Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Dengue

সরকারি রিপোর্টে ডেঙ্গি, মানতে নারাজ পুরপ্রধান

ঠিক এক বছর আগে শ্রীরামপুরের কয়েক হাজার মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। মৃত্যু হয়েছিল অন্তত চার জনের। তখন কিন্তু তথ্য গোপন না করে স্বাস্থ্য দফতর শ্রীরামপুরের ডেঙ্গিকে ‘মহামারি’ ঘোষণা করেছিল।

অযত্নে: আরামবাগ পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। নিজস্ব চিত্র

অযত্নে: আরামবাগ পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। নিজস্ব চিত্র

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৩২
Share: Save:

এলাকায় ১৫ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে বলে মানছেন আরামবাগের স্বাস্থ্যকর্তারাই। কিন্তু পুরপ্রধানের পাল্টা দাবি, এলাকার কারও ডেঙ্গি হয়নি! পুরপ্রধানের এই বক্তব্যে স্বাস্থ্যকর্তারা অবাক। ক্ষুব্ধ শহরের বহু বাসিন্দারাও। তাঁরা বলছেন, সমস্যা মেনে নিলে ক্ষতি কী? বরং তাতে দ্রুত প্রতিকারের ব্যবস্থা হবে।

অথচ ঠিক এক বছর আগে শ্রীরামপুরের কয়েক হাজার মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। মৃত্যু হয়েছিল অন্তত চার জনের। তখন কিন্তু তথ্য গোপন না করে স্বাস্থ্য দফতর শ্রীরামপুরের ডেঙ্গিকে ‘মহামারি’ ঘোষণা করেছিল। তার ফল মিলেছিল হাতেনাতে। ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ বার আক্রান্তের সংখ্যা হাতেগোনা। মৃত্যু নেই এখনও। মশা নিধন নিয়েও পুরসভার বিরুদ্ধে তেমন অভিযোগ নেই।

কিন্তু শ্রীরামপুর থেকে শিক্ষা নেয়নি আরামবাগ। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, কেবল স্থানীয় বাসিন্দারা নন, আরামবাগ পুরসভার কাউন্সিলারদের একাংশও পুরসভার বিরুদ্ধে ডেঙ্গি প্রতিরোধে গয়ংগচ্ছ মনোভাবের অভিযোগ তুলেছেন।

এ বছর ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে বৈদ্যবাটিতে মৃত্যু হয়েছে একজনের। গোটা জেলায় আক্রান্ত অনেকে। ডেঙ্গির হাত থেকে বাঁচতে পুরসভাগুলিকে কোমর বেঁধে নামার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু আরামবাগ পুরসভায় কয়েকটি বৈঠক ছাড়া ডেঙ্গি মোকাবিলায় কিছুই হচ্ছে না বলে অভিযোগ।

মহকুমা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন প্রতিদিন গড়ে ৬ থেকে ৮ জন রোগী জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক সিদ্ধার্থ দত্ত বলেন, “আরামবাগের পরিস্থিতি নিয়ে আমরা চিন্তিত। ইতিমধ্যেই আরামবাগ পুর এলাকার ১৫ জনের রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়েছে।”

যদিও সরকারি সেই তথ্য মানতে নারাজ পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী। তাঁর দাবি, “আমাদের সরকারকে বিব্রত করার জন্য মিথ্যা রিপোর্ট করা হয়েছে। আরামবাগ পুর এলাকায় কোনও ডেঙ্গি নেই।” তিনি বলেন, “আমরা সজাগ রয়েছি। কেরোসিন তেল ছড়ানো হচ্ছে। ডেঙ্গির লার্ভা মারার ওষুধ ছড়াচ্ছি প্রতিটি ওয়ার্ডে।” মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক অবশ্য জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই ডেঙ্গি তাঁরা রিপোর্ট তৈরি করেছেন।

পুরপ্রধানের দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আরামবাগ পুর এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দা। পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তথা আরামবাগ গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ সাজিদুল ইসলাম অভিযোগ, “আমাদের এলাকায় একদিনের জন্যও কোনও ওষুধ কিংবা কেরোসিন তেল স্প্রে হয়নি। সম্প্রতি হয়ে যাওয়া বৃষ্টির জল এখনও জমে রয়েছে। সেখানে মশার লার্ভা থিকথিক করছে।” ওই ওয়ার্ডেরই হাসপাতাল রোড পাড়ার বাসিন্দা চিন্ময় ঘোষের দাবি, “কোথাও কেরোসিন বা ওষুধ স্প্রে হয়নি। বিক্ষিপ্তভাবে কিছু চুন ছড়ানো হয়েছে মাত্র।” ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শঙ্কর হাজরার ক্ষোভ, ‘‘থানা ও মহকুমাশাসকের অফিসের চত্বর ছাড়া কোথাও মশা মারার তেল ছড়াতে দেখিনি।” ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বটতলা পাড়ার শ্রীকান্ত মণ্ডলেরঅভিযোগ, নিকাশি নালাগুলি সাফাই হচ্ছে না।

আরামবাগ পুরসভার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কাউন্সিলর জানান, মহকুমা প্রশাসন থেকে ওয়ার্ড পিছু ৫ লিটার কেরোসিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই কাউন্সিলরদের কটাক্ষ, ওইটুকু কেরোসিন তো যে কোনও একটি পাড়ায় ছড়ালেই শেষ হয়ে যাবে।

হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, “আরামবাগ পুরসভার মেডিক্যাল অফিসার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue government report
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE