Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
হাটে এলেন না রাজধানীর ক্রেতা-ব্যবসায়ীরা
Delhi Violence

দিল্লিতে গণহত্যা, মন্দা ডোমজুড়ের ব্যবসায়

শেখ তারিক নামে ডোমজুড়ের এক বস্ত্র প্রস্তুতকারক বলেন, ‘‘দিল্লি থেকে ব্যবসায়ীরা ফোনে জানিয়েছেন, অশান্তির জন‌্য কর্মীরা না-আসায় তাঁরা দোকান খুলতে পারছেন না।’’

দিল্লিতে সংঘর্ষে পুড়ে ছাই সব কিছু। —ফাইল চিত্র

দিল্লিতে সংঘর্ষে পুড়ে ছাই সব কিছু। —ফাইল চিত্র

নুরুল আবসার
ডোমজুড় শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৬:১২
Share: Save:

দিল্লির অশান্তির আঁচ ‌লাগল ডোমজুড়ের রেডিমেড জামাকাপড়ের ব্যবসায়!

প্রতি শুক্রবার ডোমজুড়ের অঙ্কুরহাটিতে বিশাল হাট বসে। হাট থেকে দিল্লির বহু পাইকারি ব্যবসায়ী রেডিমেড জামাকাপড় কিনে নিয়ে যান। কিন্তু দিল্লির অশান্তির জন্য এই শুক্রবার দিল্লি থেকে হাটে ক্রেতা আসেননি বললেই চলে। আগামী সপ্তাহে হাট জমবে, এমন আশা করছেন না এখানকার বিক্রেতারা। সামনেই ‘হোলি’। এই মরসুমে ডোমজুড়ের জামাকাপড় প্রস্তুতকারীদের কাছে বড় ‘বাজার’ হল দিল্লি এবং উত্তরপ্রদেশ। ফলে, সেই বাজার কতটা জমবে তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন তাঁরা।

শেখ তারিক নামে ডোমজুড়ের এক বস্ত্র প্রস্তুতকারক বলেন, ‘‘দিল্লি থেকে ব্যবসায়ীরা ফোনে জানিয়েছেন, অশান্তির জন‌্য কর্মীরা না-আসায় তাঁরা দোকান খুলতে পারছেন না। আগে নেওয়া জামাকাপড়ও বিক্রি হয়নি। তাই এই শুক্রবার তাঁরা আসবেন না। পরিস্থিতি শান্ত হলে আসবেন। হোলির আগে আর বাজার সে ভাবে উঠবে না বলেই মনে হচ্ছে।’’

হাটে দিল্লি থেকে যে সব পাইকারি ব্যবসায়ী আসেন, তাঁদের দোকান গাঁধীনগরে। সেখান থেকে মাত্র তিন-চার কিলোমিটারের মধ্যেই পড়ে জাফরাবাদ, মৌজপুর, মোস্তাফাবাদ। এইসব এলাকাতেই মূলত অশান্তি হয়েছে। গাঁধীনগরে কোনও অশান্তি না-হলেও এখানকার দোকানের কর্মীদের অনেকে ‘উপদ্রুত’ এলাকা থেকে আসেন। গাঁধীনগরের আশপাশে প্রতিদিন মেলা বসে। মেলায় বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে রেডিমেড জামাকাপড় কিনে ডালায় করে বিক্রি করেন হকারেরা। হকারদেরও একটা বড় অংশ আসেন জাফরাবাদ, মৌজপুর, মোস্তাফাবাদ থেকে।

শেখ দাইয়ান নামে ডোমজুড়ের এক জামাকাপড় প্রস্তুতকারী বলেন, ‘‘গাঁধীনগরের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, যাঁরা ডালায় নিয়ে জমাকাপড় বিক্রি করেন, অশান্তির জন্য তাঁরাও বাড়ি থেকে বেরোতে পারছেন না। সব মিলিয়ে অবস্থা খারাপ।’’

ডোমজুড়ের অঙ্কুরহাটি, কোলড়া, বেগড়ি, বাঁকড়া প্রভৃতি এলাকায় ঘরে ঘরে তৈরি হয় রেডিমেড জামাকাপড়। শোনা যায় সেলাই যন্ত্রের শব্দ। হাজার হাজার মানুষের রুটিরুজি এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এখানকার ব্যবসায়ী এবং কারিগরেরা জামাকাপড় নিয়ে হাওড়ার মঙ্গলাহাট এবং মেটিয়াবুরুজ হাটেও বিক্রি করেন। বছর পাঁচেক হল অঙ্কুরহাটিতে হাট বসছে। এই হাটের কেনাকাটার অনেকটাই নির্ভর করে দিল্লির উপরে।

এক জামাকাপড় প্রস্তুতকারী জানান, প্রথমে নোটবন্দি, পরে জিএসটি-র ধাক্কায় দিল্লির সঙ্গে তাঁদের ব্যবসা এমনিতেই অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। তার উপরে মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘায়ের মতো এ বার দেখা দিল দিল্লির অশান্তি। তা-ও আবার হোলির মরসুমে। আর এক জামাকাপড় প্রস্তুতকারী জানান, এই সময়ে তাঁরা বাড়তি লাভের আশা করেন। এ বারে সব মাটি হল।

তবে, ব্যবসায়িক ক্ষতির চেয়েও ডোমজুড়ের জামাকাপড় প্রস্তুতকারীদের বেশি চিন্তা এই অশান্তি নিয়ে। তাঁরা বেশিরভাগই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। দিল্লির ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগই হিন্দু। ব্যবসা সূত্রেই উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। সেই সম্পর্কে যাতে কোনও ভাবেই ফাটল না ধরে, প্রাণপণে সেই চেষ্টাই চালাচ্ছেন সকলে।

তারিক বলেন, ‘‘আমরা ওইসব এলাকায় বহুবার গিয়েছি। ব্যবসায়ীরা আমাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান। ঝামেলা শুরুর পর থেকেই আমরা চিন্তিত। রোজ ফোনে কথা হয়। ওঁদের বলেছি ব্যবসার কথা পরে, আগে নিজেদের নিরাপদে রাখুন। ওঁরা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। কিছুটা আশ্বস্ত লাগছে।’’ একই বক্তব্য শেখ দাইয়ানেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Delhi Violence CAA Protest Domjur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE