Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
প্রধানদের তুষ্ট রাখার চেষ্টা, বলছে বিরোধীরা

ঠিকাদারের বিল কে মেটাবে? নয়া নির্দেশ

এক-একটি পঞ্চায়েতের হাতে এখন চতুর্দশ অর্থ কমিশন এবং বিশ্বব্যাঙ্কের আইএসজিপি প্রকল্প মিলিয়ে বছরে প্রায় এক কোটি টাকা করে আসে। সেই টাকায় ঠিকা সংস্থাগুলিকে দিয়ে নানা উন্নয়নমূলক কাজ হয়।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৩৭
Share: Save:

দিন পনেরোর মধ্যে বদলে গেল নির্দেশ।

চলতি মাসের গোড়ায় রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর ২৫ হাজার টাকার বেশি বিল মেটানোর ক্ষমতা প্রধানদের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে জেলাশাসককে দিয়েছিল। তা নিয়ে বিভিন্ন পঞ্চায়েতে হইচই শুরু হওয়ায় শুক্রবার ফের বদলে গেল নির্দেশ। নতুন নির্দেশে জানানো হয়েছে, প্রধানদের বিল মেটানোর ক্ষমতা পঁচিশ হাজার টাকা পর্যন্ত রাখা হলেও এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিলের অনুমোদন দেবেন বিডিও। দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিলের অনুমোদন দেবেন মহকুমাশাসক। দেড় লক্ষ টাকার বেশি বিল হলে তা অনুমোদন করবেন জেলাশাসক।

পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এত অল্প সময়ের মধ্যে এই নির্দেশিকা বদলকে আসলে প্রধানদের তুষ্ট রাখার চেষ্টা বলে মনে করছে বিরোধীরা। তাদের মতে, এখন রাজ্যের বেশির ভাগ পঞ্চায়েতেই ক্ষমতায় শাসকদল। তাই বিডিও-র হাতে এক লক্ষ টাকার বিল মেটানোর ক্ষমতা দিয়ে পরোক্ষ ভাবে প্রধানদের হাতেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হল। বিডিওদের সঙ্গে প্রধানদের সুসম্পর্ক থাকে। তার ভিত্তিতে বিডিও-র উপরে প্রভাব খাটিয়ে প্রধানেরা সহজেই ঠিকাদারদের বিলের টাকা পাইয়ে দিতে পারবেন। পঞ্চায়েতে ঠিকাদাররা যে বিল দেন, তার অধিকাংশই এক লক্ষ টাকার মধ্যে থাকে।

এ কথা মানতে চাননি পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কয়েকদিন পর্যালোচনা করে দেখলাম, জেলাশাসকের থেকে ঠিকাদারদের বিলের টাকা নিতে গেলে সময় লাগবে। তাতে কাজেরও ক্ষতি হবে। সেই কারণে নির্দেশ বদল।’’ পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের কর্তাদের দাবি, মূলত বিশ্বব্যাঙ্কের পরামর্শ মেনেই আগের নির্দেশিকাটির কিছুটা বদল করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন স্তরে কাজে সুষ্ঠু ভাবে নজরদারি সম্ভব হবে।

এক-একটি পঞ্চায়েতের হাতে এখন চতুর্দশ অর্থ কমিশন এবং বিশ্বব্যাঙ্কের আইএসজিপি প্রকল্প মিলিয়ে বছরে প্রায় এক কোটি টাকা করে আসে। সেই টাকায় ঠিকা সংস্থাগুলিকে দিয়ে নানা উন্নয়নমূলক কাজ হয়। যে কোনও অঙ্কের বিলের টাকা প্রধান, নির্বাহী সহকারী এবং সচিব সই করে ঠিকাদারদের সরাসরি মেটাতে পারবেন, দীর্ঘদিন ধরে এটাই ছিল নিয়ম।

দিন পনেরো আগে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর জানিয়েছিল, ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিল সরাসরি ঠিকা সংস্থাগুলিকে মেটাতে পারবে পঞ্চায়েত। তার বেশি টাকার বিল পাঠাতে হবে জেলাশাসকের কাছে। জেলাশাসক সেই বিল পাঠাবেন বিডিও-র কাছে। বিডিও চার জনের একটি কমিটি গড়বেন। সেই কমিটি বিল খতিয়ে দেখে টাকা দেওয়ার সুপারিশ করলে তবেই জেলাশাসক সেই বিল মেটাবেন। সেই নিয়ম মানা হলে পঞ্চায়েতের বিভিন্ন কাজে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ অনেক কম উঠত বলে মনে করছে বিরোধীরা।

কিন্তু প্রথম নির্দেশিকাটি জারি হওয়ার পরেই পঞ্চায়েতগুলির তরফে হইচই শুরু হয়। অনেক পঞ্চায়েত প্রধানের যুক্তি ছিল, ২৫ হাজার টাকার উপরে সব বিল যদি জেলাশাসকের কাছে পাঠাতে হয়, তা হলে টাকা পেতে দেরি হবে। উন্নয়নের কাজ থমকে যাবে। নতুন নির্দেশিকায় তাঁরা স্বস্তিতে। হাওড়া জেলায় ইতিমধ্যেই নতুন নির্দেশিকা এসে গিয়েছে। জেলার ১৫৭টি পঞ্চায়েতের অধিকাংশই তৃণমূলের দখলে আছে। অনেক প্রধানই জানিয়েছেন, নতুন নির্দেশে কাজে সুবিধা হবে।

বিজেপি-র গ্রামীণ জেলা সভাপতি অনুপম মল্লিকের অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রের টাকায় তৃণমূলের পঞ্চায়েতগুলিতে পুকুর চুরি হচ্ছে। ঠিকাদারদের দিয়ে ভুয়ো বিল তৈরি করে খরচ দেখানোর চেষ্টা চলছে। রকমারি নির্দেশিকা জারি করে মানুষকে চমক দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে তৃণমূলের দুর্নীতির কথা সবাই জানেন। ভোটের আগে মানুষের চোখে ধুলো দিতে এবং দলীয় প্রধানদের তুষ্ট রাখতে এই নতুন নির্দেশ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE