Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
বিভ্রান্তি ছড়াতে ডাকাতির গল্প, বলছে পুলিশ

পণ না-মেলায় অন্তঃসত্ত্বা খুন, ধৃত স্বামী-শাশুড়ি

শোরগোল শুরু হয়েছিল ‘ডাকাতি’ করতে আসা দুষ্কৃতীদের হাতে এক অন্তঃসত্ত্বা খুনের ‘ঘটনা’কে ঘিরে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বদলে গেল ‘কাহিনি’। পণের দাবিতে বধূ খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হল স্বামী-শাশুড়ি।

ঘটনার পর সুপর্ণার স্বামী সুকান্ত (বাঁ দিকে)। মৃতা সুপর্ণা (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

ঘটনার পর সুপর্ণার স্বামী সুকান্ত (বাঁ দিকে)। মৃতা সুপর্ণা (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

সুশান্ত সরকার
পান্ডুয়া শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৮ ০০:০১
Share: Save:

শোরগোল শুরু হয়েছিল ‘ডাকাতি’ করতে আসা দুষ্কৃতীদের হাতে এক অন্তঃসত্ত্বা খুনের ‘ঘটনা’কে ঘিরে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বদলে গেল ‘কাহিনি’। পণের দাবিতে বধূ খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হল স্বামী-শাশুড়ি।

শনিবার বেলা সাড়ে ১২টা। পান্ডুয়ার শিখিরা-চাপতা পঞ্চায়েতের তাবা গ্রামের প্রৌঢ়া রেণুকা বণিক বাড়িতে ঢুকেই চিৎকার শুরু করে দিয়েছিল। সঙ্গে কান্নাও, ‘‘এ সব কে করল? আমাদের সব গেল!’’ ভিড় করলেন পড়শিরা। দেখলেন, রেণুকার ঘর লণ্ডভণ্ড। আলমারি খোলা। বিছানায় পড়ে রয়েছেন রেণুকার পুত্রবধূ, আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা সুপর্ণা বণিকের (২৪) রক্তাক্ত মৃতদেহ। ছড়াল ডাকাতির গল্প। রেণুকা পড়শিদের জানাল, দোকানে যাওয়ার সময় বাড়ির পাশের রাস্তায় মোটরবাইকে দু’জনকে সে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ি ফেরে সুপর্ণার স্বামী সুকান্ত। আসে পুলিশও। স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে সুকান্তের আক্ষেপ, ‘‘দুষ্কৃতীরা ওড়নার ফাঁসে স্ত্রীকে খুন করেছে। সোনার হার, নগদ টাকা নিয়ে গিয়েছে।’’

কিন্তু শেষরক্ষা হল না। কয়েক ঘণ্টা পরেই দাবিমতো পণ না-পাওয়ায় সুপর্ণাকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হল সুকান্ত এবং তার মাকে। যে গয়না-টাকা লুটের কথা সুকান্ত বলছিল, তার ঘর থেকেই সেগুলি উদ্ধার করল পুলিশ।

জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সুকেশ জৈনের দাবি, জেরায় দু’জনেই অপরাধ কবুল করেছে। পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে ডাকাতির গল্প ফেঁদেছিল ধৃত মা-ছেলে। আজ, রবিবার তাদের আদালতে হাজির করানো হবে। তদন্তকারীদের ধারণা, শ্বাসরোধ করে এবং মাথায় ভারী কিছুর আঘাতে সুপর্ণাকে মেরে ফেলা হয়।

আরও পড়ুন: অর্চনা খুনে নয়া মোড়: উদ্ধার আরও ১ বস্তাবন্দি দেহ, তিনিই কি সেই ঝাড়খণ্ডের প্রেমিক?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, স্থানীয় দশদরুণ গ্রামের তরুণী সুপর্ণার সঙ্গে গাড়িচালক সুকান্তের বিয়ে হয় বছর দশেক আগে। দম্পতির আট বছরের একটি ছেলে আছে। এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ সুপর্ণা স্থানীয় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে গর্ভবতীদের জন্য বরাদ্দ সেদ্ধ ডিম নিয়ে আসেন। তার কিছুক্ষণ পরেই ওই ঘটনা। রেণুকা পড়শিদের কাছে দাবি করেছিল, বেলা ১২টা নাগাদ সে পাড়ার দোকানে গিয়েছিল। আধ ঘণ্টা পরে ফিরে দেখে, ওই কাণ্ড। স্ত্রীকে পান্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে সুকান্তকে কাঁদতে দেখেও কারও কোনও সন্দেহ হয়নি।

তা হলে পুলিশ কিসের ভিত্তিতে রহস্য ভেদ করল?

তদন্তকারীদের দাবি, তাঁরাও প্রথমে ডাকাতির ঘটনা বলেই ভেবেছিলেন। কিন্তু পরে চিত্রনাট্য বদলাতে থাকে। হাসপাতাল থেকে সুকান্ত সরে পড়ে। পান্ডুয়া স্টেশনের কাছ থেকে তাকে ধরা হয়। প্রথম থেকে সে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলায় সন্দেহ জোরালো হয়। তদন্তকারীরা লক্ষ্য করেন, সুকান্তর ডান হাতের আঙুলে ব্যান্ডেজ।
সে জানায়, মোটরবাইক থেকে পড়ে কেটে গিয়েছে। পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, যে সময় খুনের ঘটনাটি ঘটে, তার পরেই সুকান্ত হাসপাতালে এসে ব্যান্ডেজ করায়।
তা ছাড়া রেণুকা আধ ঘণ্টার জন্য বাইরে থাকার সুযোগেই দুষ্কৃতীরা ‘অপারেশন’ চালিয়েছে, এই বিষয়তেও পুলিশের খটকা লাগে। ডিএসপি (ক্রাইম) প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, পান্ডুয়া থানার ওসি সুমন রায়চৌধুরী সুকান্ত এবং তার মা-কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। জেরায় তারা দোষ স্বীকার করে বলে পুলিশের দাবি।

নিহতের মা মিনু সরকারের অভিযোগ, ‘‘বিয়ের সময় যৌতুক দিয়েছি। কিন্তু বিয়ের পরেও সুকান্তরা টাকা চাইত। একমাস আগে সোনার চেন দিয়েছি। দিন কয়েক আগে দশ হাজার টাকা দিয়েছি। আবার টাকা চেয়েছিল। তা-ও দেব বলেছিলাম। কিন্ত ওরা মেয়েকে মেরে ফেলল।’’ সুপর্ণার বাপের বাড়ির তরফে থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Murder Pregnant Arrest Dowry
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE