা। কালক্রমে বাড়িটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। দেওয়ালে, ছাদে জাঁকিয়ে বসে বট অশ্বত্থের দল। ঝোপঝাড়ে মুখঢাকে চৌহদ্দি।
কয়েক বছর আগে ডেনিসদের অর্থানুকূল্যে শ্রীরামপুরে সে যুগের জীর্ণ ভবন সংস্কার শুরু হয়। সেই প্রকল্পেই ২০১৫ সালের ৬ অক্টোবর ত্যাভার্নের সংস্কারের কাজ আরম্ভ হয় কনজার্ভেশন আর্কিটেক্ট মণীশ চক্রবর্তীও কাজের তত্ত্বাবধানে। আগেকার নকশা অবিকল বজায় রেখে সংস্কার করাটাই ছিল চ্যালেঞ্জ।
সেই কাজ প্রায় শেষ। কাজের দায়িত্বে থাকা ‘ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ডেনমার্ক’-এর কিউরেটর বেনটে উল্ফ, আর্কিটেক্ট কনসালট্যান্ট ফ্লেমিং টোয়েমিং অল্যান্ড ওই কাজ নিয়ে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত। তাঁদের কথায়, সেই সময়ের শ্রীরামপুর ফেরত এসেছে। ত্যাভার্নে গিয়ে দেখা গেল, শেষ মূহূর্তের কাজ করছেন কাঠ, রঙের মিস্ত্রিরা।
ফ্লেমিং, ম্যাসকন গ্রুপের (যে সংস্থাটি কাজ করছে) আশিস মুখোপাধ্যায় তদারকি করছেন। বেনটে জানান, ওই কাজে সব মিলিয়ে প্রায় ৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, সরাইখানার বদলে এখানে কফি হাউজ হবে। খাবার জায়গা থাকবে। থাকার জন্য ছ’টি ঘর থাকছে। কাজ শেষ করে রাজ্য পর্যটন দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হবে। ত্যাভার্নের একপাশে মহকুমাশাসকের আবাস, অন্য পাশে চন্দননগর কমিশনারেটের এসিপি-র আবাস।
ফ্লেমিংয়ের কথায়, ‘‘ত্যাভার্নের ছাদে দাঁড়ালে সামনেই দেখা যাবে গঙ্গা। চাঁদনি রাতের নরম আলোয় সে দিকে তাকিয়ে থাকলে মন ভাল হয়ে যাবেই। পর্যটকেরা আকৃষ্ট হবেন বলেই আশা।’’
স্থানীয় কাউন্সিলর সন্তোষ সিংহের স্বস্তি, ‘‘ত্যাভার্নের সামনে গুমটি সরানো গিয়েছে। তাতে জায়গাটির সৌন্দর্য্য বহুগুণ বেড়েছে। আদালত চত্বরে জীর্ণ আরও একটি ভবন সংস্কারের কাজও প্রায় শেষ।’’
পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আদালত চত্বর থেকে বাসস্ট্যান্ড সরে গিয়েছে নবনির্মিত বাস টার্মিনাসে। গুমটি উঠে গিয়েছে। বইয়ের পাতার শ্রীরামপুরকে মেলানো যাচ্ছে।’’ শহরবাসীও মনে করছেন, ঘিঞ্জি শহরে বুক ভরে অক্সিজেন নেওয়ার মতো জায়গা হয়ে উঠছে এই চৌহদ্দি।
পাশের সেন্ট ওলাভ গির্জার সংস্থাপনের কাজ ইউনোস্কোর সম্মান পেয়েছে। ত্যাভার্নের ক্ষেত্রে কি হবে?
বেনটের উত্তর, ‘‘তা বলতে পারব না। তবে ত্যাভার্নের সংস্কার অনেক বেশি কঠিন ছিল। এত সুন্দর ভাবে সংস্কার হয়েছে, দুর্দান্ত লাগছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy